Bengal SSC Recruitment Case

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারানো ২৬ হাজার স্কুলশিক্ষককে বেতন দিল রাজ্য সরকার

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে যে ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের এপ্রিল মাসের বেতন দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৪ ১৩:২১
Share:

মঙ্গলবার বিকেল থেকে চাকরি হারানো শিক্ষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বেতন পাঠানো শুরু হয়েছে। —ফাইল চিত্র।

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারানো ২৬ হাজার শিক্ষককে বেতন দিল রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার বিকেল থেকে ওই শিক্ষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বেতন পাঠানো শুরু হয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে যে ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের এপ্রিল মাসের বেতন দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, যে হেতু চাকরি হারানো শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন, তাই তাঁদের বেতন দেওয়া হবে। সঙ্গে শিক্ষা দফতরের যুক্তি ছিল, শ্রম আইন অনুসারে যে হেতু ওই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা কাজ করেছেন, তাই তাঁদের বেতন আইনত প্রাপ্য। তাই যত দিন সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা চলবে, তত দিন এঁদের কারও বেতন বন্ধ করা হবে না। চাকরি বাতিলের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য সরকার। শিক্ষা দফতরের পাশাপাশি স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফেও পৃথক ভাবে মামলা করা হয়েছে। ফলে বিষয়টি বর্তমানে শীর্ষ আদালতে বিচারাধীন।

Advertisement

এসএসসিতে নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলায় সোমবার ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করা হচ্ছে। যাঁরা প্যানেলের বাইরে থেকে চাকরি পেয়েছিলেন, যাঁরা মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে চাকরি পেয়েছিলেন, যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের সম্পূর্ণ বেতন ফেরত দিতে হবে। বছরে ১২ শতাংশ হারে সুদ-সহ ওই বেতন ফেরত দিতে হবে। উচ্চ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে রাজ্য। সেই মামলা উঠেছে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে। সোমবার ওই মামলার শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী আদালতে বলেন, হাই কোর্ট এমন নির্দেশ দিয়েছে, যা কার্যকর করা সম্ভব নয়। মানবিকতার কারণে ক্যানসার আক্রান্ত এক জনের চাকরি রেখে বাকি সকলের চাকরি বাতিল করা হয়েছে। রাজ্য মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। সে দিক থেকে দেখলে, ভোটের সময় পুরো মন্ত্রিসভার সদস্যদের তো জেলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে! জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, “প্যানেলে নাম নেই, এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হয়েছে। এটা তো সম্পূর্ণ জালিয়াতি!” তাঁর প্রশ্ন ছিল, মন্ত্রিসভা যখন জেনেছিল যে বেআইনি নিয়োগ হয়েছে, তার পরেও কেন তারা ‘সুপারনিউমেরারি পোস্ট’ (বাড়তি) তৈরি করতে গেল?

ওএমআর শিট নষ্ট হয়ে যাওয়া, মিরর ইমেজ না থাকা, প্যানেলের বাইরে নিয়োগ— এ সব কী করে ঘটল, তা রাজ্যের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ওএমআর শিটই যেখানে নেই, সেখানে কী ভাবে যোগ্য এবং অযোগ্যদের বাছাই করা হবে? রাজ্যের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মন্তব্য, ‘‘আপনারা চাকরি বাতিলের বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন, অথচ কোনও আসল ওএমআর শিটই নেই। কোন তথ্যের ভিত্তিতে যোগ্য এবং অযোগ্যদের বাছাই করছেন? ২৫ হাজার কিন্তু বিশাল সংখ্যা।’’

Advertisement

প্রধান বিচারপতি জানান, পুরো বিষয়টিই তাঁরা শুনবেন। তবে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের যে নির্দেশ উচ্চ আদালত দিয়েছিল, তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতে চাকরিহারাদের আইনজীবী মুকুল রোহতগি চাকরি বাতিলের নির্দেশেও স্থগিতাদেশের আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘‘চাকরি বাতিল নিয়েও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক। ইতিমধ্যে ভোটের কাজে অনেকে চলে গিয়েছেন। এই অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব নয়।’’ কিন্তু প্রধান বিচারপতি তাতে স্থগিতাদেশ দেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা শুধু মন্ত্রিসভা নিয়ে নির্দেশ দিচ্ছি। মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে এখনই কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে পারবে না সিবিআই।’’ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী সোমবার। সেই আবহে এপ্রিল মাসের বেতন পাওয়ায় একটু হলেও স্বস্তিতে চাকরি হারানো শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। আপাতত সুপ্রিম কোর্টের আগামী শুনানির দিকে তাকিয়ে তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement