রাজ্যের ছয় আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করল তৃণমূল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
বিজেপির প্রার্থিতালিকা প্রকাশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যের ছয় আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করল তৃণমূল। শাসকদল সূত্রে খবর, স্থানীয় নেতৃত্বের উপরই ভরসা রাখা হয়েছে উপনির্বাচনে।
সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হচ্ছেন সঙ্গীতা রায়। মাদারিহাট কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পো। নৈহাটিতে প্রার্থী করা হয়েছে সনৎ দে-কে। হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী শেখ রবিউল ইসলাম। মেদিনীপুরে তৃণমূলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সুজয় হাজরা। তালড্যাংরা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে ফাল্গুনী সিংহবাবুকে।
নৈহাটির প্রার্থী সনৎ টাউন তৃণমূলের সভাপতি। দীর্ঘ দিন তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত তিনি। তাই তাঁর উপরই ভরসা রাখল বাংলার শাসকদল। অন্য দিকে মেদিনীপুরে প্রার্থী সুজয়ও তৃণমূলের অন্দরে খুবই পরিচিত নাম। তিনি তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি। তাঁকেই প্রার্থী হিসাবে বাছল তৃণমূল। তবে চমক রয়েছে হাড়োয়ার প্রার্থী বাছাইয়ে। এই কেন্দ্রে কাকে প্রার্থী করা হবে তা জল্পনা চলছিল। বসিরহাটের প্রয়াত সাংসদ হাজি নুরুল ইসলামের পদত্যাগের কারণে খালি হওয়া এই বিধানসভার আসনে দাবিদার ছিলেন অনেকেই। বসিরহাট লোকসভায় জয়ী হওয়ার পর তিনি বিধায়ক পদ ছেড়েছিলেন। আর তাঁর শূন্যস্থান পূরণে দলীয় নেতৃত্বকেও প্রার্থী ঠিক করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তৃণমূলকে। প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন প্রয়াত সাংসদের দুই পুত্র। তাঁর বড় ছেলে আনারুল ইসলাম এবং মেজো ছেলে রবিউল ইসলাম। এ ছাড়াও কলকাতার মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কন্যা প্রিয়দর্শিনীর নাম নিয়ে আলোচনা চলছিল। তবে শেষ পর্যন্ত রবিউলকেই প্রার্থী হিসাবে বেছে নিল তৃণমূল।
মেদিনীপুরের তৃণমূল কাকে প্রার্থী করে তা নিয়ে কৌতূহল ছিল রাজনৈতিক মহলে। দেখা গেল শেষ পর্যন্ত সেই সুজয়ের উপরই ভরসা রাখল দলীয় নেতৃত্ব। জুন যখন মেদিনীপুরের বিধায়ক ছিলেন তখন সুজয়ের সঙ্গে তাঁর ‘বিবাদ’ অজানা নয়। তবে পরে তৃণমূলের সর্বময়নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ‘বিবাদ’ মিটিয়ে নেন দু’জনে। গত লোকসভায় জুনকে প্রার্থী করা হলে তাঁর হয়ে নির্বাচনে ‘খেটেছিলেন’ সুজয়। তিনি পেশায় এক জন ব্যবসায়ী। সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এখনও পর্যন্ত কখনও নির্বাচনে লড়েননি তিনি। তৃণমূল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য হন সুজয়। ২০০২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত জেলা যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক হন। ২০২১ সালে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দায়িত্ব পান। বর্তমানে তিনি জেলা সভাপতি। কোন দিনই নির্বাচনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। গত বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের হয়ে দায়িত্ব সামলেছেন।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
উল্লেখ্য, রাজ্যের এই ছয় আসনের বিধায়কেরা গত লোকসভা নির্বাচনে সাংসদ হয়েছেন। তবে তাঁদের মধ্যে বসিরহাটের সাংসদ হাজি নুরুলের সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে। হাড়োয়া আসনের বিধায়ক পদ ছেড়ে তিনি সাংসদ হন। হাড়োয়াতে উপনির্বাচন হলেও বসিরহাট লোকসভা আসনে এখনই ভোটগ্রহণ হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, যে ছ’টি আসনে উপনির্বাচন হবে তার মধ্যে ২০২১ সালে বিজেপি জিতেছিল মাত্র একটিতে। মাদারিহাট বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়ে জয় পান মনোজ টিগ্গা। মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ সাংসদ হওয়ায় সেই আসনে ভোটগ্রহণ হবে। এ বার বিজেপি সেই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে রাহুল লোহারকে। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করল জয়প্রকাশকে। এ ছাড়াও কোচবিহারে সিতাই আসন ছেড়ে তৃণমূলের সাংসদ হয়েছেন জগদীশচন্দ্র বর্মা বাসুনিয়া। নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক ব্যারাকপুরের সাংসদ হয়েছেন। মেদিনীপুর এবং তালড্যাংড়া আসন এখন শূন্য রয়েছে যথাক্রমে জুন মালিয়া এবং অরূপ চক্রবর্তী সাংসদ হওয়ায়। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা, সিতাই, মাদারিহাট, নৈহাটি, হাড়োয়া, মেদিনীপুর এবং তালড্যাংড়া আসনে ১৩ নভেম্বর ভোটগ্রহণ হবে। সর্বত্রই গণনা হবে ২৩ নভেম্বর।