রাজ্যে নিষিদ্ধ হয়েছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। মুখ্যমন্ত্রী (মাঝে)-র সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালেন সুকান্ত মজুমদার (বাঁ দিকে), শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। — ফাইল ছবি।
রাজ্যে নিষিদ্ধ হয়েছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাল রাজ্য বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্ন তুললেন, মুখ্যমন্ত্রী কি জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসআইএসের প্রতি সহানুভূতিশীল? রাজ্যের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে অভিনেত্রী শাবানা আজমির একটি টুইট পোস্ট করেছেন শুভেন্দু। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও এই সিদ্ধান্তকে ‘নির্লজ্জ তোষণ’ বলে কটাক্ষ করেছেন। দাবি করেছেন, ‘জেহাদি’দের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
শুভেন্দু টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমি যত দূর জানি, কেরলে কী ভাবে মহিলাদের মগজধোলাই করেন কট্টরপন্থী ধর্মগুরুরা, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে দ্য কেরালা স্টোরি ছবিটি। ছবিতে দেখানো হয়েছে, কী ভাবে কেরলে মহিলাদের ধর্মান্তরিত করে আফগানিস্তান, ইয়েমেন, সিরিয়ায় আইএসআইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়। আইএসআইএস এবং তাদের কার্যপদ্ধতির বিরুদ্ধাচারণ করে তৈরি হয়েছে ছবিটি। তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি আইএসআইএসের প্রতি সহানুভূতিশীল?’’
এখানেই থামেননি শুভেন্দু। তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘এই ছবি দেখানো হলে কেন আইনশৃঙ্খনা বিঘ্নিত হবে? এই ছবি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত। আর যদি মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে না পারেন, তা হলে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।’’ এ প্রসঙ্গে শাবানার টুইটের প্রসঙ্গও তুলেছেন। শাবানা টুইটারে এই ছবি নিষিদ্ধ করা নিয়ে সরব হয়েছেন।
সোমবারই রাজ্যে সুদীপ্ত সেনের ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন থেকে তিনি জানিয়েছেন, শান্তি-সৌহার্দ্য বজায় রাখতে এই রাজ্যে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ করা হল। তার পরেই পাল্টা কটাক্ষ করলেন বিজেপি সাংসদ সুকান্ত। তিনি বলেন, ‘‘নবান্নের এই সিদ্ধান্ত বুঝিয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেস আসলে কাদের দল। আগেই নির্লজ্জ তোষণের নজির দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বার জেহাদিদের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন।’’ এখানেই না থেমে সুকান্ত বলেন, ‘‘তৃণমূল যে স্বৈরাচারীর স্বর, তা এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই স্পষ্ট। মানুষ বুঝতে পারবে শিল্পের স্বাধীনতা, বাক্স্বাধীনতা নিয়ে তৃণমূলের কোনও কথা বলার অধিকার নেই। সত্যকে ভয় না পেলে কেউ এমন কাজ করে না।’’ পরে তিনি টুইটারেও এই নিয়ে সরব হয়েছেন। লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে তিনি একেবারেই অবাক হননি। এটা তাঁর কাছে প্রত্যাশিতই ছিল।
এর আগে তামিলনাড়ুতেও এই ছবিটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবার মধ্যপ্রদেশ সরকার এই ছবিটিকে সে রাজ্যে করমুক্ত ঘোষণা করেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কর্নাটকের বল্লেরির জনসভায় ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘‘এই ছবি সন্ত্রাসবাদের মুখোশ টেনে খুলবে।’’ সোমবার মমতা নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার আগে মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে একটি সাংবাদিক বৈঠকে এই ছবির সমালোচনা করেন। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’ প্রসঙ্গও টেনে এনে বলেছিলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলি আগুন নিয়ে খেলছে। তারা জাত-ধর্ম-বর্ণ নিয়ে ভেদাভেদ তৈরির চেষ্টা করছে। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ কেন? একটি সম্প্রদায়কে হেনস্থা করার জন্য। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’? সে-ও এক অসত্য এবং বিকৃত কাহিনি।’’
‘দ্য কেরালা স্টোরি’তে হিন্দু এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ৩২ হাজার মহিলাকে ধর্মান্তরণের কথা বলা হয়েছে। যা মিথ্যা বলে দাবি করেছিল কেরালার বাম সরকার। সোমবার ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে প্রতিবাদ জানালেও মমতা কেরলের শাসকদলকে সমর্থন করেননি। এ ব্যাপারে মমতা স্পষ্ট বলেন, ‘‘আমি সিপিএমকে সমর্থন করি না। আমি মানুষের কথা বলছি। সিপিএম তো বিজেপির সঙ্গে মিলে কাজ করছে। এই সমালোচনা আমার করার বদলে ওদের নিজেদেরই করা উচিত ছিল। ওরা একসঙ্গে হাঁটে। সেই বিজেপিই কেরালা স্টোরি দেখাচ্ছে।’’
‘দ্য কেরালা স্টোরি’ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় উঠে এসেছে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইল্স’ প্রসঙ্গও। দিন কয়েক আগেই ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’ খ্যাত পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী এসেছিলেন বাংলায়। এসেছিলেন ওই ছবির অভিনেতা অনুপম খেরও। বাংলায় এসে তাঁরা জানিয়েছিলেন, খুব শীঘ্রই ‘দ্য বেঙ্গল ফাইল্স’ নামেও একটি ছবি করতে চলেছেন তাঁরা। মমতা সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ‘‘ওরা বলেছিল, ওরা একটা ছবি করছে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইল্স’। যদি এরা ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’ করে থাকে কাশ্মীরের মানুষের নিন্দা করার জন্য, যদি কেরালায় একপেশে বক্তব্য দিয়ে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ করে থাকে, তবে বাংলাকেও সে ভাবেই দেখাবে।’’