বন্ধ কলকারখানার জমিতে নতুন শিল্পস্থাপনে উদ্যোগী রাজ্য সরকার। প্রতীকী ছবি
বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের আগেই বন্ধ কলকারখানার জমিতে শিল্পস্থাপনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে চায় রাজ্য সরকার। বন্ধ কলকারখানার জমি ব্যবহারের আইনকে সরলীকরণ করার যে কাজ রাজ্য সরকার বহু আগেই সেরে ফেলেছে। তবে এই বিষয়টি সেভাবে প্রচার পায়নি। সম্প্রতি বন্ধ কল-কারখানার জমি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয় নবান্নে। রাজ্যে শিল্পস্থাপনের লক্ষ্যে এই ধরনের পরিত্যক্ত কারখানার জমি কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয় শীর্ষ আধিকারিকদের মধ্যে। সূত্রের খবর তার পরেই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশে বলা হয়,পড়ে থাকা জমি চিহ্নিত করতে।
চিহ্নিতকরণের কাজ দক্ষিণবঙ্গ থেকে শুরু করা হয়েছে বলেই নবান্ন সূত্রের খবর। কলকাতা লাগোয়া হাওড়া শিল্পাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা বেশ কিছু কারখানার জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সমস্ত বন্ধ কারখানার জমির পরিমাণ প্রায় ৫০ থেকে ৬০ একর। উত্তর ২৪ পরগনা ও হুগলিতেও বেশকিছু জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। যেগুলি আবার জমির পরিমাপ প্রায় ১০০ একরের উপর। নবান্ন সূত্রে খবর, খুব শীঘ্রই এই তিনটি জেলার চারটি বন্ধ কারখানা মালিকদের ডাকতে চলেছে রাজ্য। এদের পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হবে, হয় পড়ে থাকা জমিতে শিল্পস্থাপন, না হয় সরকারকে জমি ফেরত। তবে এই কারখানাগুলির নাম এখনই প্রকাশ্যে আনতে নারাজ প্রশাসন। এর পাশাপাশি সাতটি জেলার আধিকারিকদের পড়ে থাকা জমি চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে।
বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরের আমলে রাজ্যে কয়েক হাজার কলকারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। তাই এ বার সেই বন্ধ কলকারাখানার জমিতেই বিনিয়োগ টেনে শিল্প গড়তে আগ্রহী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। শিল্প গড়ারলক্ষ্যে প্রথমবার ২০১৭ সালে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা সেই জমির পুনর্ব্যবহারে উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার। সংশোধনী আনা হয় ১৯৬৫ সালের ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ল্যান্ড রিফর্মস রুলস’-এ। সংশোধনী এনে চা বাগান বাদ দিয়ে মিল, ফ্যাক্টরি বা ওয়ার্কশপের অব্যবহৃত জমি নতুন করে শিল্পের কাজে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়। পড়ে থাকা জমিতে শিল্প গড়তে চাইলে, ন্যূনতম সেলামি ও ভাড়ায় দীর্ঘমেয়াদি লিজেতা দেওয়ারও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।নতুন হারে সেলামি ও ভাড়া দিয়ে পুনরায় কারখানা চালু করার জন্য। পুনরায় একই কারখানা চালু না করতে চাইলে, নতুন শিল্প গড়ারও সুযোগও করে দেওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফে। সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন, তথ্যপ্রযুক্তি, স্টিল, সিমেন্ট, পর্যটন শিল্প, পোল্ট্রি প্রভৃতি শিল্প গড়তে সরকারের তরফে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। ওই জমি ব্যবহার করে নতুন শিল্প গড়তে উৎসাহ দিতে ২০২০ সালে ফের একবার সংশোধনী এনে কমানো হয় সেলামি ও ভাড়া। অনেক ক্ষেত্রে নামমাত্র সেলামির সুযোগও করে দেওয়া হয়েছিল। এত কিছু দেওয়া সত্ত্বেওএ বিষয়ে আশানুরূপ ফল হয়নি। কিন্তু আগামী এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। তার আগে আরও একবার বন্ধ কলকারখানার জমিতে শিল্পস্থাপনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে নবান্ন।