রাজ্যে আসন্ন দুই লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক ফ্রন্ট না গড়ে একাই লড়বে বামেরা। কিন্তু রাজ্যে গণতন্ত্র বাঁচানো-সহ নানা আন্দোলনে রাস্তায় থাকা হবে কংগ্রেসের সঙ্গেই। দলের সাংগঠনিক প্লেনামে আলোচনার পরে এই পথই বেছে নিল সিপিএম।
বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসম সমঝোতা করে লড়াই ঠিক হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্নে বিতর্ক এখনও অব্যাহত সিপিএমে। রাজ্য প্লেনামে সুযোগ পেয়ে বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা সেই বিতর্কেই ফের ঢুকেছেন। আলোচনার শেষে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়ে দিয়েছেন, আন্দোলনের ঐক্য থাকবে কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সব শক্তির সঙ্গে। ঐক্যের বাতাবরণ জনমানসে প্রতিষ্ঠিত হলে তার প্রেক্ষিতে নির্বাচনী কৌশলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। সিপিএম নেতৃত্ব জানেন, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে কোনও বড় নির্বাচনের মোকাবিলা তাঁদের করতে হবে না। তার আগে ২০১৮-র পার্টি কংগ্রেসে তাঁরা ফের দলের রাজনৈতিক লাইন ঠিক করে নিতে পারবেন।
তবে সে সবের আগেই কোচবিহার ও তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন আসছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির লাইন মেনে সেখানে আপাতত কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার পথে যাওয়া হচ্ছে না। ওই দু’টির মধ্যে কোচবিহার আসনটি অবশ্য বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক লড়ে। তমলুকে প্রার্থী দেবে সিপিএমই। কিন্তু রাস্তায় কংগ্রেসের সঙ্গে আন্দোলন হবে আর ভোটের সময় আলাদা রাস্তা নিতে বলা হবে— এতে কি আরও বিভ্রান্তি বাড়বে না? সূর্যবাবুর জবাব, ‘‘ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। আন্দোলন-সংগ্রাম না করে দু’টো দল মিলে শুধু ভোটের সময় কাছাকাছি এলে বরং বিভ্রান্তি হয়। যেটা বিধানসভা নির্বাচনের সময় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হয়েছিল। রাজ্য কমিটি নির্বাচনী পর্যালোচনা করতে গিয়ে এটাই বলেছে।’’
শাসক দল যে ভাবে বিরোধীদের হাত থেকে একের পর পুরসভা ও পঞ্চায়েত দখল করে নিচ্ছে, বিধায়ক ভাঙাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে জোরদার প্রতিবাদ গড়ে তুলতে চেয়ে একটি প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে শনিবার প্লেনামে। ভাঙনের এই ধাক্কা একই ভাবে ভোগাচ্ছে বাম ও কংগ্রেসকে। এই প্রতিবাদে কি কংগ্রেস সঙ্গে থাকবে? সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সাফ কথা, ‘‘অবশ্যই। গণতন্ত্র বাঁচানোর লড়াইয়ে যারা সঙ্গে থাকতে চাইবে, তাদের পাশে নেওয়ার কথা আগে কেন্দ্রীয় কমিটিতেই ঠিক হয়েছে।’’
প্লেনামের বিতর্কে এ দিনও কংগ্রেস-প্রসঙ্গ উঠেছে। কলকাতার নেতা সুদীপ সেনগুপ্ত আগের দিন যে ভাবে দলের নেতাদের কাঠগড়ায় তুলেছিলেন, সেই জেলা থেকেই এ দিন প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায় তার পাল্টা সরব হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্যই নেতাদের কেউ কেউ এখন এ সব বলছেন। অথচ আসন সমঝোতার ব্যাপারে জেলায় আলোচনার সময় জেলা সম্পাদকমমণ্ডলীর সব সদস্যই সেখানে থেকে সব জানতেন!