রাজাবাজার ট্রাম ডিপোতে হবে বস্ত্র হাব। ফাইল চিত্র।
কলকাতার তিনটি ট্রাম ডিপোতে হবে কুটির শিল্পের হাব। কলকাতা শহরে কুটির শিল্পের হাব তৈরি করতে অনেক দিন ধরেই উপযুক্ত জমির সন্ধান করছিল রাজ্য সরকার। আপাতত সেই বিষয়ে তিনটি ট্রাম ডিপোকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তবে এই তিনটি ডিপোতে হাব গড়ার পাশাপাশি, ট্রাম বা বাসের জন্য ২৫ ফুট জায়গা রেখে তৈরি হবে হাবগুলি। বাংলার তাঁত-সহ অন্যান্য বস্ত্রশিল্পীদের জন্যই বস্ত্র হাব তৈরি হচ্ছে রাজাবাজারে। কালীঘাট ট্রাম ডিপোতে হবে রসগোল্লা হাব। রাজাবাজার ট্রাম ডিপোতে হবে বস্ত্র হাব। বেলগাছিয়া ট্রাম ডিপোতে সোনার হাব হবে।
সূত্রের খবর, কালীঘাট ট্রাম ডিপোর রসগোল্লা হাবে যেমন বিভিন্ন ধরনের রসগোল্লা বিক্রি হবে, তেমনই বাংলার নানা প্রান্তের মিষ্টিও পাওয়া যাবে সেখানে। কলকাতার রসগোল্লা প্রস্তুতকারকরা যেমন থাকবে পাশাপাশি ঠাঁই পাবে কৃষ্ণনগরের সরভাজা, সরপুরিয়া। থাকবে বর্ধমানের মিহিদানা, সীতাভোগ, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, মুর্শিদাবাদের রসকদম্ব ও ছানাবড়া ইত্যাদি। কৃষ্ণনগরের মিষ্টি ব্যবসায়ী হারাধন বিশ্বাস বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে মিষ্টি শিল্পকে উৎসাহ দিতে চান বলেই আমরা জানি। সেই মতোই কলকাতায় হাব গড়া হচ্ছে। এত দিন আমাদের কলকাতায় নিয়ে গিয়ে অস্থায়ী ভাবে কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া ও সরভাজা বিক্রি করতে হত। কিন্তু হা তৈরি হলে সরাসরি সেখানেই স্থায়ী ভাবে আমরা বিকিকিনির সুযোগ পাব।’’
বেলগাছিয়ার ডিপোতে যে স্বর্ণ হাব গড়ে উঠবে, সেখান থেকে খুচরো কেনাবেচার পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হবে রফতানিতেও। সিঁথি এলাকায় বাংলার স্বর্ণশিল্পীদের একটা বড় অংশ কাজ করেন। তাঁদের কাজের নিশ্চয়তার পাশাপাশি ছোট স্বর্ণকাররা যাতে সহজেই কেনাবেচা করতে পারেন, সেই সুযোগ করে দেওয়াই রাজ্য সরকারের লক্ষ্য। আর হাব মারফত সেই কাজই করতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার পক্ষ। বাংলার তাঁত-সহ বস্ত্র শিল্পীদের জন্যই বস্ত্র হাব তৈরি হচ্ছে রাজাবাজারে। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় শাড়ি তাঁতবস্ত্রের বাজার পেতে ধনেখালি, শান্তিপুরের তাঁতিরা বড়বাজারের ব্যবসায়ীদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন। বিকল্প বাজার করে দিতে রাজ্য সরকার প্রতি বছর কলকাতা-সহ বাংলার বিভিন্ন জায়গায় ‘তাঁতের হাট’-এর আয়োজন করে। পাশাপাশি, বিভিন্ন দফতরের দ্বারা আয়োজিত মেলাতেও তাঁত তথা বিভিন্ন শাড়ি বিক্রির সুযোগ পান গ্রামাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। সেই সব ক্ষেত্রেও ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয় শিল্পীদের। কিন্তু সরকারি মেলার বাইরেও যাতে তাঁরা সারা বছর ক্রেতা পান, সেই লক্ষ্যে হচ্ছে এই বস্ত্র হাব। এখানে সরাসরি তাঁতবস্ত্র বিক্রি করবেন তাঁতিরা।
সরকারি কর্তারা জানাচ্ছেন, শহরে ট্রামের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। তাই গুরুত্ব কমেছে ট্রাম ডিপোগুলির। দক্ষিণে জোকা ও বেহালা ট্রাম ডিপোগুলি উঠে গিয়েছে। জোকা ট্রাম ডিপো এখন সরকারি বাসের গ্যারেজ। আর বেহালা ট্রাম ডিপো হয়ে গিয়েছে কলকাতা পুলিশের শিবির। বাকি ডিপোগুলিতে কী হবে, তার সিদ্ধান্ত আগামী দিনে নেবে রাজ্য সরকার।