চিকিৎসার জন্য কি আদৌ প্রস্তুত স্বাস্থ্য দফতর? ফাইল ছবি
করোনার পরিচিত স্ট্রেন ‘আলফা’, ‘বিটা’, ‘গামা’, ‘ডেল্টা’র মধ্যে সব থেকে বেশি সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা ছিল ডেল্টার। যে কারণে অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে দেশে-বিদেশে বহু মানুষ সংক্রমিত হয়েছিলেন। সঙ্কটজনক অবস্থাও হয়েছিল অনেকের। কিন্তু সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতার দিক থেকে পিছিয়ে নেই নতুন স্ট্রেন ওমিক্রন। এমনকি, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়ানোর হার ডেল্টার থেকেও পাঁচ গুণ বেশি!
অর্থাৎ, শহরে ও জেলায় ওমিক্রন প্রভাব বিস্তার করলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাবে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য কি আদৌ প্রস্তুত স্বাস্থ্য দফতর? বহু ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠছে, তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলায় এখনও তেমন ভাবে প্রস্তুত নয় রাজ্য। আর সেই ঢিলেঢালা মনোভাবের কারণেই বঙ্গের আকাশে অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ের সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসকদের একাংশ। আরও অভিযোগ, করোনা পরীক্ষার সংখ্যাও কমেছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বললেন, ‘‘পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। গ্লোবাল অ্যাডভাইজ়রি কমিটির সঙ্গে প্রতিনিয়ত আলোচনা করে তাঁদের পরামর্শ মতো কাজ করা হচ্ছে। করোনার দু’টি পর্বে প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তাই বিষয়টি এখন অনেকটাই জানা।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘আগের দু’টি পর্বে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তাতে গোটা দেশে, এমনকি, বিশ্বের পরিসংখ্যানে রাজ্যের মৃত্যুর হার সব থেকে কম। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শহর-জেলা সর্বত্রই পরিকাঠামো উন্নয়নের অনেক কাজ হচ্ছে।’’
পরিসংখ্যান বলছে, দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে সরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি হাসপাতাল এবং সরকার-অধিগৃহীত বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে ৬০০-রও বেশি হাসপাতালে মোট ৩৩,৪৬৪টি কোভিড শয্যা ছিল। যা এখন কমিয়ে ২৩,৯৪৭টি করা হয়েছে। সে সময়ে বেসরকারি হাসপাতালের যতগুলি করে শয্যা সরকার নিয়েছিল, তার প্রায় সবই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আবার শহর এবং জেলা স্তরের সরকারি হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজন মতো একটি-দু’টি করে করোনা ওয়ার্ড রেখে বাকিগুলি অন্য পরিষেবায় ব্যবহার করতে। কিন্তু তৃতীয় ঢেউ যখন ঘাড়ের কাছে শ্বাস ফেলছে, তখন কোভিড শয্যা কমানো হল কেন?
স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেশি নয়। হাসপাতালে ভর্তির হারও তুলনায় অনেক কম। ফলে অধিকাংশ হাসপাতালের কোভিড শয্যা ফাঁকা থাকছে। তাই অন্য রোগীদের চিকিৎসায় যাতে কোনও সমস্যা তৈরি না হয়, সে কথা মাথায়
রেখেই এই পদক্ষেপ করা হয়েেছ। বেলেঘাটা আইডি ও এমআর বাঙুর হাসপাতালে এখনও করোনার চিকিৎসার পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামো রাখা হয়েছে। আইডি-তে ওমিক্রন সন্দেহভাজনদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ডও হয়েছে।
কিন্তু আচমকা সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে পরিস্থিতি সামলানো কতটা সম্ভব হবে? অজয়বাবু জানাচ্ছেন, বর্তমানে কোভিড ওয়ার্ডের সংখ্যা কমানো হলেও আক্রান্তের হার বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ করে নন-কোভিড শয্যাগুলিকে পুনরায় করোনা চিকিৎসায় ফেরানো হবে। তাঁর কথায়, ‘‘ধরা যাক, দ্বিতীয় ঢেউয়ে শহরের একটি হাসপাতালে ১৫০টি শয্যা ছিল। এ বার তার সঙ্গে আরও ৫০টি শয্যা বাড়ানো হবে।’’
এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্তারা আরও জানাচ্ছেন, তিন দিনের নোটিসে পুনরায় শয্যা নেওয়ার বিষয়েও বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নির্দেশিকা জারি করে জানানো রয়েছে। তাঁদের দাবি, জেলা থেকে শহরের মেডিক্যাল কলেজ স্তর মিলিয়ে ৭৮টি হাসপাতালে মোট ৩,৮১৬টি শয্যাকে শিশুদের করোনা চিকিৎসায় নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ১৬৪টি নিওনেটাল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (নিকু), ২২৬টি পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিকু), ২৪৩৮টি এসএনসিইউ শয্যা এবং শিশুদের বয়স অনুযায়ী ৫০৭টি ভেন্টিলেটর প্রস্তুত রয়েছে।
কিন্তু ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা যেখানে অত্যন্ত বেশি, সেখানে এই ব্যবস্থাপনা আদৌ কতটা পর্যাপ্ত, সেই প্রশ্ন উঠছে।
স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, এখন যা শয্যা রয়েছে, তার পাশাপাশি ‘ইমার্জেন্সি কোভিড রেসপন্স প্যাকেজ’ প্রকল্পে জেলা স্তরের হাসপাতালগুলির চত্বরে ২০-১০০টি শয্যার ‘প্রি ফ্যাব্রিকেটেড’ কোভিড ওয়ার্ড তৈরির নির্দেশ পৌঁছেছে। আবার প্রতিটি হাসপাতালে ২৪ শয্যার ‘হাইব্রিড সিসিইউ’ তৈরির কাজ চলছে। জনগোষ্ঠীতে ওমিক্রন ছড়িয়েছে কি না, তা জানতে কলকাতা পুর এলাকায় করোনা পজ়িটিভ হওয়া রোগীদের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য পাঠানো শুরু হয়েছে।