ফাইল চিত্র।
অর্থ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েনে অনেক প্রকল্প কার্যত থমকে গিয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। তাতে চাপ বেড়েছে রাজ্য সরকারের উপরে। রাজ্যের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে মানুষের প্রত্যাশা পূরণে বিপুল কাজের বোঝা সামলানোর দায়িত্ব তো আছেই। তার উপরে আছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ঘিরে ধাক্কা লাগা ‘ভাবমূর্তি’ শোধরানোর চ্যালেঞ্জ। সর্বোপরি প্রত্যাশার চাপ। সব মিলিয়ে সময়টা যে বেশ ‘কঠিন’, মেনে নিচ্ছে রাজ্য প্রশাসন। এই অবস্থায় কর্মী-কর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি স্বচ্ছ ভাবে কাজ করার সঙ্কল্প করছেন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে গ্রামীণ পরিকাঠামোর কাজ। আবাস যোজনায় কেন্দ্র প্রায় আট হাজার কোটি টাকা আটকে দিয়েছে। সড়ক যোজনায় আটকে থাকা টাকার পরিমাণ প্রায় ২৫০০ কোটি এবং একশো দিনের কাজ প্রকল্পে তা প্রায় ৬০০০ কোটি টাকা। নিজের থেকে রাজ্যের পক্ষে এই বিপুল অর্থ জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব। অথচ ভোটের আগে এই সব প্রকল্পের কাজ শুরু করতে না-পারলে জনমানসে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবারেই পঞ্চায়েতমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন প্রদীপ মজুমদার।
চাপ ও চ্যালেঞ্জ যে প্রবল, তা মেনে নিয়ে প্রদীপবাবু বলেন, “দফতরের অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছি। কিছু প্রশ্ন করেছি তাঁদের। উত্তর পেলে আরও ভাল বোঝা যাবে, ঠিক কোন জায়গায় আছি আমরা। আমার পূর্বসূরির (পুলক রায়) সঙ্গেও কথা বলেছি বিস্তারিত ভাবে।” কেন্দ্রের টাকা আটকে রাখার প্রসঙ্গে মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, “কী ভাবে জট কাটানো যায়, তার পথ বার করাও আজকের আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল।”
সেচ দফতরের কাজ নিয়ে অতীতে বহু বার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দফতরের নতুন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, “কী কী কাজের প্রস্তাব আছে, লক্ষ্যমাত্রা কী, কোন প্রকল্প কতটা এগিয়েছে, কতটা হয়নি, কেন হয়নি—এক সপ্তাহের মধ্যে অফিসারদের রিপোর্ট চেয়েছি।”
তৃতীয় তৃণমূল সরকারের আমলে বিভিন্ন কল্যাণ প্রকল্পে বরাদ্দের বহর বেড়েছে। ফলে পরিকাঠামো খাতে টাকার টানাটানির আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না আধিকারিকদের অনেকেই। তার মধ্যেই সড়ক, সেতু ইত্যাদি পরিকাঠামো তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে পূর্ত দফতরকে। নতুন পূর্তমন্ত্রী পুলক রায় বলেন, “দফতরের সচিব-আধিকারিকদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছি। কোন কাজ কোন পর্যায়ে আছে, জানতে চেয়েছি। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতেই কাজ হবে।”
ডিজ়েলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জেরে ধুঁকছে সরকারি-বেসরকারি পরিবহণ। তেল সংস্থার কাছে বিপুল বকেয়া। পথে সরকারি বাস কমছে। বৈদ্যুতিক এবং সিএনজি চালিত বাস এনে সামলানোর চেষ্টা হলেও পর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশন, সিএনজি পাম্প তৈরির কাজ অনেকটাই বাকি। সরকার বাস-ট্যাক্সির ভাড়া না-বাড়ালেও বেসরকারি পরিবহণে মানুষকে অনেক বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। ‘‘সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বচ্ছতার সঙ্গে মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াই লক্ষ্য,’’ বলেন নতুন পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী।