বিশাল দাস আদালতের ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
প্রেমঘটিত কারণে প্রথমে খুন। তার পর মৃতের হাত-পা এবং মুন্ডু কেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এ দিক-সে দিক। ক্যামেরাবন্দি করা হয়েছিল শরীর থেকে হাত-পা, মুণ্ডু কাটার সেই দৃশ্যও। তদন্তে নেমে মৃতের কাটা হাত-পা কয়েক দিনের মধ্যে খুঁজে বার করতে পারলেও মুন্ডু খুঁজে বার করতে রীতিমতো কালঘাম ছুটেছিল পুলিশের। সাড়া ফেলে দেওয়া হুগলির সেই বিষ্ণু মাল হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হল প্রায় চার বছর পর। বছর তেইশের যুবক বিষ্ণুকে হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ‘কুখ্যাত’ দুষ্কৃতী বিশাল দাসকে দোষী সাব্যস্ত করল চুঁচুড়ার ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে বিশালের সাত শাগরেদকেও। এই মামলায় এক জন রাজসাক্ষী হয়েছিলেন। তাঁকে মুক্তি দিয়েছে আদালত।
২০২০ সালের ১১ অক্টোবর চুঁচুড়ার বিষ্ণুকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশাল এবং তাঁর সাঙ্গপাঙ্গেরা। অভিযোগ উঠেছিল, সেই রাতেই চাঁপদানি এলাকায় একটি বাড়িতে বিষ্ণুকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেন বিশাল। এর পর দেহ ছয় টুকরো করে শেওড়াফুটি ও বৈদ্যবাটির বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়।
পুলিশ তদন্তে নেমে একে একে বিশালের শাগরেদদের গ্রেফতার করা শুরু করে। পুলিশি জেরায় তাঁরাই সন্ধান দিয়েছিলেন, কোথায় কোথায় বিষ্ণুর দেহাংশ ফেলা হয়েছিল। সেই মতো হাত-পা, ধড় উদ্ধার হলেও কাটা মুণ্ডুর হদিস মেলেনি। ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছিলেন, বিষ্ণুকে খুনের পর তাঁর কাটা মুন্ডু নিয়ে রাতভর বসেছিলেন বিশাল। তার পর সকাল হলে মুন্ডুটি নিয়ে একটি সাইকেলে বেরিয়ে যান। পরে ক্যানিংয়ের জীবনতলা থানা এলাকা থেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন বিশাল। পরে চন্দননগর পুলিশ তাঁকে চুঁচুড়া থানায় নিয়ে আসে। বিশাল সন্ধান দেওয়ার পরেই মিলেছিল বিষ্ণুর কাটা মুন্ডু। সেটি উদ্ধার হয়েছিল বৈদ্যবাটি খালের ধার থেকে, প্লাস্টিকে মো়ড়া অবস্থায়।
বিষ্ণু হত্যাকাণ্ড সাড়া ফেলে দিয়েছিল গোটা রাজ্যে। গ্রেফতার হওয়ার পর বিশাল এবং তাঁর শাগরেদদের যত বার আদালতে হাজির করানো হয়েছিল, তত বার আদালতের সামনে তাঁদের শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ করেছিলেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। সোমবারও একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে পোস্টার হাতে জড়ো হয়েছিলেন প্রচুর মানুষ।