—প্রতীকী ছবি।
জঙ্গলমহলের ভোটে এ বার অন্য মাত্রা এনেছে কুড়মিদের আন্দোলন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পতাকার মাঝেই জেগে উঠেছে হলুদ ‘জয় গরাম’ পতাকা। এমনকি, ভোটের দিনেও গরাম থানে গড় করে শপথ নিয়েই ভোট দিলেন কুড়মিরা। সামনে এল পদ্মের সঙ্গে সমঝোতার ছবিও।
ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর— জঙ্গলমহলের ৩ জেলায় কিছু এলাকায় শনিবার ভোটে কুড়মিদের দাপট দেখা যায়। বহু জায়গায় ছিল না তৃণমূল বুথ ক্যাম্প, এজেন্টও। শনিবার সকাল। নয়াগ্রামের চাঁদাবিলা পঞ্চায়েতের নারদা বুথে কুড়মি প্রার্থী দেবাশিস মাহাতো অভিযোগের পরে ব্যালট বাক্স নতুন করে সিল করে ভোট শুরু হয়। ভোট দিতে এসে বিজেপির মণ্ডল সহ-সভাপতি তথা অঞ্চল প্রমুখ প্রভাত মাহাতো বলেন, ‘‘এখানে অন্য ব্যাপার আছে। বিজেপি প্রার্থী থাকলেও ভোট সমাজেরই হবে।’’ নারদা বুথের তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল মাহাতোর স্বীকারোক্তি, ‘‘সমাজের দাপটে বুথ ক্যাম্পও করতে পারিনি।’’
এই এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির কুড়মি প্রার্থী প্রণব মাহাতো কাছের একাধিক গ্রামে বাইকে চেপে ছুটে বেড়িয়ে কুড়মি লোকজনকে বুথমুখো করেন। ওই আসনে তৃণমূল প্রার্থী নিরঙ্কুশ মাহাতোর অভিযোগ, ‘‘ওরা গরাম থানে ঠাকুর রেখে শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছে জোর করে।’’ প্রণবের পাল্টা, ‘‘মানুষ গরাম ঠাকুরকে ভালবাসে।’’ নয়াগ্রাম ব্লকের পুখুরিয়া, রাইশোল-সহ একাধিক জায়গাতেই গরাম থানে প্রণাম করে শপথ নিয়ে ভোট দিয়েছেন কুড়মিরা।
তুঙ্গাধুয়া গ্রামে ভোটারদের পান বিলি করছিল তৃণমূল। কুড়মি সমাজের লোকজন জানালেন, এখানে মিলিজুলি সরকার হবে। পান, গুড়, বাতাসা দিয়েও লাভ হবে না। পুখুরিয়া বুথে তৃণমূল, বিজেপি, কুড়মি সমাজের এজেন্ট ছিলেন। বিজেপির এজেন্ট বলেন, ‘‘এখান সমাজ ছাড়া কিছু হবে না।’’ তৃণমূলের বুথ এজেন্ট স্বর্ণ পইড়ার মুখ শুকনো। গোখুরপাল বুথের বাইরে তৃণমূল প্রার্থী ডুগু হেমব্রম ভোটারদের টাকা দেওয়ার সময় আবার হাতেনাতে ধরে ফেলেন কুড়মিরা। ডুগু মেনেও নেন, ভোটারদের ২০ টাকা করে দেন। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূল সভাপতি দুলাল মুর্মুরও নালিশ, ‘‘কুড়মিরা গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করছেন। তবে অনেকে আমাদের সঙ্গেও আছেন।’’ ঝাড়গ্রাম লাগোয়া রাধানগর পঞ্চায়েতের মাটিহানা বুথও ঘিরে রেখেছিল ‘জয় গরাম’ বাহিনী। এখানেও তৃণমূল বুথ এজেন্ট দিতে পারেনি। পুরুলিয়ার কুড়মি এলাকাতেও কোণঠাসা ছিল তৃণমূল। পুরুলিয়া-২ ব্লকের ডুমুরডি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে শুধু দুই নির্দল প্রার্থীর এজেন্ট ছিলেন। একই ছবি ছিল বান্দোয়ান, সুপুডি, কুচিয়া পঞ্চায়েতের একাধিক ভোটকেন্দ্রে।
তথ্য: কিংশুক গুপ্ত, রঞ্জন পাল ও প্রশান্ত পাল