সামসাবাদ বুথে হাতে হাত মিলিয়ে সৌজন্য বিনিময় বিজেপি প্রার্থী দিলীপ সাহা এবং কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসের মধ্যে। নিজস্ব ছবি।
সাগরদিঘির উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস এবং বিজেপি প্রার্থী দিলীপ সাহার হাত মেলানোর ছবি তুলে ধরে ‘অশুভ আঁতাঁতের’ তত্ত্বে শান দিতে শুরু করল তৃণমূল। গত রবিবারই সাগরদিঘিতে গিয়ে কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতার অভিযোগ তুলেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চ থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সঙ্গে বাইরনের একটি ছবিও দেখিয়েছিলেন তিনি। তার প্রেক্ষিতে বাইরন-দিলীপের হাত মেলানোর দৃশ্য নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে রাজ্য রাজনীতিতে। যদিও কংগ্রেস এবং বিজেপি দু’পক্ষেরই দাবি, হাত মেলানো নিছকই ‘সৌজন্য বিনিময়’ ছিল।
সোমবার সাগরদিঘিতে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কিছু পরেই সামসাবাদ বুথে বাইরন এবং দিলীপের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়। দু’জনেই বুথ পরিদর্শনে এসেছিলেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে দু’জনকে হাত মেলাতেও দেখা যায়। সেই ছবি দেখিয়ে আবার কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে আঁতাঁতের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে তৃণমূল। দলের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘‘সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাগরদিঘি জনসভায় বিজেপি-কংগ্রেসের গোপন আঁতাঁত প্রকাশ্যে আনার কয়েক দিন পরেই সোমবার এই দুই দল নিজেদের মধ্যে জোটের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।’’ জোড়াফুল শিবিরের দাবি, ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র যোগ্য জবাব দেবেন সাগরদিঘির মানুষ।
কংগ্রেস এবং বিজেপি দু’দলই সমঝোতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। উল্টে বাইরনের দাবি, ‘‘যদি আঁতাঁত হয়ে থাকে, তবে সেটা বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে হয়েছে। কংগ্রেস একাই লড়ছে এই নির্বাচনে।’’ বিজেপির আবার দাবি, বাইরন জিতলে তৃণমূলের যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন! দিলীপ বলেন, ‘‘বাইরন জিতলে তো তৃণমূলে যাবেন বলে ঠিক করেছেন। তাঁর সঙ্গে আঁতাঁতের প্রশ্নও ওঠে না।’’
সাগরদিঘিতে ভোটপ্রচারে গিয়ে অভিষেক দাবি করেছিলেন, বাইরন আদতে ‘পদ্মফুল মনোনীত’ হাত চিহ্নের প্রার্থী। ভোটে জিতলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি বিজেপিতে চলে যাবেন। বাইরনের সঙ্গে শুভেন্দুর ছবি দেখিয়ে বিরোধী দলনেতার বক্তৃতার রেকর্ড (সেটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) করা অংশও অভিষেক নিজের মোবাইল থেকে মাইকের সামনে ধরে শোনান। সেখানে শুভেন্দুকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘সংখ্যালঘু ভোট যাতে জোড়াফুলে না পড়ে, তার ব্যবস্থা আমি করে এসেছি।’’ সেই সূত্রেই অভিষেকের দাবি, বাম-কংগ্রেস এবং বিজেপির ‘অশুভ আঁতাঁত’ তৈরি হয়েছে রাজ্যে। প্রসঙ্গত, সাগরদিঘিতে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করেছে বামেরা।
অভিষেকের দেখানো ছবি নিয়ে পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন শুভেন্দুও। বলেছিলেন, ‘‘ভাইপোকে বলব, দম থাকলে ছবির সাল-তারিখ বলুক। ও যদি সময়-তারিখ জানাতে পারে, তা হলে জানিয়ে দেব, কংগ্রেসের যিনি প্রার্থী, সেই সময়ে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান কী ছিল।’’
সমঝোতার তত্ত্বে অভিষেক বামেদেরও টেনে আনায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী সেই সময় বলেছিলেন, ‘‘অভিষেক কি বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায়ের তৃণমূলে যোগদানের কথা ভুলে গিয়েছেন? যাতায়াত তো চলছেই তৃণমূল আর বিজেপির মধ্যে!’’