গরু এবং কয়লা পাচার সংক্রান্ত একটি অডিয়ো টেপ (আনন্দবাজার যার সত্যতা যাচাই করেনি) ফাঁস হওয়ার মামলায় ওই অফিসারদের ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ইডি কর্তারা। সোমবারই তাদের তিন অফিসারকে দিল্লি থেকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল বলে ইডি-র দাবি।
ছবি: সংগৃহীত।
কলকাতা পুলিশের ডাকে এলেন না এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) তিন অফিসারই। সূত্রের খবর, সোমবার দিল্লিতে ইডি-র যে অফিসারেরা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, তাঁদের মধ্যেই ছিলেন ওই তিন জন।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদের দিনে ইডি-কে ‘চাপে রাখার’ পাল্টা কৌশল হিসেবেই ওই তিন অফিসারকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। ইডি অফিসারদের তলবের খবর বিভিন্ন মহলে কানাঘুষোয় শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি কলকাতা পুলিশের কোনও অফিসার। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে ফোন করা হলে, তিনি ধরেননি। মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব দেননি।
গরু এবং কয়লা পাচার সংক্রান্ত একটি অডিয়ো টেপ (আনন্দবাজার যার সত্যতা যাচাই করেনি) ফাঁস হওয়ার মামলায় ওই অফিসারদের ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ইডি কর্তারা। সোমবারই তাদের তিন অফিসারকে দিল্লি থেকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল বলে ইডি-র দাবি। সোমবার দুপুরের মধ্যে ওই তিন জনকে কালীঘাট থানায় হাজির হতে বলা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির বক্তব্য, কলকাতা পুলিশের এই সমনের বিরুদ্ধে সেপ্টেম্বরে ইডি দিল্লি হাই কোর্টে আবেদন করে এবং আদালত ওই সমনের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। যদিও তদন্ত চালানোর ক্ষেত্রে আদালতের তরফে কিছু বলা হয়নি।
পুলিশের দাবি, ওই অডিয়ো ক্লিপে এক ব্যবসায়ীকে গরু, কয়লা পাচারের মতো বিষয় নিয়ে এক ইডি অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে শোনা গিয়েছে। গত বছর বিধানসভা ভোটের আগে ফাঁস হয়েছিল ওই অডিয়ো। তার পরে সেই ঘটনায় মামলা দায়ের করে কলকাতা পুলিশ। ডেকে পাঠানো হয় ইডি অফিসারদের। কিন্তু, পুলিশের ডাকে এখনও পর্যন্ত ইডি অফিসারেরা হাজির হননি। বরং ওই ঘটনায় মামলা দায়ের করা নিয়ে কলকাতা পুলিশের এক্তিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তোলেন ইডি কর্তারা।
এ দিন দিল্লিতে ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশের কাছে আমিই অভিযোগ করেছিলাম। কারণ, ভোটের এক দিন আগে একটি টিভি চ্যানেলে একটি ভয়েস ক্লিপ প্রকাশ্যে আসে। সেখানে এক জন তদন্তকারী অফিসার ও এক জন সাক্ষীর মধ্যে কথোপকথন শোনা যায়।’’ তৃণমূলের অভিযোগ, সেখানে অভিষেকের নামও উল্লেখ করা হয়েছিল। যে দু’জন কথা বলছিলেন, অভিযোগ, তাঁদেরই কেউ সেই ক্লিপ বাইরে চালান করে দেন। অভিষেক এ দিন বলেন, ‘‘যিনি অভিযুক্ত, তাঁকে ছেড়ে রেখেছে সিবিআই-ইডি। ইডি তাঁকে গ্রেফতার করেনি। ভোটের এক দিন আগে যখন এই ঘটনা, তখন বোঝাই যাচ্ছে, এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। সেই কারণেই আমি অভিযোগ করি। পুলিশ তার কাজ করছে।’’
এই প্রথম নয়, এর আগেও যখন কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সারদা মামলায় সিবিআই ডেকে পাঠিয়েছিল, তখন পাল্টা রোজ ভ্যালি কাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। রোজ ভ্যালির একটি হোটেল ভাঙচুরের ঘটনায় সেই সময় তদন্তে নেমেছিল পুলিশ। অভিযোগ, সেই মামলায় দিল্লিতে ই-মেল পাঠিয়ে কলকাতা পুলিশের এক সাব-ইনস্পেক্টর পদের অফিসার সিবিআইয়ের যুগ্ম অধিকর্তা পদের অফিসারকে ডেকে পাঠান। যার পরে ক্ষুব্ধ সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে রাজীব কুমারের নামে মামলা করে।