Cyclone Amphan

বাবা-মায়ের জন্য কুয়ো কাটেন মেয়ে

কেন এমন কাজ? পাড়ায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তিনটি কল থাকলেও তার উপরে ভরসা করে প্রায় ৩৪টি পরিবার।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২০ ০৪:১৮
Share:

কুয়ো কাটছেন ববিতা। সঙ্গী তাঁর দিদি সুমিত্রা। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

পাহাড় কেটে এলাকার মানুষের জন্য রাস্তা তৈরি করেছিলেন বিহারের ‘মাউন্টেন ম্যান’ দশরথ মাঁঝি। এলাকার জল-সঙ্কট মেটাতে কুয়ো খুঁড়েছেন মধ্যপ্রদেশের বৃদ্ধ সীতারাম রাজপুত। সে সবেরই ছায়া যেন পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জে। বাবা-মা’র জলকষ্ট মেটাতে শাবল, গাঁইতি হাতে কুয়ো খুঁড়ছেন পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জের কলেজ-ছাত্রী ববিতা সোরেন। এ কাজে তাঁর পাশে রয়েছেন মা ও দিদি।

Advertisement

রানিগঞ্জের বক্তারনগরের রেলগেট মাঝিপাড়ায় শনিবার গিয়ে দেখা গেল, মাটির বাড়ির পাঁচিল লাগোয়া বাঁশের কাঠামো ধরে কুয়োর গর্তে নামছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতোকত্তর, বিএড কলেজের অন্তিম বর্ষের পড়ুয়া ববিতা। মাটি কেটে বালতি করে তুলে দিলেন মা মিনাদেবী ও দিদি সুমিত্রার হাতে।

কেন এমন কাজ? পাড়ায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তিনটি কল থাকলেও তার উপরে ভরসা করে প্রায় ৩৪টি পরিবার। ‘‘জলের তোড় তেমন নয়। বাড়ির কাছের কলে দু’ঘণ্টা জল আসে। এক বালতি জল ভরতেই বহু সময় লাগে’’, বলেন মিনাদেবী। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল এলাকায় বণ্টনের দায়িত্ব বল্লভপুর পঞ্চায়েতের। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের প্রধান মমতা প্রসাদ বলেন, ‘‘জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলাধারের জলধারণ ক্ষমতা কম হওয়ায় বাড়ি-বাড়ি জল দেওয়া যাচ্ছে না। পঞ্চায়েত জলাধার তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে।’’ দফতরের আসানসোল ডিভিশনের সহায়ক বাস্তুকার সুব্রত রায় বলেন, ‘‘জল বণ্টনের দায়িত্ব দ্রুত পঞ্চায়েতের কাছ থেকে ফেরানোর প্রস্তুতি চলছে। তার পরে বাড়ি-বাড়ি জল-সংযোগ দেওয়া হবে।’’ প্রশাসন যা-ই বলুক, পড়শিরা কিন্তু বলছেন, ‘‘ধন্যি মেয়ের জেদ।’’ ববিতা বলেন, ‘‘মাতৃদিবস, পিতৃদিবসে কিছুই দিতে পারি না বাবা-মা-কে। ঠিক করি, ওঁদের জলকষ্টটা অন্তত মেটাব।’’ কুয়ো কাটা শুরু ২০১৯-এর ডিসেম্বরে। পাঁচ ফুট মাটি কাটার পরে ‘কষ্ট’ হওয়ায় কাজ বন্ধ করেন। ‘লকডাউন’-পর্বে ফের জেদ চাপে।

Advertisement

বাবা হপনা সোরেন ও মা মিনাদেবী বলেন, ‘‘মিস্ত্রিরা কুয়ো কাটতে ফুট প্রতি পাঁচশো টাকা নেন। যা দিতে পারব না।’’ তা জেনেই ববিতা গত ১৪ জুন থেকে ফের মাটি কাটা শুরু করেছেন। ২৩ জুন ১৮ ফুট মতো মাটি কাটা হলে প্রথম জলের দেখা মেলে। ববিতা বলেন, ‘‘প্রতিদিন এক-দেড় ফুট মাটি কাটছি। ইচ্ছে আছে, ২৪ ফুট মতো কাটার। ইউটিউবে দেখেছি, রানিগঞ্জের মাটিতে ৩০ ফুটের কাছাকাছি কাটতে পারলেই কুয়ো করা সম্ভব।’’

কুয়ো খোঁড়ার সময়ে মাটি ধসার আশঙ্কা থাকে। যদিও ববিতার দাবি, ‘‘সেগুন গাছের পাশে কুয়ো কাটছি। গাছ চারপাশের মাটিকে আঁকড়ে ধরে রাখে। তাই মাটি চাপা পড়ব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement