অল ইন্ডিয়া মজলিশে ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)-কে অত গুরুত্ব দিতে হবে না। বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে এমনটাই বললেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুর্শিদাবাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, বিধায়ক ও সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে বসেন তিনি। সেখানেই সমস্ত বিধায়কদের কাছে জেলা সংগঠনের হালহকিকত জানতে চান মমতা। জেলা সংক্রান্ত খবরাখবর নেওয়ার পাশাপাশি দলকে ‘ভোকাল টনিক’ও দেন মুখ্যমন্ত্রী।
কংগ্রেস, বামফ্রন্ট, বিজেপি-র পাশাপাশি এআইএমআইএম প্রসঙ্গেও দু’চার কথা বলেন। সূত্রের খবর, বৈঠকে তিনি এআইএমআইএম নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা না করার কথা বলেছেন নেতাদের। জানিয়েছেন, ভোটে মুর্শিদাবাদে কোনও দাগ কাটতে পারবে না এআইএমআইএম।
পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া বিহারের কিসানগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে এআইএমআইএম প্রার্থী কামরুল হোদা জয় পেলে প্রথম বার বাংলার রাজনীতিতে পা রাখার ইচ্ছে প্রকাশ করেন দলের প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তার পর গত বছর কোচবিহার সফরে গিয়ে এক দলীয় সভায় মমতা আক্রমণ করেন এআইএমআইএম-কে। সুর চড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘হায়দরাবাদের একটা পার্টি আছে। যারা বিজেপির বি-টিম। তারা বাংলায় আসছে ভোট কেটে বিজেপিকে জেতাতে। ওদের বিশ্বাস করবেন না।’’
মমতার এমন মন্তব্যের পর জবাব দিয়েছিলেন ওয়াইসি-ও। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বাংলায় প্রার্থী দেয়নি এআইএমআইএম। তা হলে কী ভাবে বিজেপি এখান থেকে ১৮টি আসন জিতল? মমতাকে বিঁধে ওয়াইসি আরও বলেছিলেন, তা হলে কী ধরে নিতে হবে, তৃণমূল বিজেপির বি-টিম? এমন বাগ্যুদ্ধের পর পরিস্থিতি খানিকটা শান্ত হলেও বিহার নির্বাচনে পাঁচটি আসন জয়ের পর এআইএমআইএম নেতা ঘোষণা করেন, এ বার বাংলার পালা। একুশের ভোটে প্রার্থী দেবেন তাঁরা।
ঘটনাচক্রে এ দিন যখন তৃণমূল ভবনে বসে মুর্শিদাবাদ জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন মমতা, তখনই কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে ফুরফুরা শরিফের এক পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী তাঁর নিজের দল ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট’-এর নাম ঘোষণা করেন। এই দলের সঙ্গেই বাংলার ভোটে জোটের ঘোষণা করে দিয়েছেন এআইএমআইএম প্রধান ওয়াইসি। গত ৩ জানুয়ারি ফুরফরা শরিফেই এসে এআইএমআইএম প্রধান আব্বাসের উপর তাঁর আস্থাজ্ঞাপন করে জোটের কথা ঘোষণা করে গিয়েছেন।
আর এই জোটের লক্ষ্য যে রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট, সে ব্যাপারে নিশ্চিত তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। স্বাভাবিক ভাবেই এআইএমআইএম ও আব্বাসের জোট নিয়ে চিন্তায় শাসকদলের মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটি। সেই দুশ্চিন্তা দূর করতেই এ দিন মমতা দলকে আশ্বস্ত করেছেন। পাশাপাশি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলায় বিজেপি সব আসনেই তৃতীয় হবে বলেও বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন বলেই দলীয় সূত্রে খবর।
জেলা সংগঠন পরিচালনার জন্য একটি স্টিয়ারিং কমিটির ঘোষণা করেছেন মমতা। জেলার দুই সাংসদ আবু তাহের খান, খলিলুর রহমান সহ মন্ত্রী জাকির হোসনে, বিধায়ক সুব্রত সাহা, মৈনুল হাসান ও অশোক দাস সেই স্টিয়ারিং কমিটিতে রয়েছেন। এই কমিটি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। মুর্শিদাবাদ জেলার ২২টি বিধানসভা আসনেই জয় ছিনিয়ে আনতে জেলা কমিটির সর্বস্তরের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিনের বৈঠকে যোগ দিতে তৃণমূল ভবনে না এলেও, ভার্চুয়ালি অংশ নেন জেলা সভাধিপতি মোশারফ হোসেন। মুর্শিদাবাদ জেলা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব একটু বেশিই চিন্তিত। কারণ, ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের ২৩ জুলাই পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ জেলার পর্যবেক্ষক ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। যদিও, এ দিনের বৈঠকে শুভেন্দু প্রসঙ্গ ওঠেনি বলেই জানা গিয়েছে।