কলকাতা হাই কোর্ট। — ফাইল চিত্র।
বন্দিদের সংশোধন এবং নির্দিষ্ট সময়ের পরে পুনর্বাসনের জন্যই তাঁদের সংশোধনাগারে আটকে রাখা বলে রাজ্যকে হাই কোর্ট ফের মনে করিয়ে দিয়েছে।
২৩ বছর বন্দি মহম্মদ জাকির খানের ক্ষমাভিক্ষার আর্জি রাজ্য নাকচ করার পরিপ্রেক্ষিতে মামলায় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এই পর্যবেক্ষণ উঠে আসে। রাজ্যের সাজা পুনর্বিবেচনা মণ্ডলী (স্টেট সেনটেন্স রিভিউ বোর্ড বা এসএসআরবি)-কে তিন সপ্তাহের মধ্যে জাকিরের আর্জি নতুন করে খতিয়ে দেখে হাই কোর্ট তাদের মত জানাতে বলেছে। অতি সম্প্রতি হাই কোর্ট এই নির্দেশ দেয়।
বিনা বিচারে নেপালের দীপক জোশিকে ৪১ বছর ধরে এ রাজ্যে জেলে আটকে রাখার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল রাজ্য সরকারকে। এ বার জাকিরের ক্ষমাভিক্ষার আর্জি নাকচ করার মধ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশিকা বা আদালতের বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক রায় মেনে চলতে রিভিউ বোর্ড শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ বলেই বিচারপতি ভট্টাচার্য জানান।
নিয়মমাফিক ১৪ বছর সাজা খাটার পরে সংশোধনাগারের অন্দরে তাঁর আচরণের ভিত্তিতে যে-কোনও বন্দিরই সাজা মকুব হতে পারে। কিন্তু বিচারপতি ভট্টাচার্যের বক্তব্য, সংশোধানাগার কর্তৃপক্ষ তথা জেলের সুপার জাকিরের বিষয়ে কী মনে করেন, সে বিষয়ে রাজ্যের রিপোর্টে উল্লেখই নেই। শুধু পুলিশের আপত্তি তুলে ধরে এসএসআরবি। বিচারপতি ভট্টাচার্য তাঁর রায়ে বলেন, “হাই কোর্টের নজরে এসেছে বন্দিদের বেশ কিছু আর্জির ক্ষেত্রেই এসএসআরবি সম্পূর্ণ নির্বিকার ভঙ্গিতে বিষয়টি বিচার করে ক্ষমা নাকচ করেছে। বন্দির সংশোধন এবং পুনর্বাসনের জন্যই জেল থেকে সংশোধনাগারের জন্ম। সর্বত্র দৃষ্টিভঙ্গির এই বদল সত্ত্বেও এসএসআরবি চোখ-কান বুজে। জানি না আর কতটা পথ চললে তাদের চৈতন্য হবে।”
মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি জাকির কলকাতার একটি অপহরণের ঘটনায় জড়িত ছিলেন। রাজ্য জানিয়েছে, জাকিরের সঙ্গে সংগঠিত অপরাধ চক্রের যোগ ছিল। অপহৃত ব্যক্তির পরিবার এবং মামলার সাক্ষীরা এখনও জাকির ছাড়া পেলে বিপদের ভয় পান। কলকাতা পুলিশও ওই বন্দির মুক্তির বিরুদ্ধে। এর ভিত্তিতে বিচারপতির প্রশ্ন, শুধুমাত্র পুলিশের আশঙ্কা এবং ২৩ বছর আগের অপরাধের ধরন দিয়ে বন্দির মুক্তি কেন ঠিক হবে? সমাজকল্যাণ দফতর বা জেল সুপার বন্দির বিষয়ে কী মনে করেন? বন্দির পরিবারের কী অবস্থা? এ সব এসএসআরবি জানায়নি। অতএব বিষয়টি তাদের নতুন করে দেখতে হবে।
জাকিরের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশের রিপোর্টের ভিত্তিতেই বন্দিদের মুক্তি আটকাতে তৎপর থাকেন জেল কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের সংশোধনাগার সংক্রান্ত কমিটির সদস্য স্মিতা চক্রবর্তী বলছেন, “দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই সবার আগে ১৯৯২তে সংশোধনী পরিষেবা আইন পাশ হয়েছিল। জেলের সংশোধনাগারে রূপান্তরের সেই শুরু। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গই পিছিয়ে যাচ্ছে।”
দু’দশক ধরে অলকানন্দা রায়ের বাল্মীকি-প্রতিভার শিল্পী কৃষ্ণ দাস বা ২৯ বছর ধরে বন্দিনী রীতা মণ্ডলেরা সংশোধনাগারেই পড়ে আছেন। বন্দিরা অনেকেই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এসএসআরবি-তে বিচারবিভাগ বা সমাজকল্যাণ দফতরের মতামত নিয়ে মাসে মাসে বৈঠকে বসার কথা। কিন্তু এ রাজ্যে এসএসআরবি নিয়ে নানা অভিযোগ। আইজি (কারা) লক্ষ্মীনারায়ণ মীনা অবশ্য সব কিছুই নিয়ম মেনে চলছে বলে দাবি করেছেন।