Abhishek Banerjee

কুন্তল মামলায় রক্ষাকবচ পেলেন না অভিষেক, হাই কোর্টের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করল না শীর্ষ আদালত

কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিবিআই এবং ইডি জেরা করতে পারবে বলে আগেই জানিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবার সুপ্রিম কোর্টও একক বেঞ্চের সেই নির্দেশ বহাল রাখল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩ ১৩:১৫
Share:

সুপ্রিম কোর্টে সোমবার শুনানি ছিল (বাঁ দিকে) কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলার। গ্রাফিক— সনৎ সিংহ।

সিবিআই এবং ইডির জেরা থেকে সুপ্রিম কোর্টেও রক্ষাকবচ পেলেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় জরিমানা দিতে হবে না তাঁকে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে কুন্তলের চিঠি সংক্রান্ত অভিষেকের মামলার শুনানি ছিল। সেখানেই শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, এ ব্যাপারে কলকাতা হাই কোর্টের একক বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছিল, তাতে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করবে না তারা। কারণ, কোনও রকম হস্তক্ষেপ মামলায় বাধা হয়ে দেখা দিতে পারে।

Advertisement

নিয়োগ মামলায় গ্রেফতার তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তলের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় অভিষেককে সিবিআই এবং ইডি জেরা করতে পারবে বলে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের বেঞ্চ। একই সঙ্গে অভিষেককে ২৫ লক্ষ টাকার জরিমানাও করেছিলেন তিনি। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টে যান অভিষেক। ইতিমধ্যেই ওই মামলার এক দফা শুনানি হয়ে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। তবে সেটি হয়েছিল বিচারপতি জেকে মাহেশ্বরী এবং বিচারপতি পিএস নরসিমহার অবকাশকালীন বেঞ্চে। বেঞ্চ জানিয়েছিল, অবকাশকালীন বেঞ্চ এই মামলায় একক বেঞ্চের নির্দেশে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তবে অভিষেককে কিছুটা স্বস্তি দিয়ে জরিমানার নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল তারা। এর পর সোমবার অভিষেকের মামলাটি ওঠে সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি নরসিমহার ডিভিশন বেঞ্চে হয় শুনানি। দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, নিয়োগ মামলায় অভিষেককে জেরা করতে পারবে সিবিআই এবং ইডি। তবে একক বেঞ্চ যে জরিমানার নির্দেশ দিয়েছিল, তা আপাতত বহাল থাকছে না। কারণ ব্যাখ্যা করে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘‘যে হেতু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই অভিষেকের মামলাটি অন্য বেঞ্চ স্থানান্তরিত করা হয়েছে, তাই এই বেঞ্চের নির্দেশের জরিমানার অংশটি ডিলিট করা হল।’’

কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় তাঁকে জেরা করার নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। এ ব্যাপারে অভিষেককে জেরা করার কথা প্রথম বলেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নিয়োগ মামলার কুন্তলের চিঠি সংক্রান্ত আবেদনের শুনানিতে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ইডি এবং সিবিআই চাইলে এ ব্যাপারে অভিষেককে জেরা করতে পারে।’’ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন অভিষেক। যা সুপ্রিম কোর্ট থেকে ঘুরে আবার হাই কোর্টেই ফিরে আসে। তবে বিচারপতি অমৃতা সিংহের বেঞ্চে। বিচারপতি সিংহের বেঞ্চে ওই মামলার শুনানি হয়। অভিষেকের আবেদনের সারবত্তা নেই জানিয়ে বিচারপতি সিংহের বেঞ্চ মামলাটি খারিজ করে দেয়। একই সঙ্গে অভিষেককে রক্ষাকবচ দিতেও অস্বীকার করে। পাল্টা অভিষেক এবং কুন্তলকে ২৫ লক্ষ টাকা করে মোট ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে বলেও জানান বিচারপতি সিংহ। তাঁর নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন অভিষেক। সেই মামলারই শুনানি ছিল সোমবার।

Advertisement

সোমবার সুপ্রিম কোর্টেও সেই মামলার রায় অভিষেকের বিপক্ষেই গেল। ইডি এবং অভিষেকের আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পর সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল, এ ব্যাপারে হাই কোর্টের একক বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছিল, তাতে আদালত নাক গলাবে না। তবে জেরার ব্যাপারে ছাড়পত্র দিলেও সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, হাই কোর্টের একক বেঞ্চে আবার যেতে পারেন মামলাকারী। পুনরায় সিদ্ধান্ত নিতে পারে হাই কোর্ট।

সোমবার সুপ্রিম কোর্টে অভিষেক মামলার শুনানিতে হাজির ছিলেন অভিষেকের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, ছিলেন ইডির আইনজীবী এবং ভার্চুয়াল শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা হাই কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলাকারী সৌমেন নন্দীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও। বিচারপতির সঙ্গে আইনজীবীদের যুক্তি তর্ক চলে বেশ কিছু ক্ষণ। অভিষেকের আইনজীবী বলেন, ‘‘এই মামলায় ইডির হাতে অভিষেকের বিরুদ্ধে কোনও বিস্তারিত তথ্য নেই। তা সত্ত্বেও দার্জিলিংয়ে দলের প্রচারের কাজে যখন ব্যস্ত ছিলেন অভিষেক, তখন তাঁকে ৬ বার ডাকা হয়েছে। এমনকি, বিমানবন্দরে অভিষেকের স্ত্রী এবং সন্তানকেও বিদেশযাত্রায় বাধা দেওয়া হয়েছে।’’

অভিষেকের আইনজীবীর এই বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি নরসিমহা বলেন, ‘‘একটা বিষয়ে তদন্ত চলছে, তাতে হাই কোর্ট তদন্তে সহযোগিতা করতে বলেছে। এখানে সমস্যা কোথায়?’’ বিচারপতির প্রশ্নে সিঙ্ঘভির পাল্টা যুক্তি দেন, ‘‘পুরোটাই তো রাজনৈতিক কারণে করা হচ্ছে। স্ত্রী এবং সন্তানকে হয়রানি করা হচ্ছে। শ্যালিকাকেও বাধা দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই ইডি অভিযোগ আনছে। আর হাই কোর্টের বিচারপতি স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করছেন। এটা হয়রানি ছাড়া কিছু নয়।’’

সিঙ্ঘভির অভিযোগ শুনে চুপ করে থাকেননি ইডির আইনজীবীও। তিনি বলেন, ‘‘এটি একটি বড় দুর্নীতির মামলা। প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা দুর্নীতি। বড় দুর্নীতিতে তদন্ত চলছে। আমরা তলব করলে আসা উচিত।’’ ইডির আইনজীবী একই সঙ্গে বলেন, ‘‘বিমানবন্দরে সোনা নিয়ে যাওয়ার সময় অভিষেকের স্ত্রীকে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। শুল্ক দফতর মামলা দায়ের করেছে। তাছাড়া ওঁরা বিচারপতির নিরপেক্ষতা নিয়ে যা বলছেন, তাতে তো ইডির কিছু করার নেই। এর জন্য ইডি তদন্ত তো থেমে থাকতে পারে না। ইডির তো নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে তদন্ত করার।’’

বিচারপতির নিরপেক্ষতার যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিকাশও। তিনি বলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় না হয় পক্ষপাতদুষ্ট। কিন্তু তার পর তো এই মামলা অন্য বিচারপতি শুনছেন। এত বড় দুর্নীতিতে দুই বিচারপতিরই নির্দেশ একই রয়েছে। দু’জনেই এই মামলার তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তার পরেও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে কী করে।

আগে যা হয়েছিল

রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ মামলায় প্রথম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম টেনে আনেন কুন্তল ঘোষ। তৃণমূলের অধুনা বহিষ্কৃত হুগলির যুবনেতা কুন্তল নিয়োগ মামলার অন্যতম অভিযুক্ত। তাঁর মাধ্যমেই বিভিন্ন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে নেওয়া ‘চাকরি পাওয়ার টাকা’ শীর্ষস্তরে পৌঁছেছে বলে অভিযোগ করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কুন্তলকে নিয়োগ দুর্নীতির ‘এজেন্ট’ বলে আদালতে উল্লেখ করেছিলেন তাঁরা। সেই কুন্তলই অভিযোগ করেছিলেন, নিয়োগ মামলায় অভিষেকের নাম নেওয়ার জন্য তাঁকে ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে আদালতকে একটি চিঠি লিখে কুন্তল জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা অভিষেকের নাম নেওয়ার জন্য তাঁকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহও করেছেন। পরে সেই চিঠিই যায় হেয়ারস্ট্রিট থানায়। ইডি এবং সিবিআইয়ের কর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন কুন্তল। যা শুনানির জন্য ওঠে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, কুন্তলের চিঠি মামলায় ইডি এবং সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে আপাতত কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না। যদিও ইডি এবং সিবিআই চাইলে কুন্তলের চিঠি সংক্রান্ত বিষয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। কেন তিনি এই নির্দেশ দিচ্ছেন, তার ব্যাখ্যাও দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

গত ৩০ মার্চ অভিষেককে নিয়ে ওই দাবি করেছিলেন কুন্তল। ঘটনাচক্রে, তার ঠিক আগের দিনই অর্থাৎ ২৯ মার্চ কলকাতার শহিদ মিনারে ছাত্র এবং যুব তৃণমূলের এক সমাবেশে অভিষেক দাবি করেছিলেন, মদন মিত্র এবং কুণাল ঘোষের মতো নেতারা যখন কেন্দ্রীয় সংস্থার হেফাজতে ছিলেন, তখন তাঁদেরকেও অভিষেকের নাম নেওয়ার জন্য ‘চাপ’ দেওয়া হয়েছিল। কুন্তলের আদালতে হাজিরা ছিল পরের দিনই। আদালতে ঢোকার মুখেই তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলে যান, নিয়োগ মামলায় অভিষেকের নাম বলানোর চেষ্টা হচ্ছে তাঁকে দিয়ে। সিবিআই এবং ইডিই তাঁর ওপর এর জন্য ‘চাপ’ দিচ্ছে বলে দাবি করেন কুন্তল।

মামলা সুপ্রিম কোর্টে যায়। তার পর আবার হাই কোর্টে ফিরে আসে। বদলায় বিচারপতির এজলাস। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ থেকে মামলাটি সরানো হয় বিচারপতি সিন্‌হার বেঞ্চে। বৃহস্পতিবার সেই মামলারই রায়দান ছিল। বিচারপতি সিন্‌হা এই মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে বজায় রাখার পাশাপাশি অভিষেক এবং কুন্তল দু’জনকেই মাথাপিছু ২৫ লক্ষ টাকা করে জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দু’টি ঘটনা কাকতালীয় হতে পারে না বলে এজলাসে মন্তব্য করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দু’জনের একই ধরনের দাবি কাকতালীয় হতে পারে না। এই মামলায় তদন্ত হওয়া দরকার। দরকারে অভিষেককেও জেরা করতে পারবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি এবং সিবিআই।’’

অভিষেক অবশ্য বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন। সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মামলা বিচারের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন অভিষেকের আইনজীবী। যার জেরে বিচারপতির এজলাস থেকে সরে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা। যদিও অভিষেককে ইডি-সিবিআইয়ের জেরা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয় না। সেই মামলা সুপ্রিম কোর্ট আবার হাই কোর্টেই ফিরিয়ে দেয়। তবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বদলে অন্য বিচারপতির বেঞ্চে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় হাই কোর্টকে। কুন্তলের চিঠি সংক্রান্ত অভিষেকের মামলাটি এর পর যায় বিচারপতি অমৃতা সিংহের বেঞ্চে। তবে তাতেও সুরাহা হয়নি অভিষেকের। তিনি ইডি এবং সিবিআইয়ের জেরার হাত থেকে কোনওরকম রক্ষাকবচ পাননি।

বিচারপতি সিংহ এই সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশই বহাল রাখেন। কুন্তলের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি সিংহের কাছে অভিষেকের আইনজীবী হাই কোর্টের পুরনো নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তৃণমূল নেতাকে অন্তর্বর্তী রক্ষাকবচ দেওয়ার আর্জিও জানিয়েছিলেন তিনি। বিচারপতি অমৃতা সিংহ বলে দেন, “আদালতের দরজা ২৪ ঘণ্টা ৭ দিন খোলা থাকবে। প্রয়োজন মনে করলে যখন খুশি আসবেন। কিন্তু কোনও রক্ষাকবচ নয়।”

গত ১৮ মে এই মামলার অন্য আবেদনটির শুনানি ছিল। যেখানে অভিষেক চেয়েছিলেন, তাঁকে ইডি, সিবিআই জেরা করতে পারবে বলে যে নির্দেশ আদালত দিয়েছিল, তা পুনর্বিবেচনা বা প্রত্যাহার করা হোক। কিন্তু অভিষেকের এই আবেদনটিও খারিজ হয়ে যায়। বিচারপতি সিংহের বেঞ্চ বলে, অভিষেকের মামলা ধোপে টেকেনি। যে আবেদন অভিষেক করেছিলেন, তার কোনও সারবত্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই মর্মে অভিষেক এবং কুন্তল দু’জনকেই ২৫ লক্ষ টাকা করে মোট ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা দেওয়ার নির্দেশও দেন বিচারপতি। পরে ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান অভিষেক। শীর্ষ আদালতে জরিমানার উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। কিন্তু সিবিআই এবং ইডির জেরায় কোনও বাধা দেয়নি।

উল্লেখ্য, পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার আগে রাজ্যের জেলায় জেলায় নবজোয়ার যাত্রা কর্মসূচি চালাচ্ছিলেন অভিষেক। ৫৫ দিন ধরে চলে সেই কর্মসূচি। এর মধ্যে কুন্তলের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিষেককে ডেকে পাঠায় সিবিআই। কলকাতার নিজাম প্যালেসে তাঁকে প্রায় ৯ ঘণ্টা ৪০ মিনিট জিজ্ঞাসাবাদ করেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকরা। যদিও এই দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অভিষেক বেরিয়ে এসে বলেন, ‘‘শুধু শুধুই আমায় ডেকে পাঠানো হচ্ছে। এই জিজ্ঞাসাবাদের নেট রেজাল্ট জিরো।’’

এর পরেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে অভিষেকের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেছিলেন, বার বার অভিষেককে ডেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরা করার নামে হেনস্তা করা হচ্ছে। তিনি এ-ও বলেছিলেন, অভিষেক আশঙ্কা করছেন, পরের বার তাঁকে গ্রেফতার করা হবে। পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার চলাকালীন তাঁকে সমন পাঠিয়ে তলব করা হয়েছে। তিনি তাতে সাড়া দিয়ে জেরায় যোগ দেওয়ার পরও তাঁকে হেনস্তা করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য তার পরও জেরার পক্ষেই রায় দেয়।

এর মধ্যেই গত ৮ জুন অভিষেকের কাছে নিয়োগ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইডির চিঠি আসে। রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে মঙ্গলবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে (যেখানে ইডির দফতর) অভিষেককে তলব করা হয় ১৩ জুন। কিন্তু অভিষেক জানিয়ে দেন, তিনি পঞ্চায়েত ভোট পর্ব মেটার আগে কোনও রকম হাজিরা দিতে পারবেন না। ভোটের সময় তাঁর অনেক কাজ। সেই কাজ মিটলে ৮ জুলাইয়ের পর তিনি দেখতে পারেন। অভিষেকের কথায়, ‘‘আমার সৌজন্য আমার দুর্বলতা নয়। আপনি যখন ডাকবেন, তখনই আমাকে যেতে হবে তা নয়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে ইডির দফতরে গিয়ে ১০-১২ ঘণ্টা অপচয় করার মতো সময় আমার হাতে নেই। ৮ জুলাই পঞ্চায়েত ভোট। তার পরে আপনারা যখন ডাকবেন, তখনই যাব।’’ ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত ভোট অতিক্রান্ত। ১১ জুলাই ভোটের গণনা। তার পর অভিষেককে ডাকা হবে কি না, তা অবশ্য সময়ই বলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement