কলকাতা হাই কোর্ট। ফাইল চিত্র।
সরকারে পালাবদল হয়। বিভিন্ন জমানায় শাসকের রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুযায়ী এবং মর্জিমাফিক গ্রন্থাগারে বই বা সংবাদপত্র রাখা হয় বলে বইপ্রেমী শিবির-সহ বিভিন্ন মহলের অভিযোগ। এই অবস্থায় কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোন গ্রন্থাগারে কী সংবাদপত্র রাখা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে সংশ্লিষ্ট গ্রন্থাগারই। রাজ্য সরকারের সংবাদপত্র বাছাই করার কোনও এক্তিয়ারই নেই।
রাজ্যের গ্রন্থাগারে বাছাই করা সংবাদপত্র রাখার মামলায় সম্প্রতি এ কথা জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের গ্রন্থাগারে বাছাই করা সংবাদপত্র রাখা নিয়ে মামলা হয়েছিল। মামলাকারীর অভিযোগ ছিল, সরকারপন্থী সংবাদপত্রগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। যদিও রাজ্যের তরফে জানানো হয়, ২০১৯ এবং ২০২১ সালের নির্দেশিকায় গ্রন্থাগারে ১৪টি সংবাদপত্র রাখার কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে উর্দু ও নেপালি ভাষার কাগজও আছে। কিন্তু সরকারি টাকায় গ্রন্থাগারে কোনও রাজনৈতিক দলের মুখপত্র রাখা যায় না।
২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পরে গ্রন্থাগারে সংবাদপত্র রাখার ব্যাপারে তৃণমূল সরকার নির্দেশিকা ও তালিকা দেয় ২০১২ সালের মার্চে। সেই তালিকায় সরকারপন্থী অনেক সংবাদপত্র স্থান পেয়েছিল বলে অভিযোগ। আবার বিভিন্ন কাগজের পাশাপাশি বাদ গিয়েছিল সিপিএমের মুখপত্রও। যদিও অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মুখপত্র বলে পরিচিত হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের ‘রেজিস্ট্রার অব নিউজপেপার ফর ইন্ডিয়া’র নথিতে সিপিএমের ওই মুখপত্র দৈনিক সংবাদপত্র হিসেবেই চিহ্নিত।
অনেকেরই পর্যবেক্ষণ, সেই সময় সরকারপন্থী বহু কাগজের মালিকানা ছিল বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থার হাতে। সারদা কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পরে সেই সংবাদপত্রগুলি অবশ্য উঠেই গিয়েছে। তার ফলে ফের নতুন করে নির্দেশিকা জারি করেছে সরকার। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সরকার কি সরকারি টাকা ব্যয় করে গ্রন্থাগারের জন্য নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সংবাদপত্রের তালিকা আদৌ তৈরি করতে পারে? যদিও সরকারের একটি সূত্রের দাবি, ২০১৯ এবং ২০২১ সালে যে-নির্দেশিকা ছিল, তাতে ১৪টি সংবাদপত্র বাছাইয়ের সময় একটি মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছে।
সরকারি সূত্রের ওই ব্যাখ্যা সত্ত্বেও এই ধরনের পদক্ষেপের নীতিগত দিকটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। অনেকের বক্তব্য, কোর্টেও সেই নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং সংবাদপত্র বাছাইয়ে রাজ্যের নির্দেশিকা যে ঠিক নয়, আদালতে সেটা প্রমাণিত হয়েছে।