মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
শিল্প এবং বিনিয়োগ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে চায় রাজ্য সরকার!
দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার শিল্প এবং বিনিয়োগ নিয়ে যে দাবিগুলি করে আসছে, বাস্তবে তার সারবত্তা নেই। তাই কত বিনিয়োগ আসছে, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি সরকারের উদ্দেশে ছুড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। সেই দিক থেকে সরকারের সাম্প্রতিক মনোভাব তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা।
সূত্রের খবর, সব দফতরকে নবান্নের সর্বোচ্চ মহল জানিয়েছে, গত ১২ বছরে (তৃণমূল সরকারের আমলে) রাজ্যে কী বিনিয়োগ হয়েছে, তার শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে চায় সরকার। একই সঙ্গে তাতে কত কর্মসংস্থান তৈরি করা গিয়েছে, সেই তথ্যও প্রস্তুত করতে চাইছে রাজ্য। নির্দিষ্ট বয়ানে প্রত্যেক দফতরকে সেই তথ্য দিতে বলা হয়েছে। তাতে বিনিয়োগের স্থান, কোন বছর বিনিয়োগ বাস্তবায়িত হয়েছে, বিনিয়োগের প্রকৃতি অর্থাৎ নতুন কোনও কারখানায় হয়েছে না কি, চালু কারখানার সম্প্রসারণে ঘটেছে, তা সবিস্তারে জানাতে হবে দ্রুত।
এরই সঙ্গে কত পরিমাণ বিনিয়োগ এসেছে, তাতে মোট কত কর্মসংস্থান হয়েছে, বিনিয়োগের ব্যাখ্যা, বিনিয়োগ যেখানে কার্যকর হয়েছে, সেই কারখানার ছবি ইত্যাদিও জানাতে বলা হয়েছে দফতরগুলিকে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, যে ভাবে তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা খুবই ইঙ্গিতপূর্ণ। কারণ, শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হলে, তার সত্যতা অকাট্য হতে হয়। সে কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত বিনিয়োগ কার্যকর হওয়ার ছবি-সহ খুঁটিনাটি সব তথ্য চাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সাল থেকে রাজ্যে বসছে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন বা বিজিবিএস-এর আসর। কোভিড অতিমারির কারণে ২০২০ এবং ২০২১ সালে সেই সম্মেলন করা যায়নি। ফলে এতদিনে ছ’টি সম্মেলন হয়েছে। সরকারি সূত্রের দাবি, ওই ছ’টি সম্মেলন থেকে রাজ্যে প্রায় ১৫ লক্ষ ৭৪ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছে (সবিস্তার সারণীতে)। তবে, রাজ্যের দাবি অনুযায়ী, সেই সম্মেলনগুলির বাইরেও গত প্রায় ১২ বছরে অনেক অঙ্কের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে এবং তা কার্যকর হয়েছে। সমান্তরালে বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থানের দাবিও করে থাকে রাজ্য।
এ সব নিয়েই প্রশ্ন তুলে থাকেন বিরোধীরা। তেমনই আর একটি বিজিবিএস-এর আসর বসতে চলেছে নভেম্বরের শেষে। তার আগে প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের নিয়ে স্পেন এবং দুবাই সফর সেরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সফরও বিরোধীদের কটাক্ষের নিশানায় চলে আসে। এমনকি, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে অভিযোগ করেন, সরকার তথা মানুষের টাকা নয়ছয় করছে রাজ্য। তথ্য জানার অধিকার আইনে সেই সফরের সবিস্তার তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট সবক’টি দফতরকে চিঠিও দিয়েছিলেন তিনি।
প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘বিগত অনেকগুলি বিজিবিএস-এর পরে বিরোধীরা শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তুলেছিলেন। তখন তা প্রকাশ করেনি রাজ্য। আসন্ন বিজিবিএস-এর আগে অন্দরের সেই প্রস্তুতি কৌতুহল তৈরি করছে সন্দেহ নেই।’’