ফাইল ছবি
ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোই প্রাথমিক লক্ষ্য। তাঁদের ঘরে ফেরা আগে নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। এ নিয়ে পুলিশকেও পদক্ষেপ করতে হবে। ভোট-পরবর্তী হিংসা মামলায় শুক্রবার এমনটাই জানাল কলকাতা হাই কোর্ট। এমনকি সেই লক্ষ্যে ঘরছাড়াদের ঘরে ফিরতে লিগ্যাল সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে ইমেলের মাধ্যমেও অভিযোগ জানাতে বলেছে আদালত।
ভোট-পরবর্তী হিংসার কারণে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় অনেক মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। এই অভিযোগ তুলে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি হয় হাই কোর্টের ৫ বিচারপতির বেঞ্চে। প্রাথমিক ভাবে বিচারপতিরা মনে করেন, স্বাধীন ভাবে সবার বাঁচার অধিকার রয়েছে। সন্ত্রাসের কারণে কারোর নিজের ঘরে ঢুকতে না পারার ঘটনা কাম্য নয়। তাই ওই ঘরছাড়াদের আগে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে প্রশাসনকে। শুক্রবার বেঞ্চের নির্দেশ, হিংসার কারণে যাঁরা ঘরে ফিরতে পারেননি, রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিস কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরা অভিযোগ জানাতে পারবেন। ইমেলের মাধ্যমেও ওই অভিযোগ জানানো যাবে। কত সংখ্যক অভিযোগ জমা পড়ল, সেই তালিকা আদালতকে জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তার পরই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে আদালত। এই মামলা পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী শুক্রবার। ফলে ওই দিনের মধ্যেই নিজেদের অভিযোগ জানাতে হবে ঘরছাড়াদের।
তবে রাজ্য জুড়ে এখনও কত মানুষ ঘরছাড়া, সেই পরিসংখ্যান আদালতে দিতে পারেননি অভিযোগকারীদের পক্ষের আইনজীবীরা। অভিযোগকারী পক্ষের কৌঁসুলি প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল বেঞ্চের কাছে আর্জি জানান, ওই তালিকা জমা দেওয়ার জন্য ১০ দিন সময় দেওয়া হোক। তাঁর দাবি, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অনেক মানুষ এখনও ঘরে ফিরতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে অনেক গর্ভবতী মহিলা রয়েছেন, শিশুরাও রয়েছে। এর আগে তাঁরা থানায় অভিযোগ জানালেও কোনও সুরাহা হয়নি। এর পরই প্রিয়াঙ্কার উদ্দেশে বিচারপতিদের প্রশ্ন, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। আপনার কাছে এমন রেকর্ড আছে? উত্তরে প্রিয়াঙ্কা জানান, ওই ব্যক্তিদের হয়ে আমিই অনেক চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। তাঁর এই অভিযোগ অস্বীকার করেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। তিনি বলেন, আমিও উল্লেখ করতে চাই, ঘরছাড়ারা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। কিশোরের এই যুক্তির পরই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল একটি রিপোর্ট উল্লেখ করেন। সেখানে বলা হয়েছে, ভোট-পরবর্তী হিংসার কারণে অনেকে ঘর ছেড়ে অসমে আশ্রয় নিয়েছেন। এমনকি, তাঁরা গুয়াহাটি হাইকোর্টের দ্বারস্থও হয়েছেন। কিশোর পাল্টা বলেন, এ নিয়ে আমরা কিছু জানা নেই। অভিযোগকারী পক্ষের আরেক আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য পুলিশের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। তিনি আদালতকে জানান, ঘরে ফিরতে না পেরে অনেকে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এই কারণে তাঁদেরকে হুমকি দিচ্ছে পুলিশ।
এর আগে ৩১ মে শুধুমাত্র এন্টালি বিধানসভার ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরাতে ৩ সদস্যের একটি কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। কমিটিতে ছিলেন রাজ্য ও কেন্দ্রের মানবাধিকার কমিশনের ২ সদস্য এবং রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিস কমিটির ১ সদস্য। তা নিয়ে শুক্রবার প্রিয়াঙ্কা জানান, হাই কোর্টের নির্দেশের পর অনেকে থানায় যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই বাড়িতে ফিরে এসেছেন। শুক্রবার কমিটির ওই রিপোর্ট সব পক্ষকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।