শিল্প ও কর্মসংস্থানকে যে পাখির চোখ করেছে রাজ্য সরকার। ফাইল চিত্র।
কলকাতা পুরসভা, দুই ২৪ পরগনা এবং হাওড়ায় ন্যূনতম পাঁচ একর জমি থাকলেই এ বার ইচ্ছুক উদ্যোগপতিকে শিল্পতালুক গড়ার ছাড়পত্র দেবে রাজ্য সরকার। এতদিন পর্যন্ত সেই জমির ন্যূনতম পরিমাণ ছিল ২০ একর। বেসরকারি শিল্পতালুকের পুরনো নীতি সংশোধন করে সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভা এই নতুন নীতিতে ছাড়পত্র দিয়েছে।
শিল্প ও কর্মসংস্থানকে যে পাখির চোখ করা হবে, তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফিরে তা স্পষ্ট করেছিল রাজ্য। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেসরকারি শিল্পতালুকের নীতিতে বেশ কিছু সংশোধন করল রাজ্য। নতুন নীতিতে জমির ন্যূনতম সীমা শিথিল করার পাশাপাশি যুক্ত করা হয়েছে শিল্প-সংক্রান্ত অতিরিক্ত কিছু গতিবিধিও। সর্বোপরি পুরনো নীতিতে বিনিয়োগকারীদের যে ছাড়ের (ইনসেন্টিভ) সুবিধা ছিল, তা-ও সরলীকরণ করেছে সরকার। প্রশাসনিক কর্তাদের আশা, এতে বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়ার পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগও।
২০১৪ সালে বেসরকারি শিল্পতালুকের জন্য নীতি তৈরি করেছিল রাজ্য। তাতে কলকাতা পুরসভা এলাকা, দুই ২৪ পরগনা এবং হাওড়ায় জমির পরিমাণ ন্যূনতম ২০ একর হলে তবে বেসরকারি কোনও উদ্যোগপতিকে শিল্পতালুক তৈরির অনুমোদন দেওয়া হত। নতুন নীতিতে জমির সেই পরিমাণকে শিথিল করে ৫ একর করা হল। আগে বেসরকারি শিল্পতালুকের আওতায় গুদামঘর বা লজিস্টিক্স গতিবিধির অনুমোদন ছিল না। নতুন নীতিতে এগুলির সঙ্গে হিমঘরকেও সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। বৈঠকের পরে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জানিয়েছেন, এখন এই ধরনের গতিবিধি অনেক বেড়ে যাওয়ায় বৃহৎ সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। তা মাথায় রেখেই এই পরিমার্জন করা হল।
শিল্পতালুকের সম্প্রসারণের সুবিধাও নয়া নীতিতে বাড়ানো হচ্ছে। আগের নীতিতে সম্প্রসারণের কোনও সুযোগ শিল্পপতিদের কাছে ছিল না। নতুন নীতিতে বলা হচ্ছে, কলকাতা পুরসভা, দুই ২৪ পরগনা এবং হাওড়ার ক্ষেত্রে দু’একর এবং অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রে তা পাঁচ একর পর্যন্ত জমি থাকলেই চালু তালুকের সম্প্রসারণ সম্ভব। একই সঙ্গে, ছাড়ের প্রশ্নেও আগের থেকে অনেক বেশি নমনীয় হচ্ছে রাজ্য। আগে ছাড় বা ইনসেন্টিভ মিলত কাজ শেষ হওয়ার পরে। এ বার তিনটি কিস্তিতে সরকারের ছাড় পাবেন উদ্যোগপতিরা। নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজ শেষের পরে ২০%, ৩০% এবং ৫০% হারে ছাড়ের সুবিধা পাবেন তাঁরা। পাশাপাশি সরকারের ঘোষণা, ছোট-ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের অধীনে একটি এক-জানলা সুবিধা চালু হচ্ছে। তাতে সংশ্লিষ্ট শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সব ধরনের অনুমতি পাওয়া যাবে।
মুখ্যসচিবের কথায়, “২০২০-২১ সালের বাজেটে ১০০টি শিল্পতালুক তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। নতুন নীতিতে ইচ্ছুক অনেক উদ্যোগপতি এগিয়ে আসবেন।” আমদানি ক্রমশ কমিয়ে ডিম এবং মাছের চাহিদা মেটানোর জন্য রাজ্যেই তা উৎপাদনের উপরে জোর দিয়ে আসছে সরকার। এ বার বেসরকারি শিল্পতালুকে ডিম উৎপাদন-পোলট্রি বা মাছ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত সব ধরনের উদ্যোগকেই অনুমতি দিচ্ছে রাজ্য।