School Reopening

School bell: ঘণ্টার কি ছুটি হয়ে গেল, মহা বিভ্রান্তি স্কুলে স্কুলে

কিন্তু কাল, মঙ্গলবার থেকে নতুন পদ্ধতিতে স্কুল চালু হচ্ছে দফায় দফায়। একসঙ্গে পুরো স্কুলের উপরে ঘণ্টার আধিপত্য কার্যত শেষ।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৩৪
Share:

বাজল ছুটির ঘন্টা ছবি গেটি ইমেজেস।

আবহমান কাল ধরে স্কুলে স্কুলে সব থেকে সময়ানুবর্তী এবং সব থেকে নিয়মানুবর্তী এক জনই। ঘণ্টা। স্কুলের শুরুতে ঘণ্টা। ছুটিতে ঘণ্টা। মাঝখানে টিফিনের ঘণ্টা। পিরিয়ডের শেষেও ঢং-ঢং। কিন্তু অতিমারি কি সেই ঘণ্টারই ঘণ্টা বাজিয়ে দিতে চাইছে?

Advertisement

প্রশ্ন উঠছে। কারণ, করোনাকালে একসঙ্গে পুরো স্কুল বসার বদলে দফায় দফায় ক্লাস শুরুর ব্যবস্থায় ঘণ্টা-বিভ্রাটের আশঙ্কা ষোলো আনা। অতিমারির আগে ঘণ্টার শব্দ শোনার জন্য কান পেতে থাকত পড়ুয়ারা। কোনও ঘণ্টায় শেষ হত ক্লাস, কোনও ঘণ্টা বলত, ‘টিফিন বক্স খোলো’। কখনও বা ঢং-ঢং শব্দ জানিয়ে দিত, ছুটি! আজকের মতো।

কিন্তু কাল, মঙ্গলবার থেকে নতুন পদ্ধতিতে স্কুল চালু হচ্ছে দফায় দফায়। একসঙ্গে পুরো স্কুলের উপরে ঘণ্টার আধিপত্য কার্যত শেষ। তাই দেখা দিয়েছে ঘণ্টা-বিভ্রান্তি। কারণ, প্রথম দফায় নবম ও একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে সকাল ১০টায়। এক ঘণ্টা পরে ক্লাস শুরু দশম-দ্বাদশের। ছুটিও হবে আলাদা সময়ে। দুই পর্বের জন্য কী করে আলাদা ভাবে ঘণ্টা বাজানো হবে, তা নিয়েই মহাচিন্তায় পড়ে গিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল-কর্তৃপক্ষ। কেউ কেউ বলছেন, ঘণ্টার দরকারটাই বা কী? শিক্ষিক-শিক্ষিকারা নিজের নিজের ঘড়ি দেখে ক্লাসে গেলে এবং ক্লাস করলেই তো হয়। ঘণ্টার প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন অনেকে বলছে, পুরোপুরি ছেঁটে না-ফেলে স্কুল শুরুর সময়ে এবং ছুটিতে না-হয় ঘণ্টা বাজুক। মাঝখানে টিফিনেও ঘণ্টা বাজানো যেতে পারে এক বার।

Advertisement

বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, প্রতিটি ক্লাস হয় ৪০ মিনিটের। অর্থাৎ নবম-একাদশের ক্লাস ১০টায় শুরু হওয়ার পরে পরের ঘণ্টা বাজবে ১০টা ৪০ মিনিটে। তার পরে নবম ও একাদশের ক্লাস যখন চলাকালীন ১১টায় বাজবে দশম ও দ্বাদশের ক্লাস শুরুর ঘণ্টা। আবার ১১টা ২০ মিনিটে বাজবে নবম-একাদশের দ্বিতীয় পিরিয়ড শেষের ঘণ্টা। কারণ, তাদের দ্বিতীয় ক্লাস শুরু হয় ১০টা ৪০ মিনিটে। নবম-একাদশের দ্বিতীয় পিরিয়ড চলাকালীন ১১টা ৪০ মিনিটে বাজবে দশম-দ্বাদশের দ্বিতীয় পিরিয়ড শেষ হওয়ার ঘণ্টা। মাঝখানে টিফিন পিরিয়ডের ঘণ্টাও বাজবে আলাদা আলাদা ভাবে। সব মিলিয়ে দিনভরই স্কুলে ঘণ্টাধ্বনি শোনা যেতে পারে।

