গ্রাফিক— সনৎ সিংহ
কাজের সূত্রে পুলিশফাঁড়িতে আসা কলকাতা হাই কোর্টের এক আইনজীবীকে ফাঁড়ির ভিতরেই মারধরের অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে। ঘটনায় জখম ওই আইনজীবীকে হাসপাতালেও ভর্তি করাতে হয়। খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই ওই ঘটনার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্ত পুলিশকর্তার গ্রেফতারির দাবিতে হাই কোর্টের কাজ বয়কট করলেন বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবীরা। যার জেরে সোমবার, সপ্তাহের প্রথম দিনেই থমকে গেল হাই কোর্টে বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি।
ঘটনাটি রবিবার বিকেলের। হাই কোর্টের আইনজীবী সৌরভ মণ্ডল একটি মামলার কাজে গিয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থানার অন্তর্গত নেপালগঞ্জ পুলিশফাঁড়িতে। অভিযোগ, সেই সময়েই ওই ফাঁড়িতে থাকা পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর সুদীপ্ত সান্যাল প্রথমে সৌরভকে হেনস্থা করেন, তাঁকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এমনকি, তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলাও রুজু করেন। অভিযোগ, পরে ওই আইনজীবীকে মারধরও করেন সাব ইনস্পেক্টর সুদীপ্ত। আহত অবস্থায় ওই আইনজীবীকে আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। পরে ওই আইনজীবী ঘটনাটির কথা জানিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি, আইজি, পুলিশ সুপার এবং বিষ্ণুপুর থানার ওসিকে চিঠি দেন। প্রমাণ হিসাবে ওই পুলিশ ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের অনুরোধও করেন। পুলিশ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ওই সাব ইনস্পেক্টরকে শোকজ় করে তাঁকে ক্লোজ় করেছেন ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপার। অন্য দিকে, ঘটনাটির কথা জানার পর এ নিয়ে সরব হয় হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনও।
সোমবার হাই কোর্টে একটি প্রস্তাব পাশ করে কলকাতা হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সচিব শঙ্কর প্রসাদ দলপতি লিখিত ভাবে জানান, ‘‘আইনজীবীকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সাব ইনস্পেক্টরকে সাসপেন্ড করে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ করতে হবে। যত দিন না সেই দাবি মানা হচ্ছে, তত দিন বারের কোনও আইনজীবী বিচার প্রক্রিয়ার অংশগ্রহণ করবেন না।’’
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কী কী, তা আনন্দবাজার অনলাইনকে সবিস্তার জানিয়েওছেন বার অ্যাসোসিয়েশনের সচিব। তিনি বলেন, ‘‘ওই সাব ইনস্পেক্টরকে ক্ষমা চাইতে হবে। শুধু তা-ই নয়, তিনি হাই কোর্টের আইনজীবীর বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা রুজু করেছেন, তা-ও প্রত্যাহার করতে হবে।’’ দলপতি জানান, তাঁদের এই সমস্ত দাবি যদি মঙ্গলবারও না মানা হয়, তবে মঙ্গলবারও হাই কোর্ট বয়কট কর্মসূচি জারি রাখবেন তাঁরা। এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে, তা ঠিক করতে মঙ্গলবার সকালেই বারের একটি বৈঠকও ডাকা হয়েছে জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার বারের আইনজীবীরা আদালত বয়কট করায় হাই কোর্টের বেশ কয়েকটি এজলাসে বিচারের কাজ থমকে যায়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা ডাকা হলেও শেষ পর্যন্ত আইনজীবীরা উপস্থিত না হওয়ায় না শুনেই উঠে যেতে বাধ্য হন বিচারপতিরা। এমনকি, নিয়োগ মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য-সহ শিক্ষা দফতরের কয়েক জনের আধিকারিকের জামিনের মামলার শুনানিও সম্ভব হয়নি।