Para Teachers in West Bengal

কোনও শিক্ষক মুড়ি ভাজেন, কেউ চালান টোটো

নদিয়া জেলার চাপড়ার বাসিন্দা আহাদ আলি মণ্ডল ডাংনা পশ্চিমপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি টোটো চালান। তিনি জানান, সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৩৬
Share:

—প্রতীকী ছবি।

কেউ টোটো চালান, কেউ মাছ বিক্রি করেন কেউ বা মুড়ি ভাজেন। এ সবের বাইরে তাঁদের একটি নির্দিষ্ট পেশাগত পরিচয়ও আছে। তাঁরা প্রত্যেকেই এ রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক। ওই পার্শ্বশিক্ষকদের দাবি, স্থায়ী সাধারণ সাধারণ শিক্ষকদের মতোই তাঁরা স্কুলে নিয়মিত ক্লাস নেন। উপরন্তু, অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে স্কুলছুট পড়ুয়াদের চিহ্নিত করে তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার কাজও থাকে। কিন্তু বেতনের হাল এমনই যে পড়ানোর পাশাপাশি অন্য কাজ না করলে বাড়িতে হাড়ি চড়াই দায়। তবে শিক্ষা দফতরের কর্তাদের দাবি, সরকার পার্শ্বশিক্ষকদের প্রতি ‘যথেষ্ট’ মানবিক।

Advertisement

নদিয়া জেলার চাপড়ার বাসিন্দা আহাদ আলি মণ্ডল ডাংনা পশ্চিমপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি টোটো চালান। তিনি জানান, সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় টোটো নিয়ে
বেরিয়ে পড়েন। সওয়ারি পেলে গাড়িতে চাপিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে স্কুলে যান। স্কুল শেষে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ফের টোটো চালান। আহাদ বলেন, ‘‘বাড়িতে মা, বাবা, স্ত্রী এবং মেয়ে আছে। স্ত্রী অসুস্থ। মা হৃদ্‌রোগী। ওষুধের প্রচুর খরচ। মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।পার্শ্বশিক্ষকতার কাজ করে হাজার নয়েক টাকা পাই। এতে সংসার কী করে চলবে?’’ এক সময় প্রাইভেট টিউশনের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। গ্রামে অবশ্য বাড়িতে ছাত্র পড়িয়ে তেমন আয় হয় না। তাই টোটো চালাতে শুরু করেন।

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মথুরাপুরের ফটকিএড়ের পাড় অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্বশিক্ষক সমীরণ সর্দার রোজ সকালে স্থানীয় ঘোড়াদল বাজারে ঘণ্টা দুয়েক মাছ বিক্রি করেন। তার পর দোকান গুটিয়ে অফিস যান। তাঁরও পরিবারে বাবা অসুস্থ। মা, স্ত্রী, মেয়ে আছে। সমীরণ বলছেন, ‘‘বাবার ওষুধের খরচ আছে। মেয়ে পড়াশোনায় ভাল। ওর টিউশনের খরচও জোগাতে হয়।’’

Advertisement

শিক্ষকদের অনেকেই বলছেন, টোটো চালানো কিংবা মাছ বিক্রি করা কোনও অপরাধ নয়। বহু মানুষ এ ভাবে পেট চালান। কিন্তু সপ্তাহে স্কুলে ২০টি ক্লাস নেওয়া এবং এক দিন করে স্কুলছুট পড়ুয়াদের পড়াশোনার মূল স্রোতে ফেরানোর ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এত কম বেতন কেন দেওয়া হবে যাতে তাঁদের সংসার সামলাতে অন্য কাজ করতে হয়? পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্যমঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ বলছেন, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে দেশে স্কুলছুটদের
স্কুলে ফেরানোতে পশ্চিমবঙ্গের স্থান উপরের দিকে। অথচ সেই কাজের কৃতিত্ব যাঁদের তাঁদের এই ধরনের কাজ করতে হচ্ছে! ভগীরথ বলেন, ‘‘সম্প্রতি বিহার সরকার জানিয়েছে যে সেই রাজ্যে পার্শ্বশিক্ষকদের স্থায়ীকরণের জন্য তিনটি পরীক্ষা হবে। যে কোনও একটি পরীক্ষায় পাশ করলে স্থায়ী শিক্ষক হওয়া যাবে। আমাদের এখানে কেন এমন হবে না?’’

শিক্ষা দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী থাকার সময়ে পার্শ্বশিক্ষকদের অবসরের পরে ৩ লক্ষ টাকা গ্র্যাচুইটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং ৩ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা হয়েছিল। পার্শ্বশিক্ষকদের জন্য সরকার মানবিক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement