রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
দাঁড়ি পড়ছে না দ্বৈরথে।
কাঁথি শহরের যে মাঠে গত শনিবার সভা করে গিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই প্রভাত কুমার কলেজের মাঠেই আগামী ২১ ডিসেম্বর সভা করতে চায় বিজেপি। প্রধান বক্তা প্রত্যাশিত ভাবেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে নিজের পাড়ায়, নিজের পুরনো কলেজের মাঠে শুভেন্দুর ওই সভায় প্রাথমিক ভাবে অনুমতি দেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ। ‘অভিষেক ফ্যান ক্লাব’-এর ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্যই ওই দিন মাঠ দেওয়া যাবে না— জানিয়ে দিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সভার সিদ্ধান্তে অনড় বিজেপি পাল্টা আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে।
অভিষেকের কাঁথির সভার দিনই তৃণমূল সাংসদের নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে সভা ছিল শুভেন্দুর। সেখানেও পুলিশ প্রাথমিক অনুমতি দেয়নি। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে অন্য মাঠে সভা হয়েছিল। সেই সভায় যাওয়ার পথে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা হয়, পরে আবার তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ হয়েছে বলে গেরুয়া শিবিরের দাবি। তার প্রতিবাদে এ বার হাজরা মোড়ে সভা করার ডাকও দিয়েছেন শুভেন্দু। ‘মিথ্যা মামলা’র অভিযোগে ফের হাই কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার পাশাপাশি কুলপি থানা ও সুন্দরবন পুলিশ জেলায় এসপি দফতর অভিযানের কথাও বলেছেন বিরোধী দলনেতা।
কাঁথির অধিকারী বাড়ি ‘শান্তিকুঞ্জ’ থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে সভা করেছিলেন অভিষেক। কাঁথির সভা থেকে শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে অভিযেক বলেছিলেন, ‘‘১৫ দিন সময় দিয়ে গেলাম! এই কলেজের মাঠে তুমি তোমার খাতা নিয়ে এসো। আমি আমার খাতা নিয়ে আসব!’’ রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন বিরোধী দলনেতা। তাই ১৮ দিনের মাথায় একই মাঠে সভা করার সিদ্ধান্ত। এই প্রসঙ্গে অমিতাভ বচ্চনের বিখ্যাত সংলাপের অনুকরণে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ কটাক্ষ করেছেন, ‘‘অভিষেক যাঁহা পে খাড়া হোতা হ্যায়, শুভেন্দু ওহিঁ সে শুরু করতা হ্যায়!’’ তার পরে তিনি বলেন, ‘‘সভা যে কেউ করতে পারেন। তবে অভিষেক কতটা আতঙ্ক ধরিয়েছেন, বোঝা যাচ্ছে। শুভেন্দু যে ভাবে অভিষেককে অনুসরণ করছে, সেটা আমরা উপভোগ করছি!’’ কুণালের আরও সংযোজন, ‘‘ওই দিন পি কে কলেজের মাঠে দলের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ‘বেইমানমুক্ত পূর্ব মেদিনীপুর’-এর জন্য সভার অনুমতি চেয়েছে তৃণমূলও। তবে শুভেন্দু যে অভিষেককে অনুসরণ করছে, তা প্রমাণ করতে শেষ পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি থেকে সরে আসতে পারি!’’ বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডলের দাবি, ‘‘বিরোধী দলনেতা যেখানে সভা করতে যান, সরকার অনুমতি দেয় না। আমরা আগেও হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে সভার অনুমতি নিয়েছি, এ বারও বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে।’’
কলকাতায় এ দিন শাসক দলকে নিশানা করেছেন শুভেন্দুও। বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, ভোট-পরবর্তী ‘সন্ত্রাসে’ যারা অভিযুক্ত, তারা ডায়মন্ড হারবারের সভা বানচাল করতে রাস্তায় রাস্তায় অবরোধ, বাস ভাঙচুর করে। সভার পরে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদেরই ‘মিথ্যা মামলা’ দেওয়া হয়েছে। একই ঘটনায় দুই থানায় অভিযোগ হয়েছে! ডায়মন্ড হারবার এবং সুন্দরবন পুলিশ জেলার এসপি-র নেতৃত্বে বিজেপির কর্মীদের বাড়িতে ঢুকে অত্যাচার চলছে। ৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের অধিকাংশের নামেই কোনও এফআইআর নেই। দুই শিশু-সহ তাঁদের এক সমর্থক সে দিন আহত হয়েছেন দাবি করে শুভেন্দুর অভিযোগ, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পালের নামেও এফআইআর হয়েছে। বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, ‘‘যে বিচারপতির রায়ে ওই সভা হয়েছিল, তাঁর এজলাসেই এই সব তথ্য নিয়ে যাব। আমার বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে মাইক হাতে যাঁরা বিচারপতিদের কারও কারও বিরুদ্ধেও কথা বলেন, তাঁদের হাতে গণতন্ত্রের এই অবস্থা!’’
শুভেন্দুর অভিযোগ নস্যাৎ করে তৃণমূলের কুণাল অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘সর্বৈব মিথ্যা অভিযোগ! কাঁথির বিশাল জমায়েত থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে ওই দিন ডায়মন্ড হারবারে অশান্তি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেই লক্ষ্যে প্ররোচনা তৈরি করা হয়। আমাদের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর, কর্মীদের মারধর করা হয়েছে।’’