ছবি- পিটিআই
দেশে তৃতীয় ঢেউ উঠবেই! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মতে তৃতীয় ঢেউয়ের প্রাথমিক স্তরে রয়েছে বিশ্ব। দেশে আগামী মাসেই তৃতীয় ঢেউয়ের আগমন নিয়ে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও। কিন্তু প্রশ্ন হল, কোভিডের ঢেউ রাজ্যে আছড়াবে কবে? রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর অগস্টের আগেই সেরে রাখতে চাইছে তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলার প্রস্তুতি। কিন্তু কতটা শক্তিশালী হবে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ? দ্বিতীয় ঢেউয়ের থেকেও কি বেশি ঝড় তুলবে তৃতীয়? আগের ভয়াবহতাকেও কি ছাড়িয়ে যাবে কোভিডের নতুন রূপ?
রাজ্যের তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় গঠিত বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের মতে, ‘‘ কোভিডের কোন ‘ভ্যারিয়্যান্ট’ বা ‘মিউটেশন’ তৃতীয় ঢেউ তুলবে রাজ্যে, তার উপরেই নির্ভর করছে কতটা ভয়াবহ হবে আসন্ন ঢেউ। এখনই এটা নিয়ে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, রাজ্যে কোভিডে মৃত্যু এখনও একদম কমে যায় নি। কোভিড নিয়ন্ত্রণে রাজ্যে কড়াকড়ি চলছে। সাধারণ মানুষকে যেমন করোনা বিধি মানতে হবে, গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তেমনই প্রশাসনকে ভাইরাসের চরিত্রের উপর কঠোর নজরদারি চালাতে হবে। রাজ্যে প্রতি দিনের সংক্রমণের পরিস্থিতি দেখে তৃতীয় ঢেউয়ের আভাস আন্দাজ করা যেতে পারে।’’
বিশেষজ্ঞদের মতে কয়েকটি কারণের উপর ভর করে রয়েছে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ—
.কোভিড নিজেকে কতটা বদলাবে।
. নতুন রূপ কতটা শক্তিশালী এবং কত দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম হবে।
.সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
. কত মানুষের টিকাকরণ করা হচ্ছে।
.কোভিড বিধি মানা তথা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কেমন হবে।
ছবি- পিটিআই
দেশের কোনও ঢেউয়েই এই রাজ্য থেকে শুরু হয়নি। তাই অন্য রাজ্যের সংক্রমণের উপর সমান নজর রাখতে হবে বলে মনে করেন নাইসেডের প্রাক্তন সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দীপিকা শূর। তিনি জানালেন, ‘‘দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগে রাজ্যে সংক্রমণ আরও কমে গিয়েছিল। এখনও কিন্তু এতটা কমেনি। এ ছাড়া কোভিডের নতুন রূপ ল্যাম্বডা, কাপ্পা ইত্যাদি ছড়ানোর গতি দেখে তৃতীয় ঢেউয়ের আসার সময় বোঝা যেতে পারে। তবে নতুন ঢেউ ওঠার সম্ভাবনা প্রবল। এর জন্য সাধারণ মানুষকে যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনই হাতে যেটুকু সময় আছে তার আগে কত মানুষ টিকা পাচ্ছেন তার উপরও নির্ভর করছে তৃতীয় ঢেউয়ের আগমন।’’
রাজ্যে কড়াকড়ি চললেও সাধারণ মানুষের মেলামেশা চিন্তা বাড়াচ্ছে বলে জানান রাজ্যের তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় গঠিত বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য এবং মেডিসিনের চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পাল। রাজ্যে তৃতীয় ঢেউ কখন আসবে তা নিশ্চিত বলা না গেলেও পরের দু’এক মাস চিন্তা বাড়াবে বলে তাঁর ধারণা। ‘‘রাজ্যে সংক্রমণ এখন নিম্নমুখী। কিন্তু যে সব এলাকায় বাইরে থেকে বেশি মানুষজন ভিড় জমাচ্ছেন, সেই সব জায়গায় চিন্তা বাড়াচ্ছে,’’ জানান জ্যোতির্ময়।
কিছুদিন আগেই ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যসোসিয়েশন বা আইএমএ তৃতীয় ঢেউ আসন্ন বলে সতর্ক করেছে। তীর্থ ভ্রমণ বা পর্যটন বন্ধ রাখার আর্জি জানিয়েছে আইএমএ। কেন্দ্রীয় সরকারও রাজ্যগুলিকে চিঠি পাঠিয়ে পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় নিয়ে সতর্ক করেছে। আইএমএ-র রাজ্য শাখার পক্ষ থেকে চিকিৎসক শান্তনু সেনও একই সুরে জানান, ‘‘ ভোট এবং কুম্ভমেলা রাজ্যে এবং দেশে দ্বিতীয় ঢেউ ত্বরাণ্বিত করেছিল। কেন্দ্র সরকারের উচিত উত্তর ভারতের পর্যটন নিয়ে আরও সচেতন হওয়া এবং আগামী তিন মাস কড়াকড়ি বজায় রাখা।’’