এক টিকিটেই গঙ্গাসাগর মেলায় পৌঁছে যাওয়া যাবে। ফাইল চিত্র
সব তীর্থ বার বার, গঙ্গাসাগর এক বার! এমন প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে আবহমানে। এ বার সেই প্রবাদকে একটু পাল্টে দিয়ে গঙ্গাসাগর মেলার সময় সাগরদ্বীপে যাওয়ার পথ সুগম করতে চলেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। এ বার ‘এক টিকিটেই গঙ্গাসাগর’ মেলায় যাওয়ার ব্যবস্থা করতে চলেছে পরিবহণ দফতর। একটি টিকিটেই কলকাতার ধর্মতলা থেকে পৌঁছে যাওয়া যাবে সাগর দ্বীপে কপিলমুনির আশ্রম প্রাঙ্গণে। ওই টিকিটেই চড়া যাবে বাসে, ফেরিতেও। এই সফরের জন্য পুণ্যার্থীদের বাস কাউন্টার বা ফেরিঘাটে লাইন দিয়ে বার বার টিকিট কাটতে হবে না। ঘরে বসে অনলাইনেই মিলবে সেই টিকিট। করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এমন অভিনব আয়োজন করা হয়েছে বলেই পরিবহণ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। সূত্রের খবর, সাগরে তীর্থযাত্রীদের জন্য অনলাইনে অভিন্ন টিকিট ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম বার কার্যকর হতে চলেছে। সম্প্রতি নবান্নে এই প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পরিবহণ দফতর। আপাতত এই প্রকল্প মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়। তিনি অনুমোদন দিলেই এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করা হবে। মকর সংক্রান্তির পুণ্যলগ্নে লক্ষ লক্ষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ পুণ্যস্নান করতে আসেন এখানে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের ভোগান্তি কমানোও এই পরিষেবার লক্ষ্য বলে জানাচ্ছেন পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক।
প্রতি বছর গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান করতে ধর্মতলা থেকে বাসে নামখানা কিংবা কাকদ্বীপের হারউড পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কপথে যেতে হয় পুন্যার্থীদের। তার পর সেখান থেকে লট ৮ বা কচুবেড়িয়া পর্যন্ত ফেরিতে যেতে হয়। সেখানেও টিকিট কাটার জন্য বিরাট লাইন পড়ে। সাগরদ্বীপে কচুবেড়িয়া পৌঁছে আবার বাস ধরতে হয় গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণে যাওয়ার জন্য। ফেরার সময়ও একই ভাবে বার বার লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হয়। পুণ্যার্থীদের এই সমস্যা দূর করতেই অনলাইনে বাস ও ফেরি সার্ভিসের টিকিট একযোগে কাটার সুবিধা এ বছর থেকে চালু করা হবে। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘করোনা সংক্রমণের কারণেই অনলাইনে একটি টিকিটে যাত্রার সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যাত্রীদের আর লাইন দিতে হবে না। ফলে কোভিড পরিস্থিতিতে ভিড় এড়ানো যাবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সাগরে যাতায়াত করা যাবে।’’ পরিবহণ দফতরের ওয়েবসাইট ছাড়াও গঙ্গাসাগর যাত্রার জন্য পৃথক ওয়েবসাইট তৈরি করা হবে। ভিন্ রাজ্যের যাত্রীদের জন্য ইংরেজি ও হিন্দিতে এই পরিষেবা বিষয়ে প্রচার চালাবে দফতর।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, প্রাক-করোনা পর্বে গঙ্গাসাগরে কয়েক লক্ষ পুণ্যার্থী এসেছিলেন। গত বছর অবশ্য করোনা সংক্রমণের কারণে কড়াকড়ি ছিল প্রশাসনের। এ বারও সেই বিধি-নিষেধ বহাল থাকবে বলেই প্রশাসন সূত্রে খবর। মেলার প্রস্ততি হিসেবে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী ৯ থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে গঙ্গাসাগর মেলা। তার অনেক আগেই 'এক টিকিটে গঙ্গাসাগর' পরিষেবার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে ফেলতে বদ্ধপরিকর পরিবহণ দফতর।