প্রতীকী চিত্র।
প্রথমে ছিল আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ, পরের দিনই তা বদলে যায় ধর্ষণ করে খুনে। নদিয়ার কিশোরীর মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কিন্তু ধর্ষণ বা খুনের কথা নেই।
বুধবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশের হাতে সেই রিপোর্ট এসে পৌঁছয়। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে এক বার ময়নাতদন্ত হয়েছিল। এর পর ধর্ষণ করে খুনে অভিযোগ দায়ের হওয়ায় পরের দিন ফের শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করানো হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, দু’টি রিপোর্টের একটিতেও ধর্ষণ বা খুনের কথা বলা হয়নি। ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য মৃত নাবালিকার ভিসেরাও সংরক্ষণ করা হয়েছে। রাতে রানাঘাট পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রূপান্তর সেনগুপ্ত বলেন, “ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। তদন্ত চলছে।”
মৃতার বাবার দায়ের করা অভিযোগ বদল করানোর ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল বিজেপি। স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী মাঝরাত পর্যন্ত থানায় থেকে বিষয়টি তদারক করেন। পেশায় চিকিৎসক মুকুটমণি দাবি করেছিলেন, মৃতদেহের গলা পর্যন্ত দেখে তাঁর মনে হয়নি এটা আত্মহত্যার ঘটনা। এ দিন তাঁর প্রতিক্রিয়া, “সেই সময়ে দেহ দেখে আমার তো তাই মনে হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অন্য কিছু এলে তো আইন আইনের পথেই চলবে।”
এই চাপানউতোরের মধ্যেই ফোনে কথোপকথনের দু’টি অডিয়ো ক্লিপ (কোনওটিরই সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) সমাজমাধ্যমে চলে আসে। তার একটিতে এক জনকে বলতে শোনা যায়, তিনি যত দূর জেনেছেন তাতে ব্যাপারটা ‘সুইসাইড’ এবং ‘এটা কিন্তু ব্যুমেরাং হবে’। আর এক অডিয়ো ক্লিপে একটি কণ্ঠকে বলতে শোনা যায়, ‘এখানে পলিটিক্যাল মাইলেজ নিতে হবে’, ‘ইস্যু বানাতে হবে’ এবং ‘কমপ্লেন চেঞ্জ করাতেই হবে’। পরে বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক আশীষবরণ ওরফে বিপুল উকিল স্বীকার করে নেন যে কণ্ঠটি তাঁরই। এ দিন চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চড়কে পিসতুতো দিদির বাড়িতে যায় কিশোরী। ১৪ এপ্রিল রাতে সেখানেই তার ঝুলন্ত দেহ মেলে। স্থানীয়
বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, মেয়েটির গা থেকে মদের গন্ধ পেয়ে চড়থাপ্পড় মেরে বাড়িতে ঢুকিয়ে গ্রিলে তালা মেরে দিয়েছিলেন তার পিসি। পরে একটি বন্ধ ঘরে তার দেহ মেলে। মৃতার
বাবা আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করলে সেই পিসি, তাঁর জামাই ও এক স্কুলশিক্ষক আত্মীয়কে
গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন মৃতার
বাবা অভিযোগ বদল করলে ধর্ষণ এবং খুনের মামলা রুজু হয়।
যে ক্লিপের কণ্ঠ তাঁর বলে বিপুল উকিল দাবি করেছিলেন, তাতে ‘মুকুট’ এবং ‘বাবুদা’ বলে দু’জনের নাম শোনা গিয়েছিল। বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের ডাকনাম ‘বাবু’। তিনি স্বীকারও করেছিলেন যে ওই ক্লিপে তাঁর কথাই বলা হয়েছে। এ দিন তিনি বলেন, “পুলিশ সে দিন তড়িঘড়ি অভিযোগ নিয়ে মামলা রুজু করায় আমাদের সন্দেহ হয়েছিল।’’ তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী রত্না ঘোষ পাল্টা বলেন, “বিজেপি সব জায়গায় নোংরা রাজনীতির খেলা খেলতে চাইছে। তদন্তে ওদের চক্রান্ত উঠে আসবে।”
এ দিন ফোনে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের কথা জেনে মেয়ের বাবা বলেন, “তা হলে আমার মেয়ে কেন আত্মহত্যা করল? প্রয়োজনে সিবিআই তদন্ত হোক।” কেন তিনি অভিযোগ বদল করেছিলেন? তিনি বলেন, “কয়েকটা কারণে আমার মনে হয়েছিল, এটা আত্মহত্যা হতে পারে না। তাই দ্বিতীয় অভিযোগটা করেছিলাম।”
মেয়েটির পিসতুতো জামাইবাবুর (ধৃত) এক আত্মীয় বলেন, “আমরা নিশ্চিত ছিলাম, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এটাই আসবে।”