নবান্ন থেকে বার্তা রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্য পুলিশের ডিজি পদে পুনর্বহাল হওয়ার ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। তার মধ্যেই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে কড়া বার্তা দিলেন রাজীব কুমার। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘কাউকে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কোনও রকম সুযোগ দেওয়া হবে না।’’ অনেকেই মনে করছেন, রাজীবের ওই বার্তা আদতে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের মতো বিচারসভা চালানো জেসিবি, জায়ান্টদের মতো শাসকদলের প্রভাবশালী ‘দাদা’দের জন্যই। যদিও রাজীব কথাটি কাদের উদ্দেশে বলেছেন তা স্পষ্ট করেননি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলিতে সাদ্দাম হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে যে সুড়ঙ্গের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, সে সম্পর্কেও ডিজিকে প্রশ্ন করা হয়। রাজীব বলেন, ‘‘দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যে সুড়ঙ্গে খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, সেটা নিয়ে উত্তেজনা ছড়ানোর যেমন প্রয়োজন নেই, তেমনই আমরা বিষয়টাকে হালকা করেও দেখছি না।’’ ডিজির পাশে দাঁড়িয়ে এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘এটা এক ধরনের প্রতারণার চক্র। কত বড় বিষয়, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। আমরা তদন্ত করে দেখছি।’’
লোকসভা ভোটের আগে নির্বাচন কমিশন রাজীবকে রাজ্য পুলিশের ডিজির পদ থেকে সরালেও রাজ্য সরকার তাঁকে আবার ওই পদে ফিরিয়ে এনেছে সোমবার। তার পরেই মঙ্গলবার নবান্নে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজীব। তিনি রাজ্যবাসীকে সতর্ক করেন ধর্মীয় উৎসব পালন করার ব্যাপারে। সোমবার ছিল উল্টোরথ। তবে রাজ্যে কোথাও কোথাও তা মঙ্গলবারও পালন করা হচ্ছে। বুধবার রয়েছে মহরম। রাজীব বলেছেন, ‘‘মহরম ও উল্টোরথ-সহ বিভিন্ন উৎসব পালন করুন। কিন্তু অন্যের সমস্যা বা অসুবিধা না করে। মনে রাখবেন আমাদের স্লোগান, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। উৎসব পালন করার সময় সেটা মাথায় রেখেই পালন করুন।’’
ডিজি পদে রাজীবকে পুনর্বহাল করার আগে কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই রাজ্যে নানা ধরনের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। অজস্র গণপিটুনির ঘটনার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে এক মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধর, উত্তর দিনাজপুরে সালিশি সভা বসিয়ে এক যুগলকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। আড়িয়াদহের তালতলা ক্লাবের ভিতরের একটি পুরনো ভিডিয়োয় (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) দেখা গিয়েছে, এক জনকে হাত-পা ধরে চ্যাংদোলা করে ঝুলিয়ে লাঠি দিয়ে কোমর ভেঙে দেওয়ার মতো করে পেটানো হচ্ছে। এক কিশোরকে মোবাইল চুরির শাস্তি দিতে তার যৌনাঙ্গ সাঁড়াশি দিয়ে টানতেও দেখা গিয়েছে একটি ভিডিয়োয় (আনন্দবাজার অনলাইন ওই ভিডিয়োরও সত্যতা যাচাই করেনি)। উপরোক্ত তিনটি ঘটনাতেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে তৃণমূলের কর্মী তথা এলাকার প্রভাবশালী ‘দাদা’দের দিকে। যার মধ্যে অন্যতম চোপড়ার তাজিমুল ইসলাম ওরফে জেসিবি এবং আড়িয়াদহের জয়ন্ত সিংহ ওরফে জায়ান্ট। মঙ্গলবার রাজীব কুমারের বৈঠকে সেই সব প্রসঙ্গ উঠতেই রাজীব জানান, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ কাউকে দেবে না প্রশাসন।