২১ জুলাইয়ের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অখিলেশ যাদব। ছবি: পিটিআই।
রবিবার কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে সোজা কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। সেখান থেকে মমতার সঙ্গেই ধর্মতলার সভায় যান তিনি। অখিলেশের বাবা মুলায়ম সিংহ যাদবের সঙ্গে বরাবর ভাল সম্পর্ক ছিল তৃণমূলনেত্রী মমতার। সেই সম্পর্কের ছবি জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে বারংবার দেখা গিয়েছে। তবে সরাসরি তৃণমূলের মঞ্চে কখনও আসেননি সপা-র প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম। তবে তাঁর পুত্র এলেন। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতার ডাকে ব্রিগেডেও এসেছিলেন অখিলেশ। কিন্তু তার সঙ্গে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চের ফারাক রয়েছে।
যে ভাবে মমতা-অখিলেশ পরস্পরের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন এবং বিজেপিকে হারানোর জন্য একে অপরের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে, বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’র মধ্যে আলাদা একটি জোট গড়তে চাইছেন তাঁরা। যে জোট হচ্ছে কংগ্রেসকে এড়িয়ে। তাদের বাইরে রেখেই। এই জোটের বার্তা এবং লক্ষ্য স্পষ্ট— ‘ইন্ডিয়া’র অন্দরে কংগ্রেসকে ‘দাদাগিরি’ করতে দেওয়া যাবে না। মমতা বা অখিলেশ— কারও বক্তব্যেই এক বারের জন্যও কংগ্রেস নাম উচ্চারিত হয়নি। আর নাম না-করেও মমতা বলেছেন, ‘‘বাংলায় আমরা তিনটে দলকে (বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম) হারিয়েছি।’’
রবিবারের সভায় তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দিয়েছেন, লোকসভা এবং রাজ্যসভা মিলিয়ে বিরোধী জোটের অন্দরে সাংসদের সংখ্যায় তৃণমূল তৃতীয় বৃহত্তম স্থানে রয়েছে। আর অভিষেকের দলনেত্রী মমতা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ওই বিরোধী জোটে অখিলেশের সপা রয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থানে। অর্থাৎ, ‘ইন্ডিয়া’ তথা বিরোধী জোটের অন্দরে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানাধিকারী একই মঞ্চে পাশাপাশি রয়েছে। মমতা আরও বলেছেন, ‘‘লোকসভা ভোটে এনডিএ পেয়েছে ৪৬ শতাংশ ভোট। আর ‘ইন্ডিয়া’ পেয়েছে ৫১ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ, বিজেপি হেরেই গিয়েছে! কিন্তু ওদের লাজ-লজ্জা নেই। তাই সরকারে আছে।’’
তৃণমূল এবং সপা সম্পর্ক যে সদ্য ঘনিষ্ঠ হল, তা নয়। উত্তরপ্রদেশে গত বিধানসভা নির্বাচনে সপার সমর্থনে প্রচারে গিয়েছিলেন মমতা। আবার সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেও ওই রাজ্যের ভাদোহি আসনটি ‘ইন্ডিয়া’-সঙ্গী তৃণমূলকে দিয়েছিল সপা। বিজেপি সেখানে জিতলেও সপার সমর্থনে দ্বিতীয় হন তৃণমূল প্রার্থী ললিতেশপতি ত্রিপাঠী। সেই দলের প্রধান তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশকে নিজের দলের সভায় আমন্ত্রণ জানিয়ে ‘বন্ধুত্বের বার্তা’ আরও স্পষ্ট করলেন মমতা। সভায় আসার আগে কালীঘাটের বাড়িতে অখিলেশের সঙ্গে একান্তে কথাও বলেন মমতা।
রবিবারের সভায় অভিষেকের পরেই বক্তৃতা করেন অখিলেশ। তাঁর পরে বলেন মমতা। বক্তার ক্রম অনুযায়ী ‘গুরুত্ব’ পেয়েছেন অখিলেশ। বক্তৃতায় আগাগোড়া মমতার প্রশংসা শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। সঙ্গে তৃণমূলের লড়াইয়ে সমর্থনের আশ্বাসও। আবার কেন্দ্রীয় সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে অখিলেশের মন্তব্যে সহমত হয়েছেন মমতা। সভার শেষ লগ্নে অখিলেশের সঙ্গে মেলানো হাত আকাশের দিকে তুলে ধরেছেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী।
বিজেপি বিরোধী জোটের মধ্যে লোকসভায় সবচেয়ে বেশি আসন জিতেছে কংগ্রেস। ফলে কংগ্রেসনেতা রাহুল গান্ধীই হয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা। তবে সেটা কংগ্রেসের সাংসদ হিসাবে। এর সঙ্গে জোটের সম্পর্ক নেই। বিজেপিও জোটের পরিবর্তে লোকসভায় কংগ্রেসের কথাই বেশি বলছে। যা জোটের মধ্যে ভাঙন ধরানোর প্রক্রিয়াও হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ, বিজেপি চাইছে, লোকসভায় বিরোধী শিবিরের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল সপার গুরুত্ব কমিয়ে দিতে। লোকসভায় সপা-র সাংসদ সংখ্যা ৩৭। তবে উত্তরপ্রদেশে সপা-র ভাল ফলের কারণেই বিজেপির সার্বিক শক্তি অনেকটা কমে গিয়েছে। কংগ্রেসের পরে সপা-ই বিরোধী জোটের দ্বিতীয় শক্তিধর দল। একই ভাবে বাংলাতেও ২০১৯ সালের তুলনায় পদ্মের ছ’টি আসন কমিয়ে দিতে পেরেছে তৃণমূল। ২৯ আসনে জিতে লোকসভায় চতুর্থ শক্তিধর এবং বিরোধী জোটে তৃতীয় বৃহত্তম এখন তৃণমূল। দ্বিতীয়-তৃতীয় হাত মিলিয়ে নিলে ৯৯ আসনের কংগ্রেসের সামনে তারা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
অখিলেশ বক্তৃতা শেষ করেন কেন্দ্রে তৃতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকার বেশি দিন স্থায়ী হবে না জানিয়ে। আর মমতা তাঁর বক্তৃতার শুরুতেই অখিলেশের সঙ্গে সহমত হয়ে বলেন, ‘‘দিল্লির সরকার বেশি দিন টিকবে না। উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ খেলা দেখিয়েছে। বিজেপির তো ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিল।’’