প্রধান শিক্ষকদের একাংশের মতে, দিনভর এ ভাবে ঘণ্টা বাজতে থাকলে কার কখন ক্লাস শুরু হচ্ছে এবং কখন শেষ হচ্ছে কার ক্লাস— বোঝা খুব মুশকিল হবে। বার বার ঘণ্টা বাজলে পড়াশোনায় ছেলেমেয়েদের মনঃসংযোগও বিঘ্নিত হতে পারে। বীরভূমের নলহাটি ব্লকের মিত্রভূম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বরুণ কর্মকার বলেন, “সত্যিই এটা একটা বড় সমস্যা। শিক্ষক-শিক্ষিকারা সবাই ঘড়ি পরে ক্লাস করেন। কিন্তু আচমকা ঘণ্টা বাজলে মনে তো হতেই পারে যে, ক্লাস শেষ হয়ে গেল।”

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার পুলিন্দা গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ফিরোজা বেগম বলেন, “প্রথম দিন থেকেই যে ঘণ্টার সমস্যা হবে, সেটা বুঝতে পারছি। আশঙ্কা হচ্ছে, উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে পড়বে না তো?” কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক রাজা দে বলেন, “আমাদের স্কুলে নবম-একাদশ এবং দশম-দ্বাদশের ক্লাস হবে আলাদা বাড়িতে। তাই আমাদের ঘণ্টা-বিভ্রাটের সমস্যা নেই। কিন্তু বেশির ভাগ স্কুলের ক্ষেত্রেই এটা গুরুতর সমস্যা।”

ঘণ্টা-সমস্যার সুরাহায় নানা জনে নানা মতও দিচ্ছেন। কোনও কোনও শিক্ষকের মতে, ক্লাসের সময়সীমা ৪০ মিনিটের বদলে এক ঘণ্টা করলেই তো সমস্যা মিটে যায়। এক ঘণ্টার ক্লাস হলে আর দুই ক্লাসের মধ্যে ঘণ্টা পড়বে না। কিন্তু কোনও কোনও শিক্ষকের বক্তব্য, সে-ক্ষেত্রে সারা দিনে যত ক্লাস নেওয়া যেত, তার সব ক’টি নেওয়া যাবে
না। কোনও কোনও স্কুল ঠিক করেছে, নবম-একাদশের প্রথম ক্লাস হবে এক ঘণ্টার। তার ফলে নবম-একাদশের দ্বিতীয় ক্লাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গে দশম-দ্বাদশের প্রথম ক্লাস শুরু হবে। তা হলে পরের ক্লাসগুলি ৪০ মিনিটের হলেও ঘণ্টা-সমস্যা থাকবে না।

মোক্ষম সমাধান হিসেবে ঘণ্টারই ঘণ্টা বাজিয়ে দেওয়ার নিদান দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, কখন ক্লাস শেষ হচ্ছে, শিক্ষকেরা ঘড়ি বা মোবাইল দেখে বুঝে নিন। কিন্তু বিরুদ্ধ পক্ষের মত, সব শিক্ষক-শিক্ষিকা তো ঘড়ি না-ও পরতে পারেন। সে-ক্ষেত্রে তাঁদের ঘড়ি পরতে বাধ্য করাতে হবে। নইলে ক্লাসে মোবাইল নিয়ে যেতে হবে। ক্লাস করতে করতে বার বার মোবাইল দেখাটাও সমীচীন নয়।

সমাধানসূত্র হিসেবে উঠে আসছে স্কুলের সময় বদলের কথাও। অনেকে বলছেন, নবম থেকে দ্বাদশের ক্লাস ১১টায় ক্লাস শুরু করলেই হত। তাতে এত সমস্যা হত না। প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তথা শিক্ষক-নেতা নবকুমার কর্মকার বলেন, “শিক্ষা দফতর যখন এই চারটি ক্লাস চালু করার নির্দেশ দিল, তখনই তাদের এই সমস্যার কথা মাথায় আসা উচিত ছিল।”

চুপ করে নেই শিক্ষাকর্মী শিবিরও। কারণ, ঘণ্টা বাজানোর দায়িত্ব তাদেরই। অশিক্ষক কর্মীদের অনেকে তাই বলছেন, নতুন রুটিন যা হয়েছে, তাতে ঘণ্টা বাজানোর জন্য সারা দিন ঘড়িমুখো হয়ে বসে থাকতে হবে। ভুলচুক হলে জুটতে পারে বকুনিও।

নতুন পদ্ধতিতে স্কুল চালু নিয়ে উদ্দীপনা ও উৎকণ্ঠা সবই আছে। তার সঙ্গে নতুন জুড়েছে এই ঘণ্টার ঘনঘটা! ঘণ্টার কি তা হলে ছুটি হয়ে যাচ্ছে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement