Home

সরকারি হোম থেকে পালাল ১৩ আবাসিক

গত মাসেরই মাঝামাঝি সময়ে এই হোম থেকেই এক বাংলাদেশি আবাসিক পালিয়েছিল। তার খোঁজ এখনও চলছে। এর মধ্যেই শনিবার দল বেঁধে পালানোর ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে ধ্রুবাশ্রমের নিরাপত্তা নিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২০ ০২:১০
Share:

প্রতীকী ছবি

ফের ধ্রুবাশ্রম থেকে ১৩ জন নাবালক পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল। হোম সূত্রের খবর, এদের এক জন বাংলাদেশি এবং বাকিরা কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, বর্ধমানের বিভিন্ন মামলায় আটক নাবালক আবাসিক।

Advertisement

গত মাসেরই মাঝামাঝি সময়ে এই হোম থেকেই এক বাংলাদেশি আবাসিক পালিয়েছিল। তার খোঁজ এখনও চলছে। এর মধ্যেই শনিবার দল বেঁধে পালানোর ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে ধ্রুবাশ্রমের নিরাপত্তা নিয়ে। সূত্রের খবর, গত মাসের শেষে আরও কয়েক জন ধ্রুবাশ্রম থেকে পালানোর ছক কষেছিল। কর্তৃপক্ষ কোনও ভাবে সেই পরিকল্পনার কথা জেনে যাওয়ায় নজরদারি বাড়ানো হয়। প্রশ্ন, সেই নজরদারি এড়িয়ে কী ভাবে পালাল এত জন?

হোমের সুপার অর্ণব রায় খবরের সত্যতা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। খবর পেয়েই রবিবার রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের অধীন চাইল্ড ওয়েলফেয়ার ডিরেক্টরটের অধিকর্তা নীলাঞ্জনা দাশগুপ্ত, দুই সহকারী অধিকর্তা দেবকুমার ভট্টাচার্য এবং অনির্বাণ চক্রবর্তী সেখানে পরিদর্শনে যান। এ দিন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তাঁরা। ধ্রুবাশ্রম থেকে বারবার আবাসিকেরা কেন পালাচ্ছে, এ নিয়ে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা।

Advertisement

বছর দেড়েক আগে এই হোম থেকেই ২০ জন নাবালক পালিয়েছিল। যাদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। দফতর সূত্রের খবর, যে সব নাবালকেরা অপরাধ করে ধরা পড়ে তাদেরকে এই হোমে পাঠানো হয়। তার মধ্যে সামান্য অপরাধ করার জন্য দোষী যেমন রয়েছে, তেমনই ঘৃণ্যতম অপরাধে জড়িতরাও রয়েছে। বন্দি থাকতে থাকতে তাদের বর্তমানে অনেকের বয়স আঠারোর বেশি। একাধিক মনোরোগ চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ওদের প্রকৃতি ভিন্ন হলেও একসঙ্গে থাকায় বয়ঃসন্ধি কালে দ্রুত চরিত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। হোমেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, দীর্ঘদিন থাকতে থাকতে ওরা নিজেরাই দল তৈরি করে। মূলত পুরনো আবাসিকেরাই হোমের ভিতরে ‘দাদা’ হয়ে ওঠে। শুরু হয় পালানোর ছক। আর সেই ছক সফল হচ্ছে ধ্রুবাশ্রমের দুর্বল পরিকাঠামোর কারণে।

কম কর্মী নিয়ে চলা ধ্রুবাশ্রমে দফতরের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী নেই। সংস্থা থেকে আনানো কর্মী থাকেন হোমের বাইরে। এ দিকে বন্দি থাকতে থাকতে অবসাদে চলে যায় ওই ধৃতেরা। একটা সময়ের পরে বাড়ি ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ওরা। উপায় না থাকায়, পালানোর ছক কষতে থাকে। নিরাপত্তার ফাঁক গলে বেরোতে অসুবিধাও হয় না। দফতরের একটি সূত্রের মত, সামান্য অপরাধ করে ধরা পড়া নাবালকদের সংশোধন করাই যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তবে তাদের কেন কাউন্সেলিং করিয়ে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে না? এর উত্তর অবশ্য দেননি আধিকারিকেরা।

নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, গত মাসে পলাতক বাংলাদেশি আবাসিক বছর দেড়েক আগে চুরির মামলায় ধরা পড়েছিল। কলকাতা জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের মাধ্যমে তার ঠাঁই হয় ধ্রুবাশ্রমে। কিছু দিন পরে সে পালায়। পরে ডাকাতির মামলায় আবার ধরা পড়ে হোমেই ফিরে আসে। দ্বিতীয় বার পালানোর সময়ে তার বয়স আঠারো পেরিয়েছিল। হোমের একটি সূত্রের খবর, এর পরে আরও একটি দলের পালানোর চেষ্টা কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় ভেস্তে গেলে আবাসিকেরা দু’টি দলে ভাগ হয়ে যায়। তাদের মধ্যে ব্যাপক মারামারিতে কয়েক জন জখমও হয়। হোমের তরফে বিষয়টি ডিরেক্টরেটকে জানানো হয়।

বারবার আবাসিক পালানো নিয়ে চিন্তিত নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি বলেন, ‘‘হোম কখনওই বাড়ি হতে পারে না। চেষ্টা করা হয়, সামান্য অপরাধ করে যারা এসেছে, তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে। কিন্তু তবু কেন এমন হচ্ছে, তা সত্যিই ভেবে দেখার বিষয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement