Amit Shah

Amit Shah: এক বছর পরে কেন এলাম, নিজেই প্রশ্ন তুললেন শাহ, সত্যিই তো, কেন এলেন!

এক বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে বাংলায় এসে ঠিক যে ভাষায় বক্তৃতা করে গিয়েছিলেন তারই পুনরাবৃত্তি শোনা গেল বৃহস্পতিবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২২ ১৯:২৭
Share:

বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে অমিত শাহ। নিজস্ব চিত্র

অমিত শাহ রাজ্যে এলেন। বক্তৃতা করলেন। কিন্তু কর্মীদের মন জয় করতে পারলেন কি? দু’দিনের সফরের একমাত্র জনসভার শেষে এমন প্রশ্নই তৈরি হল। শিলিগুড়িতে দলীয় সভায় মিনিট পনেরোর বক্তৃতায় বোঝাই গেল না তিনি কোন সময়ে রাজ্যে এসেছেন! এক বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনের সময় শেষ বার বাংলায় এসে ঠিক যেমন ভাষায় বক্তৃতা করে গিয়েছিলেন তারই পুনরাবৃত্তি শোনা গেল বৃহস্পতিবার। কেন তিনি এক বছর পর এলেন, সে প্রশ্ন নিজেই তুললেন বক্তৃতার শুরুতে। উত্তর দেবেন বলেও জানালেন। কিন্তু আচমকা শেষ হয়ে যাওয়া বক্তৃতায় সে ভাবে উত্তর আর পাওয়া গেল না।

Advertisement

শেষ বার বাংলায় অমিত এসেছিলেন ২০২১-এর এপ্রিলে। তখনও দুই দফার ভোটগ্রহণ বাকি। করোনা পরিস্থিতির কারণে শেষ দু’দফার আগে বড় জনসভা বাতিল করে বিজেপি। এর পরে রাজ্য বিজেপি ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগে অনেক দরবার করেছে তাঁর কাছে। ২০২১-এর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা এক বার রাজ্যে এলেও অমিত আসেননি একটি বারও। গত এক বছরে অন্দরের ভাঙনে রাজ্য বিজেপি বার বার বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কিন্তু এক বছর আগেও বাংলাকে নিজের ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলা শাহের পা পড়েনি রাজ্যে।

বক্তৃতা শুরু করে স্লোগান পর্ব মিটিয়েই সে কথা নিজেই তুললেন অমিত। বললেন, ‘‘এক বছর আমি বাংলার মাটিতে পা রাখিনি। কেন রাখিনি সেটা বলব।’’ এর পরে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকরের প্রতিশ্রুতি থেকে রাজ্যের সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার উল্লেখ শেষে যখন সবাই অপেক্ষায় এই বুঝি তিনি এক বছর পরে কেন এলেন সে জবাব দেবেন, তখনই অমিত জানিয়ে দিলেন বক্তৃতা শেষ। সেই পুরনো পদ্ধতিতে বক্তৃতা শেষের ‘ভারতমাতা কী জয়’ ধ্বনি শোনালেন।

Advertisement

অমিতের বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরে কর্মীদের মধ্যে তো বটেই সংবাদমাধ্যমের কাছেও রয়ে গেল প্রশ্ন, এক বছর পরে কেন এলেন সে প্রশ্নের জবাব দিতে কি ভুলেই গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? না কি ওইটা জবাব! ওই যে তৃণমূল সরকারের উদ্দেশে বললেন, ‘‘আমরা এক বছর সুযোগ দিয়েছিলাম। শুধরে যাবে ভেবেছিলাম। কিন্তু শোধরায়নি। আমি আজ বলতে এসেছি, বড় বড় শক্তিকেও জনতা বদলে দিতে পারে। এটাই গণতন্ত্র।’’ একই সঙ্গে বলেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, তোলবাজির বিরুদ্ধে, রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে বিজেপি।

এই কথাগুলোও তো এক বছর আগেও শোনা। সেই পুরনো সুরে ‘উখড় কর ফেক দেঙ্গে’ শোনালেন অমিত। বক্তৃতার শুরুতে শিলিগুড়ির জমায়েতকে সেই ভোটের আগের মতো করে বললেন, ‘‘এমন জোরে জয় শ্রীরাম বলতে হবে যেন কলকাতায় দিদির কাছে আওয়াজ পৌঁছে যায়।’’ সেই এক ভাবে ‘গুরুদেব টেগোর’ থেকে ‘বঙ্কিমবাবু’কে স্মরণ করলেন। যা শুনে অনেকের প্রশ্ন, অমিত কি তবে টাইম মেশিনে চেপে ২০২১ সালে পৌঁছে গিয়েছিলেন? তা নিশ্চিত ভাবেই নয়। কারণ, তাঁর সেই পুরনো স্লোগান ‘ইস বার দোশো পার’ শোনা যায়নি বৃহস্পতিবার। বরং বিধানসভা নির্বাচনে দু’শো আসন না পাওয়ার পরে বিজেপির পুরনো যুক্তি ফের নতুন করে শুনিয়েছেন অমিত। তিন থেকে ৭৭-এ পৌঁছনো বড় ব্যাপার বলে দাবি করেন। তবে মুকুল রায়-সহ পাঁচ বিধায়কের বিজেপি ত্যাগ এবং উপনির্বাচনে হেরে সেই ৭৭ যে এখন ৭০ হয়ে গিয়েছে সে উল্লেখ করেননি শাহ।

বৃহস্পতিবার নতুন করে সিএএ নিয়ে সরব হয়েছেন অমিত। জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই সিএএ কার্যকর হবে। কিন্তু এটাও কি নতুন কথা? ২০২০ সালেও তো এমনটাই বলেছিলেন শাহ। ভোটমুখী বাংলায় তখন মতুয়া ভোট নিয়ে চিন্তিত বিজেপি। ২০ ডিসেম্বর বোলপুরে রোড শো শেষে সাংবাদিক বৈঠকে ক্ষোভ সামাল দিতে শাহ বলেছিলেন, ‘‘আপাতত সিএএ বাংলায় কার্যকর হচ্ছে না। আগে টিকাকরণের প্রক্রিয়া শুরু হোক, কোভিড শৃঙ্খলা ভাঙুক। তার পর এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।’‌’ তবে নতুন কী বললেন অমিত? নতুন বলার মতো কিছুই কি নেই? শাহি সফরের প্রথম দিনের শেষে রয়ে গেল প্রশ্ন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement