যা ভাবা গিয়েছিল সেটাই হল।
সুভাষ চক্রবর্তী কিংবা মদন মিত্র পরিবহণ মন্ত্রী থাকার সময়ে সরকারের অটো-নিয়ন্ত্রণ বৈঠকের ফল যা হত, মঙ্গলবার রাজ্যের নতুন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর অটো-বৈঠকেও তার পুনরাবৃত্তি হল। বৈঠকের শেষে মন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, অটোর রুট নিয়ে কমিটি গড়ছেন তাঁরা। তৈরি হচ্ছে অটো-নীতিও।
সুভাষ চক্রবর্তী, মদন মিত্রেরাও পরিবহণ মন্ত্রীর চেয়ারে বসে কমিটির পর কমিটি গড়েছেন, অটো নীতি তৈরির আশ্বাস দিয়েছেন। কোনও কোনও কমিটির রিপোর্ট জমা পড়েছে, কোনওটির পড়েনি। আর এখনও রাজ্যে কোনও অটো-নীতি তৈরি হয়নি। আর কোনও সরকারই যে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, তা জেনে অটোর দৌরাত্ম্য দিনের পর দিন মাত্রাছাড়া হয়ে গিয়েছে। মন্ত্রীকেও রেয়াত করেননি অটোচালকেরা। তাঁর সঙ্গে তর্ক করে নিরাপত্তা রক্ষীকে ধাক্কা মেরে বুক ফুলিয়ে চলে গিয়েছেন।
শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবার জানিয়েছেন, পুজোর আগেই রাজ্যে নতুন অটো-নীতি তৈরি করা হবে। কিন্তু কী ভাবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ রাজ্যে কত অটো অনুমোদিত এবং কত অটোর অনুমোদন নেই, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও পরিসংখ্যানই যে রাজ্য সরকারের হাতে নেই তা এ দিন কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন শুভেন্দুবাবু।
পরিবহণ দফতর এতদিন বলে আসছিল বৃহত্তর কলকাতায় যে ৫২ হাজার অটো চলে, তার মধ্যে ১২ হাজারের অনুমোদন নেই। শুভেন্দু নিজেই এ দিন জানালেন, ‘‘বৃহত্তর কলকাতায় যত অনুমোদিত অটো আছে, অনুমোদনহীন অটোর সংখ্যা প্রায় তার সমান কিংবা ততোধিক।’’ যদিও কোনও পরিসংখ্যান দেননি মন্ত্রী। অটোর বৈধ ও অবৈধ রুট সংক্রান্ত পরিসংখ্যানও দিতে পারেননি তিনি। তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘সমীক্ষা চলছে।’’
বাম অথবা তৃণমূল, দুই জমানাতেই অটো রুটগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন। প্রশাসনের পক্ষে অটোকে নিয়ন্ত্রণ করা কার্যত অসম্ভব বলে পুলিশ ও পরিবহণ-কর্তাদের অনেকেরই অভিমত। শুভেন্দু অবশ্য অতীতে কী হয়েছে তা নিয়ে ভাবতে চান না। তিনি এ দিন জোর গলায় জানিয়েছেন, ‘‘পুজোর আগেই ‘অটো নীতি’ তৈরি করা হবে। তার পরেই সমস্যা মিটে যাবে।’’
পুজোর বাকি আর মাত্র ১৮ দিন। এখনও সমীক্ষা শেষ হয়নি। অটো-নীতি সংক্রান্ত কমিটি সবে তৈরি হয়েছে। এই ক’দিনে কী ভাবে নীতি তৈরি সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কোনও একটা দুর্ঘটনা বা অভব্যতার পরে অনেক সময় সংশ্লিষ্ট অটোচালক বা মালিককে খুঁজেই পাওয়া যায় না। মন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন, এ বার থেকে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে সমস্ত অটোচালকের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ থাকবে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘অটোকে অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট করে বলা থাকবে। আইন মেনে পদক্ষেপ করতে গেলে প্রথমে বেআইনি অটোকে আইনি করতে হবে।’’
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা, হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অবৈধ রুটগুলিকে চিহ্নিত করতে শুক্রবারের মধ্যে বিভিন্ন আরটিও অফিসারদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী। একটি কমিটি গঠন করে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে। শুভেন্দু বলেন, ‘‘অপ্রয়োজনীয় রুট বন্ধ করে, অনুমোদনহীন প্রয়োজনীয় রুটগুলিকে বৈধতা দেওয়া হতে পারে।’’
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, উৎসবে অটোচালকেরা ইচ্ছা মতো ভাড়া চান। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রীর বক্তব্য ‘‘অটোর ভাড়া সরকার ঠিক করতে পারবে না। তবে উৎসবের সময় অটো বেশি ভাড়া নিতে পারবেন না।’’
দৌরাত্ম্য বন্ধের প্রশ্নে পরিবহণ মন্ত্রী বলেন, ‘‘কোনও ঘটনা ঘটলে কাছাকাছি কোনও পুলিশের কাছে বা পরিবহণ দফতরের কাছেও অভিযোগ করতে পারেন। পুলিশ ও ফরিবহণ দফতর
আইনি ব্যবস্থা নেবে।’’ তিনি জানান, যাত্রীরা যাতে সহজেই অভিযোগ জানাতে পারেন তার জন্য পরিবহণ দফতর একটি টোল ফ্রি ফোন নম্বর এবং হোয়াটস অ্যাপ নম্বর চালু করবে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি আশ্বস্ত করছি, অভিযোগ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত অটোচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ অটো নিয়ন্ত্রণের জন্যে ২০১২ সালে দফতরের তৎকালীন যুগ্মসচিব আশিস ঠাকুরের নেতৃত্বে একটি কমিটি রিপোর্ট পেশ করেছিল। সেই রিপোর্টের কী হল? মন্ত্রী বলেন, ‘‘ওই কমিটির মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই কাজ করবে নতুন কমিটি।’’
মন্ত্রী এ সব ঘোষণার পরেও কতটা ফল হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই গিয়েছে। খুব একটা আশা রাখতে পারছেন না পরিবহণ দফতরেরই একাংশ। দফতরের এক কর্তা বলেন, আইন আগেও ছিল। তার পরেও অটোচালকদের মনোভাব বদলানো যায়নি। এ বারেও ফল কতটা মিলবে তা নির্ভর করছে অটো ইউনিয়নগুলিকে কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে তার উপরে।