—প্রতীকী ছবি।
মনোনয়ন দিতে না পারলে তাঁরাই সাহায্য করবেন, জানিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাস্তবে দেখা গেল, রাজ্যের কয়েকটি জায়গা নিজেদের পুরনো ‘চরিত্রেই’ রয়ে গিয়েছে। সেখানে বহু ক্ষেত্রেই বিরোধীদের দিক থেকে কোনও মনোনয়ন নেই। ফলে, এখনই সরকারি ভাবে আসনগুলিতে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে বলা না গেলেও, সব ঠিক থাকলে আসনগুলি ভোট ছাড়াই শাসক দলের ঝুলিতে আসতে চলেছে।
যে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় বৃহস্পতিবার গোলমাল হয়েছে, সেই ব্লকে আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২১৭টি আসনের মধ্যে ২১৪টিতে তৃণমূল ছাড়া কেউ প্রার্থী দিতে পারেনি। তিনটি আসনে নির্দলরা প্রার্থী হয়েছেন। এই ব্লকেরই পঞ্চায়েত সমিতির ২৮টি আসনে বিরোধীদের কোনও প্রার্থী নেই। খুব পিছিয়ে নেই কেশপুরও। গত ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকায় এসে অভিষেক আশ্বাসবাণী শুনিয়েছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে, কেশপুর ব্লকের ৫১ শতাংশ আসনে কোনও বিরোধী প্রার্থী নেই। গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩০৫টি আসনের মধ্যে ১৬৩টি আসনে শুধু তৃণমূলই মনোনয়ন দিয়েছে।
একদা আসাদুল্লা বিশ্বাসের খাসতালুক বলে পরিচিত মালদহের কালিয়াচকের মোজমপুরেও এক ছবি। সেই গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০টি আসনে ও সেখানকার তিনটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বিরোধীদের প্রার্থী নেই। সব আসনে শুধুই তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছে। তিহাড় জেলে যাওয়ার আগে নিজের জেলা বীরভূমের সঙ্গে পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট, কেতুগ্রামেরও দায়িত্বে ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। এ বারে পঞ্চায়েতস্তরে মঙ্গলকোটে ১৪৮টি ও কেতুগ্রাম-১ ব্লকে ১৪১টি আসনে শুধু তৃণমূলই মনোনয়ন দিয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতিরও ৪৪টি আসনে বিরোধীদের কোনও প্রার্থী নেই ওই দু’টি ব্লকে।
যদিও ব্যতিক্রম অনুব্রতের নিজের জেলা বীরভূম। ২০১৮ সালে সেখানে বিরোধীহীন জেলা পরিষদ গড়েছিল শাসক দল। এ বার ছবিটা অনেকটাই আলাদা। ৫২টি জেলা পরিষদ আসনের জন্য তৃণমূল ও বিজেপির তরফে ৫৯টি করে মনোনয়ন জমা পড়েছে। সিপিএম ৪৬টি ও কংগ্রেস ১৬টি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছে।
তবে বিরোধীহীন আসনও আছে বেশ কয়েকটি জেলায়। যেমন, মুর্শিদাবাদ জেলার সেকেন্দ্রা ও গিরিয়া পঞ্চায়েতে বহু আসনে বিরোধী প্রার্থী নেই। বাঁকুড়ার পাত্রসায়র, জয়পুর ও কোতুলপুর পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনেও বিরোধী নেই। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যে ইন্দাস ব্লকে গিয়ে শাসক দলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, সেখানে সিপিএমের প্রার্থী থাকলেও বিজেপি কিন্তু শূন্য। উত্তর ২৪ পরগনার শাসন গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি মিলিয়ে ৩২টি আসনে কোনও বিরোধী প্রার্থী নেই। হাওড়ার আমতা ১ ব্লকের চন্দ্রপুর পঞ্চায়েত, হুগলির জাঙ্গিপাড়া ব্লকের ১০টির মধ্যে ৭টি পঞ্চায়েতেও একই অবস্থা। কোচবিহারে ৫০টিরও বেশি আসনে বিরোধী প্রার্থী নেই বলে দাবি তৃণমূলের।
যেখানে প্রার্থী রয়েছে, তার অনেক জায়গায় বিরোধীরা ভয় পাচ্ছেন, এ বারে প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হবে। বাম আমলের স্মৃতি উস্কে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থীর বাড়িতেই এল সাদা থান ও মালা। অভিযোগ তৃণমূলের দিকে। পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার শশীপুরেও নানা ভাবে মনোনয়ন প্রত্যাহারে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি সিপিএমের।
বীরভূমেরই সিপিএম জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষের দাবি, ‘‘শাসক দলের দুষ্কৃতীরা বৃহস্পতিবার রাত থেকেই এই জন্য মোটরবাইক নিয়ে প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধমকাতে, চমকাতে শুরু করেছে।’’ তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির মুখপাত্র বিকাশ রায়চৌধুরী পাল্টা বলেন, ‘‘আমাদের এখনও অত করুণ দশা হয়নি যে, বিরোধী প্রার্থীদের পিছনে ছোটাছুটি করতে হবে।’’
নদিয়ার পলাশিপাড়া থানার গোপীনাথপুর পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী রূপালি বিবি থানা ও ব্লক অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছেন, ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে তাঁকে হুমকি চিঠি দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের তেহট্ট ২ ব্লক সভাপতি দেবাশিস বিশ্বাসের দাবি, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। সিপিএম ভোটে ফায়দা তুলতে নিজেরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।’’