Partha Chatterjee

দু’বছর হয়ে গেল! শুনানি এল, শুনানি গেল, জামিন হল না, তবে ‘রাজনৈতিক অস্ত্র’ হিসেবে পার্থ প্রাসঙ্গিক

রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল থেকে খাতায়কলমে ‘সাসপেন্ড’ পার্থ। কিন্তু রবিবার সেই দলেরই অন্যতম বড় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে উচ্চারিত হল পার্থের নাম।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৪ ১৭:৩১
Share:

গ্রাফিক— সনৎ সিংহ

আরও একটি ২২ জুলাই ফিরে এল রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দিনলিপিতে। দু’বছর আগে এই দিনেই তাঁর বাড়ি ওলটপালট করে তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। গভীর রাতে পাল্টে গিয়েছিল পার্থের ‘ভবিষ্যৎ’। রাত দেড়টা নাগাদ তৎকালীন শিল্পমন্ত্রীকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল ইডি। তার পর থেকে কেটে গিয়েছে ৭৩০ দিন। এই সময়কালে পার্থের ভাগ্যের বিশেষ হেরফের হয়নি। বার বার জামিনের আর্জি নিয়ে আদালতের দুয়ারে পৌঁছেও খালি হাতে ফিরেছেন পার্থ। সোমবারও কলকাতা হাই কোর্টে পিছিয়ে গিয়েছে তাঁর জামিন মামলার শুনানি। কিন্তু জেলবন্দি হলেও পার্থের ‘নাম-মাহাত্ম্য’ কমেনি। বরং রাজনীতির বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, এক সময় যে পার্থের গ্রেফতারি রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে উঠেছিল বিজেপি-সহ রাজ্যের সব তৃণমূল বিরোধী শক্তির, সেই পার্থ এখন হয়ে উঠেছেন শাসকদল তৃণমূলেরই ‘হাতিয়ার’।

Advertisement

তৃণমূল থেকে ‘সাসপেন্ড’ হয়েছেন পার্থ। কিন্তু রবিবার সেই দলেরই অন্যতম বড় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে উচ্চারিত হল তাঁর নাম। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে পার্থের নাম শোনা গেল দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতায়। যে অভিষেক নিজে ২০২২ সালে দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির তরফে পার্থকে দল থেকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত শুনিয়েছিলেন, রবিবার সেই অভিষেকই তাঁর নাম করে বললেন, ‘‘তথাকথিত টেট এবং এসএসসি দুর্নীতিতে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে যদি গ্রেফতার করা হয়, তবে নিট কেলঙ্কারিতে কেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে গ্রেফতার করা হবে না?’’

অভিষেকের ওই মন্তব্যের পর থেকেই রাজনৈতির মহলে এর ব্যাখ্যা খোঁজা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, পরোক্ষে কি পার্থের পাশে দাঁড়ালেন অভিষেক? কিন্তু সেই প্রশ্নের পাল্টা যুক্তিতে অনেকে এ-ও বলছেন যে, পার্থের উদাহরণ আসলে রাজ্যের শাসকদলের দুর্নীতি দমনকারী ভাবমূর্তির ‘অকাট্য প্রমাণ’ হয়ে উঠেছে। তাই তাঁর নাম এখন কেন্দ্রের শাসকদলকে আক্রমণ বা তাদের আক্রমণের পাল্টা জবাব দেওয়ার ‘হাতিয়ার’ হিসাবেই ব্যবহার করছে শাসক তৃণমূল। রাজনীতির বিশেষজ্ঞদের একাংশের ব্যাখ্যা, জেলবন্দি থেকেও রাজ্যের শাসকদলের হাতের কার্যকরী ‘রাজনৈতিক অস্ত্র’ হয়ে উঠেছেন পার্থ।

Advertisement

দু’বছর আগের এই দিনে, অর্থাৎ ২২ জুলাই পার্থকে কেন্দ্র করে আলোড়িত হয়ে উঠেছিল গোটা রাজ্য। তাঁর ‘বান্ধবী’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল নগদ ২৮ কোটি টাকার বেশি। ২৩ তারিখ আলাদা ভাবে পার্থ এবং অর্পিতা দু’জনকেই গ্রেফতার করেছিল ইডি। এখন দু’জনেই জেলে। নানা কারণে কলকাতা হাই কোর্টে পার্থের জামিন মামলার শুনানি পিছোতে পিছোতে এই ২২ তারিখে এসে ঠেকেছিল। মামলা উঠেওছিল এজলাসে। তবে শেষ পর্যন্ত শুনানি হয়নি। এক আইনজীবীর মৃত্যু হওয়ায় শুনানি পিছিয়ে গেল অনির্দিষ্ট কালের জন্য। সেই খবর জানার পরেই আদালতে উপস্থিত এক আইনজীবী স্বগতোক্তি করে ওঠেন, ‘‘বাইশে জুলাই তারিখটা অপয়াই রয়ে গেল পার্থ চ্যাটার্জির জীবনে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement