নবান্ন। —ফাইল চিত্র।
একাধিক প্রকল্পে আটকে থাকা কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ছাড়াতে দিল্লির দরবারে তদ্বির করতে হচ্ছে রাজ্যকে। অভিযোগ, কেন্দ্রের ‘ব্র্যান্ডিং’-শর্ত না মানা। অন্য দিকে ‘জলজীবন মিশন’-এ (জেজেএম) পর পর চার দফার কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পাচ্ছে রাজ্য। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, রাজ্যের নিজস্ব ‘ব্র্যান্ডিং’-এর পাশাপাশি, কেন্দ্রেরও ‘লোগো ব্র্যান্ডিং’-সহ সব ‘শর্ত’ মানায় জলজীবন মিশন প্রকল্পের বরাদ্দে কোনও বিঘ্ন ঘটেনি। বস্তুত, গ্রামীণ এলাকার বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছতে কেন্দ্র তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অন্যতম প্রচারিত একটি প্রকল্প জলজীবন মিশন। লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রের তরফে যার প্রচার সর্বত্র হওয়ার কথা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে ‘ব্র্যান্ডিং’, বরাদ্দ খরচ, জল সংযোগের গতি, জলের গুণমান এবং পরিকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি শর্ত ছিল। সে সবই পালন করা হয়েছে। কেন্দ্রের স্থির করা প্রকল্পের নাম ব্যবহারের পাশাপাশি, এলাকায় এলাকায় প্রচার-ফলক বসানো হচ্ছে। যাতে প্রকল্পের কেন্দ্রীয় নামের সঙ্গে থাকছে জলশক্তি মন্ত্রকের উল্লেখ। থাকছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং তার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের উল্লেখও। এক কর্তার কথায়, “যৌথ-ব্র্যান্ডিং-এ আপত্তি নেই কেন্দ্রের। যত সংখ্যক বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে, তার অন্তত ৫০% এলাকায় এই প্রচার চাইছে কেন্দ্র। সঙ্গে থাকতে হচ্ছে সেই বোর্ডের জিও-ট্যাগ। যা নজরে রাখছে কেন্দ্র।”
কেন্দ্রীয় বরাদ্দের টাকাও খরচ হয়েছে। প্রশাসনের খবর, চলতি অর্থবর্ষে প্রথম দফায় কেন্দ্রের থেকে প্রায় ৯৫১ কোটি টাকা পেয়েছিল রাজ্য। অল্প দিনের মধ্যেই বরাদ্দ খরচ করায় দ্বিতীয় দফার প্রায় ৯৫১ কোটি টাকা পাঠায় কেন্দ্র। তৃতীয় দফাতেও প্রায় ৯৫১ কোটি টাকা পায় রাজ্য। এ বার চতুর্থ দফার বরাদ্দের আবেদন কেন্দ্রকে পাঠিয়েছে রাজ্য। প্রত্যেক দফাতেই প্রায় সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেছে রাজ্যও। অভিজ্ঞ আধিকারিকদের অনেকের মতে, এক সময়ে এই প্রকল্পের গতি প্রায় ছিলই না। তখন একটি দফার বরাদ্দ নিয়েই কার্যত নাকাল হতে হচ্ছিল প্রশাসনকে। বরাদ্দ পড়ে থাকার অভিযোগ তুলেছিল কেন্দ্রও। এমনকি, এক বার মিশনের কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল। যদিও কেন্দ্র-রাজ্যের আলোচনায় সেই জট কেটে যায়।
প্রশাসনের খবর, রাজ্যকে প্রায় ১ কোটি ৭৪ লক্ষ পরিবারে জলসংযোগ করতে হবে। শনিবার পর্যন্ত রাজ্যে প্রায় ৭৩ লক্ষ পরিবারে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের আশা, চলতি অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার আগে অন্তত এক কোটি বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়া যাবে। প্রসঙ্গত, জেলা প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে গত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, প্রকল্পটি চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা হবে। কোনও কারণে তা সম্ভব না হলে আগামী বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যে গ্রামীণ এলাকার প্রত্যেক বাড়িতেই পৌঁছে যাবে পরিস্রুত পানীয় জলের সংযোগ। বস্তুত, ২০২৪ সালের মধ্যেই একশো শতাংশ গ্রামীণ বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য বেঁধে রেখেছে কেন্দ্র।
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “শুধু জল পৌঁছে দেওয়াই নয়, জমি জোগাড় করে গোটা পরিকাঠামো তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ, জলের গুণমান পরীক্ষা ইত্যাদি সব বিষয়ে নজর দিতে হচ্ছে। ফলে বরাদ্দের দিক থেকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হচ্ছে রাজ্যকেও।”