প্রতীকী ছবি।
দলীয় স্বচ্ছতা বা উজ্জ্বল ভাবমূর্তির তাগিদে কেউ নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে ঠিকাদারিকে দূরে রাখতে চাইতেই পারেন। তবে নির্বাচনী নিয়মবিধিতে ঠিকাদারির ব্যবসার সঙ্গে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনও রকম বিরোধ যে নেই, রাজ্য নির্বাচন কমিশন সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে। তাদের নিয়মবিধি জানাচ্ছে, ভোটে দাঁড়ানোর জায়গা আর ঠিকাদারির ক্ষেত্র আলাদা হলে বিরোধের কোনও অবকাশ নেই। এমনকি, কোনও এলাকায় ঠিকাদারির কাজ ও সময় শেষ হয়ে গিয়ে থাকলে সেখানে প্রার্থী হতেও বাধা নেই ঠিকাদারের।
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিকাদারিতে যুক্ত দলীয় নেতাদের সরাসরি পদ ছাড়তে বলেছেন। এই অবস্থায় দলের অন্দরে গুঞ্জন, আগামী পঞ্চায়েত ভোটে দলীয় প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঠিকাদারির প্রশ্নটি বড় ভূমিকা নিতে পারে।
তবে ঠিকাদারির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকলেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে সার্বিক ভাবে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। শুধু পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে কোনও ঠিকাদার যদি জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতের কোনও প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তা হলে তিনি সেই এলাকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের বক্তব্য, অভিষেক তাঁর দলের অবস্থান জানিয়েছেন। কোন দল কোন পেশার প্রার্থীকে টিকিট দেবে কিংবা কোন পেশার প্রার্থীকে দেবে না, সেটা সংশ্লিষ্ট দলের নিজস্ব ব্যাপার।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোন পেশার ব্যক্তিরা প্রার্থী হতে পারবেন, সেই ব্যাপারে সম্প্রতি একটি নির্দেশিকা জেলাশাসকদের পাঠিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তাতেই ওই নিয়মের কথা উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, সরাসরি পঞ্চায়েতের কাজ না-করলে রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের ঠিকাদারদের নির্বাচনে দাঁড়াতে বাধা নেই। এমনকি, জেলা পরিষদ, ব্লক বা পঞ্চায়েতের বরাতপ্রাপ্ত কাজ শেষে ‘কন্ট্রাক্ট’ বা ঠিকার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও সেই ঠিকাদার ভোটে দাঁড়াতে পারবেন। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, ভোটপ্রার্থীর সঙ্গে প্রশাসনের সরাসরি কোনও রকম লেনদেন যাতে না-থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে এবং স্বচ্ছতা আনতেই এই নিয়মবিধি।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, অভিষেক দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তুলে ধরতে ঠিকাদারির সঙ্গে দলের নেতাদের দূরত্ব তৈরি করতে চান। কারণ, সম্প্রতি পঞ্চায়েত স্তরের যে-সব তৃণমূল নেতার প্রাসাদোপম বাড়ি এবং প্রচুর সম্পত্তির কথা সামনে এসেছে, তাঁদের অনেকেই ঠিকাদারির সঙ্গে যুক্ত। একই ব্যক্তি পঞ্চায়েতে বা পঞ্চায়েত সমিতির পদাধিকারী হয়ে সেই জায়গাতেই ঠিকাদারি করছেন, এমন দৃষ্টান্ত বিরল নয়। কেউ কেউ বলছেন, অনেকে নিকটাত্মীয়ের নামে বকলমে ঠিকাদারির ব্যবসা চালান। সে-ক্ষেত্রে দল বা কমিশনের নির্দেশ কি তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতা বিস্তারে অন্তরায় হতে পারে, উঠছে প্রশ্ন।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।