সত্যজিৎ খুনে অনেক মিল দুলাল হত্যার

গত শনিবার গভীর রাতে তৃণমূল বিধায়কের ছায়াসঙ্গী মিলন সাহা যে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, তাতে বলা হয়েছে: সুজিত মণ্ডল, কার্তিক মণ্ডল ও কালিদাস মণ্ডল নামে তিন জন ছুটে এসে সত্যজিৎকে জাপটে ধরে চেঁচিয়ে বলেছিল ‘গুলি কর’ আর অভিজিৎ  পুণ্ডারী খুব কাছ থেকে গুলি করেছিল তাঁকে। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:২৯
Share:

নিহত বিধায়কের বাড়ির সামনে পাহারা। নিজস্ব চিত্র

সপ্তাহ ঘুরতে চলল। কিন্তু বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনে আততায়ী ধরা পড়ল না। এমনকি কারা কী ভাবে ওই ঘটনা ঘটাল, তা-ও পরিষ্কার হয়নি।

Advertisement

গত শনিবার গভীর রাতে তৃণমূল বিধায়কের ছায়াসঙ্গী মিলন সাহা যে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, তাতে বলা হয়েছে: সুজিত মণ্ডল, কার্তিক মণ্ডল ও কালিদাস মণ্ডল নামে তিন জন ছুটে এসে সত্যজিৎকে জাপটে ধরে চেঁচিয়ে বলেছিল ‘গুলি কর’ আর অভিজিৎ পুণ্ডারী খুব কাছ থেকে গুলি করেছিল তাঁকে।

অথচ তদন্তকারীরা অফিসারেরা দাবি করছেন, অভিজিৎ আর সুজিত অনেক ক্ষণ ধরেই বিধায়কের পিছনে দাঁড়িয়েছিল। বিধায়ক এক বার মাথা ঘুরিয়ে তাদের দেখেওছিলেন। সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠান চলাকালীন ঘটনাটি ঘটেছিল। বিধায়কের সামনের সারিতে বসে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদেরও অনেকে জানিয়েছেন, পটকা ফাটার মতো একটা শব্দ শুনে পিছনে ঘুরে তাঁরা দেখেন, সত্যজিৎ মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়েছেন। কিন্তু কয়েক জনের ছুটে আসা, ধস্তাধস্তি বা ‘গুলি কর’ বলে চিৎকারের কথা তাঁরা প্রায় কেউই পুলিশকে বলেননি। ফলে, অভিযোগ আর তদন্তের মধ্যে ফারাক থেকে যাচ্ছে বলে জেলা পুলিশেরই একটি অংশের দাবি।

Advertisement

এই খুনের সঙ্গে নানা দিক থেকে দুলাল বিশ্বাস খুনেরও মিল খুঁজে পাচ্ছেন কৃষ্ণগঞ্জের অনেকে। ২০১৭ সালে এপ্রিলে খুন হওয়া এই হাঁসখালি ব্লকেরই তৃণমূল দুলাল যখন খুন হন, তখন তাঁর দাপট চরমে। এলাকায় তিনিই কার্যত একচ্ছত্র অধিপতি। ঠিক এখনকার সত্যজিৎ বিশ্বাসের মতোই। এবং দু’জনই ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের মধ্যে। তাই সত্যজিতের মতো দুলালের ক্ষেত্রেও কেউ ভাবতে পারেনি যে তিনি খুন হতে পারেন। অথচ তাঁকেও খুন করা হয়েছিল নিজের ডেরায়, দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে। সেই সময়ে তাঁর আশেপাশে ছিলেন না বেশির ভাগ সময়ে ঘিরে থাকা ছায়াসঙ্গীরা বা তাঁর নিজস্ব নিরাপত্তা বলয়ের প্রায় কেউই। ঠিক যেমনটা ঘটেছে সত্যজিতের ক্ষেত্রেও।

শুধু তা-ই নয়। একটা মিল দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছেন জেলা পুলিশের কর্তারা। সেটা হল, দু’জনের ক্ষেত্রেই ঘটনার সময়ে নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন না। দুই ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট কনস্টেবল নিয়মমাফিক দফতর থেকে ছুটি না নিয়ে নেতার কাছ থেকেই ছুটি ‘ম্যানেজ’ করেছিলেন। দুলাল খুন হওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছিল, সে দিনই যে নিরাপত্তারক্ষী থাকবে না সেটা খুব ঘনিষ্ঠ ছাড়া কারও পক্ষে জানা সম্ভব কী? সত্যজিৎ খুন হওয়ার পরেও সেই একই প্রশ্ন উঠেছে। তদন্তকারীরা সেই দিকটিও খুঁটিয়ে দেখছেন।

মিল রয়েছে জনপ্রিয় নেতাকে খুন করার পরে আততায়ীদের বিনা বাধায় চলে যাওয়াতেও। দুলালকে গুলি করে মারার পরে কেউ তাদের পিছু ধাওয়া করেনি, চিনতেও পারেনি। সত্যজিৎ গুলি খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ার পরে সকলে যখন তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত, সেই সুযোগেই আততায়ী পালায় বলে দাবি করেছেন ওই সময়ে কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক জন। কয়েক জন তাঁদের তাড়া করেছিলেন বলে একটি মহল থেকে দাবি করা হলেও তদন্তকারীরা তার বিশেষ ভিত্তি খুঁজে পাননি। এমন কাউকে পাওয়াও যায়নি যিনি নিজে তাড়া করেছেন বা করতে দেখেছেন। এবং দুই ক্ষেত্রেই ঘটনাস্থলের কাছে আততায়ী আগ্নেয়াস্ত্র ফেলে গিয়েছে।

আরও যে ব্যাপারটা পুলিশকে আশ্চর্য করেছে তা হল দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা নিজের এলাকায় খুন হলেন। কিন্তু সামান্য ক্ষোভ দেখানো বা অভিযুক্তের বাড়িতে চড়াও হওয়ার চেয়ে বেশি কোনও প্রতিক্রিয়া হল না এলাকায়, বিশেষ করে অনুগামীদের মধ্যে। দুলাল বা সত্যজিৎ, কারও ক্ষেত্রেই নয়। দু’জনের ক্ষেত্রেই সেই রাতেই নির্দিষ্ট করে কয়েক জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আর পুলিশ বা সিআইডি-র তদন্ত প্রায় সেই পথেই এগিয়েছে। যা নিয়ে বিজেপির কটাক্ষ, খুনের ঘন্টাখানেকের মধ্যেই যদি পরিবারের লোকজন বা ঘনিষ্ঠেরা জেনে যান কে বা কারা খুনের সঙ্গে জড়িত, তা হলে আর তদন্তকারী সংস্থার কী প্রয়োজন? কাছের কেউ জড়িত না থাকলে এ ভাবে সিংহের গুহায় ঢুকে সিংহ বধ করে যাওয়াও সম্ভব নয় বলেও তাদের দাবি।

দুলাল খুনের ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছিল, সত্যিই কি প্রকৃত অপরাধী বা ষড়যন্ত্রী শাস্তি পাচ্ছে?

না কি তাঁকে সরাতে পারলে যাদের লাভ, তারা আড়ালেই থেকে গিয়েছে। সত্যজিৎ খুনের পরেও কিন্তু সেই সন্দেহটা দানা বাঁধছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement