প্রতীকী ছবি।
মোটেই নতুন নয় সে। বিরল হলেও মিউকরমাইকোসিস বা ছত্রাক সংক্রমণ রোগটি আগেও ছিল বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। একই সঙ্গে তাঁরা জানাচ্ছেন, ওই রোগের কথা যে বিশেষ জানা যেত না, তার কারণ, এত দিন তাতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল কার্যত হাতে গোনা। কিন্তু এই করোনা-কালে হাসপাতালে রোগী ভর্তি বেড়েছে অনেক গুণ। আর সেই সূত্রেই ছত্রাকঘটিত ওই রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও চোখে পড়ছে বলেই মনে করছেন চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা অভয় দিচ্ছেন, ওই রোগকে ঘিরে অযথা ত্রাসতাড়িত হওয়ার কোনও কারণ নেই। যথাসময়ে চিকিৎসা শুরু করতে পারলে নিরাময় অসম্ভব কিছু নয়।
চিকিৎসক শিবিরের একাংশের মতে, করোনার কারণে হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে সঙ্কটজনক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি এমনই যে, রাজ্যের সব হাসপাতালের আইসিইউ বা সিসিইউ এখন রোগীতে ভর্তি। আর সেই কারণেই এখন মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি মাত্রায় দেখা যাচ্ছে।
ছত্রাকের সংক্রমণ নিয়ে অতিমাত্রায় আতঙ্কিত হতে নিষেধ করছেন চিকিৎসকদের অনেকে। এসএসকেএম হাসপাতালেন ইএনটি বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত জানান, মিউকরমাইকোসিস রোগ নিরাময়যোগ্য। শুধু ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড খাচ্ছেন অথবা উচ্চ সুগারে ভুগছেন এবং করোনায় দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকার পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন— এমন রোগীদের বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১২। তাঁদের মধ্যে আট জন এ রাজ্যের এবং বাকি চার জন ওড়িশা, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। তাঁরা চিকিৎসার জন্য এ রাজ্যে এসেছিলেন। রাজ্যে আরও পাঁচ জন রোগী মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, "ইতিমধ্যে এক জনের অস্ত্রোপচার হয়েছে। আর এক জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। তবে মিউকরমাইকোসিসই সেই রোগীর মৃত্যুর কারণ কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য ‘ডেথ অডিট’ হবে। বাকি রোগীদের চিকিৎসা চলছে।"
বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান জানান, সেখানে তিন জন করোনা রোগীর শরীরে মিউকরমাইকোসিসের উপসর্গ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে দু’জনের মিউকরমাইকোসিস ধরাও পড়েছে। এক জনের রিপোর্ট এখনও মেলেনি। তিনি বলেন, ‘‘শনিবার আক্রান্তদের মধ্যে এক জনের অস্ত্রোপচার হয়েছে। ইএনটি বিভাগের এক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে মোট ১০ জনের দল ওই অস্ত্রোপচার করেছে।’’ ওই হাসপাতাল সূত্রের খবর, আক্রান্ত দু’জনই পুরুষ এবং বাঁকুড়া জেলার বাসিন্দা। এক জনের বয়স ৩৩ এবং অন্য জনের ৪৭ বছর। পুরুলিয়া জেলার বাসিন্দা,
ষাটোর্ধ্ব এক মহিলা রোগীর রিপোর্ট এখনও আসেনি। তিন জনেরই অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিসের
সমস্যা রয়েছে।
অরুণাভবাবু বলছেন, "ছত্রাকঘটিত সংক্রমণটি নতুন কিছু নয়। নাক বন্ধ, কালচে রক্ত বেরোচ্ছে— এমন রোগী অনেক আসেন। ওই অবস্থায় স্ক্যান করলেই ধরা পড়ে ছত্রাকের সংক্রমণ। তখন এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি করে সেটি বার করে দেওয়া হয়।" তিনি জানান, মিউকরমাইকোসিস প্রথমে নাকে ঢুকে সেটি বন্ধ করে দেয়। সেই অবস্থাতেই চিকিৎসা শুরু করলে রোগটি সারানো সম্ভব। কিন্তু ছত্রাকটি যদি রক্তবাহী নালিকে ধরে সংক্রমণ ঘটিয়ে যেতে থাকে, তা হলেই বিপদ। তখন চোখের দৃষ্টিশক্তি তো নষ্ট হয়ে যায়ই। তা ছাড়াও অন্যান্য সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই চিকিৎসার প্রয়োজন গোড়াতেই।