বাইশের শারোদৎসবের সলতে পাকানোর কাজ শুরু করল পুজো কমিটিগুলো। ফাইল চিত্র।
তিথি অনুযায়ী বিজয়া দশমী অতিক্রান্ত। কিন্তু মহানগরীর বহু বড় পুজো মণ্ডপের প্রতিমা এখনও বিসর্জন হয়নি। তার আগেই বাইশের শারোদৎসবের সলতে পাকানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে পুজো কমিটিগুলি। কোনও পুজো কমিটির কর্মকর্তারা এ বারের শিল্পীকেই চূড়ান্ত করে অগ্রিম ধরিয়েছেন। কেউ বা অন্য পুজোর শিল্পীকে আগামী বছরের জন্য চূড়ান্ত করে শক্তির আস্ফালন দেখানো শুরু করেছেন নেটমাধ্যমে। কলকাতা ময়দানে দলবদলের বাজারে একসময় ফুটবলারদের নিজেদের ক্লাবে সই করানোর জন্য টানটানি চলত। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান-মহমেডান ফুটবল ক্লাবের সেইসব সোনালি দিন এখন ঝাপসা। কিন্তু বিজয়া দশমীর দিন থেকে কলকাতার পুজো উদ্যোক্তারা সেই উত্তেজনা যেন কিছুটা হলেও ফিরিয়ে এনেছেন।
ঠিক যেমন এ বছর ‘কাকুড়গাছি যুবকবৃন্দ’কে বড়সড় সাফল্য এনে দিয়েছেন শিল্পী প্রদীপ দাস। অল্প সময়েই যুবক প্রদীপ এখন পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে ‘হটকেক’। বিজয়ার রাতে প্রদীপকে ২০২২ সালের পুজোর জন্য চূড়ান্ত করে নেটমাধ্যম সেই ইঙ্গিত দিয়েছে ‘দমদম তরুণ দল’। সঙ্গে এ বছরের মতো নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘও তাঁকে ধরে রাখার বিষয়ে আশাবাদী। সঙ্গে আরও একটি পুজোর সঙ্গেও যুক্ত হতে পারেন প্রদীপ। আবার দক্ষিণ কলকাতার বেহালার দেবদারু ফটকের পুজো কমিটির আগামী বছর সুবর্ণ জয়ন্তী। তাই খ্যাতনামা শিল্পী ভবতোষ সুতারকে পেতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু শিল্পীর আকাশছোঁয়া দাবি শুনে পিছিয়ে এসেছেন পুজো কমিটির কর্তারা। বিকল্প শিল্পীর সন্ধানও শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, এ বছর যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লি ও অর্জুনপুর আমরা সবাই পুজো কমিটিকে বড় পুরস্কার পাইয়ে দিয়েছেন ভবতোষ। এই দুই পুজো কমিটিও ভবতোষের মতো শিল্পীকে রেখে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এমন কয়েকটি ঘটনার উদাহরণ দেখে বেশির ভাগ পুজো কমিটিই তাঁদের শিল্পীকে ধরে রাখার পক্ষপাতী। যেমন শিল্পী সুশান্ত পাল থাকছেন টালাপার্ক প্রত্যয়ে। এ বছরের মতোই আগামী বছরও বড়িশা ক্লাব এবং সুরুচি সঙ্ঘের পুজো সাজাবেন রিন্টু দাস। এ বার কাশী বোস লেন পুজো কমিটিকে বড় পুরস্কার পাইয়ে দেওয়া অদিতি চক্রবর্তীকেও রেখে দেওয়া হতে পারে।
এ বারের মতো আগামী বছরের জন্য দমদম পার্ক তরুণ সঙ্ঘে থাকছেন শিল্পী মানস দাস। সে ভাবেই অশ্বিনীনগর বন্ধুমহলে থাকবেন শিল্পী সম্রাট ভট্টাচার্য। শিল্পী কৃশাণু পাল থাকছেন হাজরা পার্কে। উত্তর কলকাতার চোরবাগান সর্বজনীনে গত দু’বছরের মতো আবারও বাইশের পুজোয় থাকছেন শিল্পী বিমল সামন্ত। আবার দক্ষিণ কলকাতার ঠাকুরপুকুর এলাকার স্টেট ব্যাঙ্ক পার্ক সর্বজনীনের পুজো শিল্পী হিসেবে থাকছেন পার্থ দাশগুপ্ত। গত কয়েক বছর ধরেই তিনি এই পুজোটির সঙ্গে যুক্ত। একুশের পুজো শেষেই বাইশের পুজোর জন্য বালিগঞ্জ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে চূড়ান্ত কথা হয়ে গিয়েছে শিল্পী রূপক বসুর।
পুজো কমিটির কর্তাদের এমন প্রবণতা প্রসঙ্গে ২৫ পল্লি পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা কালী সাহা বলেন, ‘‘এমন পরিস্থিতি শিল্পীরা তৈরি করেননি। তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করেন নিজের সেরাটা দেওয়ার। কিন্তু কমিটিগুলি নিজের পুজোর বদলে অন্যের পুজোর দিকে নজর রেখে চলেন। দশমী নয়, শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু হয় সপ্তমী বা অষ্টমীর দিন থেকেই।’’