নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
গত তিন মাসে দেশে কেরোসিন তেলের দাম কমল প্রায় এগারো টাকা। আর কেন্দ্রীয় সরকারের কেরোসিন তেলের এমন দাম কমানোর নীতিকে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল ভোটের অঙ্ক হিসাবেই দেখছে। ২০২২ সালের জুন মাসে কেরোসিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১০০ টাকা অতিক্রম করে গিয়েছিল। সেই সময় কংগ্রেস-সহ দেশের সব বিরোধীদল মোদী সরকারের কেরোসিন তেলের দাম বৃদ্ধির নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিল। গরিবের জ্বালানির একমাত্র সম্বল কেরোসিনের দাম বৃদ্ধি করা হলে দেশের বিরাট অংশের জনতার উপর চাপ বাড়বে, এমনই অভিযোগ করেছিল তারা। মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে ধাপে ধাপে নরেন্দ্র মোদী সরকার সেই দাম ১০ টাকার বেশি কমিয়েছে। গত বছর নভেম্বর মাসে ৪ টাকা ১০ পয়সা দাম কমানো হয়েছিল। ডিসেম্বর মাসে আরও এক বার দাম ৪ টাকা ৭০ পয়সা কমানো হয়। আর নতুন বছরের শুরুতেই ২ টাকা ৫০ পয়সা দাম কমানো হয়েছে।
তিন দফায় এই দাম কমার ফলে কলকাতা শহরে ৬৯ টাকার কিছু বেশি দরে প্রতি লিটার কেরোসিন পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে। জেলা স্তরে সেই দাম হতে পারে ৭২ থেকে ৭৩ টাকা। আর মাস দু’য়েকের মধ্যে দেশে বেজে যাবে লোকসভা ভোটের দামামা। তাই একে একে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দেশের সব রাজনৈতিক দল। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিও তাদের মত করে প্রস্তুতি শুরু করেছে। আর কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে গরিব জনতার মন পেতে কেরোসিনের দাম কমানো শুরু করেছে কেন্দ্র, এমনটাই দাবি করছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। এআইসিসি মুখপাত্র মিতা চক্রবর্তী বলেছেন, “ভোটের আগে শুধুমাত্র চমক দিতে কেরোসিন তেল-সহ রান্নার গ্যাস এবং আরও অনেক জিনিসের দাম কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। শুধু আমাদের মতো রাজনৈতিক দল কেন? সাধারণ মানুষও মোদী সরকারের এই চালাকি বুঝতে পারছেন। ২০১৪ সালে ইউপিএ সরকারের আমলে পেট্রলজাত পণ্যের মূল্য কী ছিল, আর এখন দাম কোথায় পৌঁছেছে তা সাধারণ মানুষ দেখছেন। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের এই দাম কমানোর নীতির তীব্র সমালোচনা করছি, কারন এমন সিদ্ধান্ত শুধু ভোটের কথা মাথায় রেখেই নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের সুযোগ-সুবিধার কথা ভাবা হয়নি।”
তবে ধারাবাহিক ভাবে কেরোসিনের দাম কমানো প্রসঙ্গে নিজেদের কৃতিত্ব দাবি করেছে, ডিলার সংগঠনগুলি। ওয়েস্ট বেঙ্গল কেরোসিন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অশোক গুপ্ত বলেন, “আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কেরোসিন তেলের দাম নির্ধারণে স্পষ্ট কোনও নীতি তৈরি করছে না কেন্দ্রীয় সরকার। তবে আমরাও এই বিষয়ে ছেড়ে কথা বলব না। আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলেই কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্য হয়েছে কেরোসিন তেলের দাম কমাতে। আগামী দিনেও আমাদের আন্দোলন চলবে কারণ আমাদের লড়াই দেশের গরীব মানুষের জন্য।” তিনি আরও বলেন, “এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্য সরকারের ভূমিকারও আমরা তীব্র সমালোচনা করি। কারণ কেরোসিন তেল বরাদ্দ করার প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়।” প্রসঙ্গত, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা হাইকোর্ট কেরোসিন তেলের দাম নির্ধারণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রককে স্পষ্ট নীতি তৈরি করতে বলেছে। কেরোসিন তেল ডিলারদের অভিযোগ, আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার দাম নির্ধারণে অযথা ঢিলেমি করছে।