সরকারি আধিকারিকদের জন্য ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত পরিবহণ দফতরের। —প্রতীকী ছবি।
গত কয়েক বছর ধরেই রাজ্যে ‘ইলেকট্রিক ভেহিকলস’ চালানোর উপর জোর দিচ্ছিল পরিবহণ দফতর। গণপরিবহণে যাতে আরও অনেক বেশি সংখ্যায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চালানো যায় সেই বিষয়ে একাধিক পদক্ষেপও করা হয়েছিল। কিন্তু এ বার সরাসরি রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের জন্য বৈদ্যুতিক চালিত গাড়ি ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেওয়া হল। সম্প্রতি এই সংক্রান্ত বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে পরিবহণ দফতর। যেখানে বলা হয়েছে, এ বার থেকে প্রশাসনের সর্বস্তরের আধিকারিকদের জন্য বৈদ্যুতিক গাড়ি ভাড়া নিতে হবে। তার জন্য নতুন দরও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য রাজ্য সরকার মাসে খরচ করবে ৪৬ হাজার টাকা। ১০০ কিলোমিটার চলাচলের জন্য এই ভাড়া বরাদ্দ করা হচ্ছে। তার পর গাড়ি যত কিলোমিটার চলবে, তাতে প্রতি কিলোমিটার পিছু ৮ টাকা করে দেওয়া হবে। নতুন বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই দরেই বিভিন্ন সংস্থার থেকে গাড়ি ভাড়া নেবে পরিবহণ দফতর। ডিজ়েল বা পেট্রলের গাড়ি ভাড়া নেওয়া যাবে না এমনটা নয়। তবে এই ধরনের কোনও গাড়ি ভাড়া নিতে হলে আগে অর্থ দফতরের অনুমতি নিতে হবে।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, আদালতের একটি নির্দেশের কারণে এ বছর প্রায় ২০ হাজার পেট্রল এবং ডিজ়েল চালিত ট্যাক্সি বাতিল হয়ে যাবে। ১৫ বছর সময়সীমা উত্তীর্ণ হওয়া এই গাড়িগুলির বিকল্প বন্দোবস্ত করতেই হবে। না হলে রাজ্য প্রশাসনে কর্মরত আধিকারিকদের জন্য গাড়ি পাওয়া সম্ভব হবে না। এই বড় অংশের গাড়ি বাতিল হয়ে যাওয়ার ফলে নতুন করে গাড়ি ভাড়া নেওয়ার প্রয়োজন হবে রাজ্য সরকারের। সে ক্ষেত্রে আর পেট্রল বা ডিজ়েল চালিত গাড়ি ভাড়া না নিয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবহণ দফতর। কারণ, রাজ্য সরকার চাইছে, শহর কলকাতার দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশি করে বৈদ্যুতিক যানবাহন চালাতে। তাতে শহরে দূষণের পরিমাণ এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের বেশি অর্থ খরচ হলেও, ‘ই’ যানবাহনের উপরেই নির্ভরশীল হতে চাইছে রাজ্য সরকার। কারণ সরকার বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার থেকেই গাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সরকার যদি বেশি সংখ্যায় বৈদ্যুতিক গাড়ি ভাড়া নেয়, তা হলে বাজারে বেশি সংখ্যায় বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হবে। ফলে এক দিকে যেমন দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তেমনই বৈদ্যুতিক গাড়ি চালানোর জন্য কোনও চাপ দিতে হবে না বেসরকারি সংস্থাগুলিকে। তাই বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনতে একগুচ্ছ ছাড়ের ঘোষণা ইতিমধ্যেই করেছে পরিবহণ দফতর।
অন্য দিকে, যে সমস্ত বৈদ্যুতিক গাড়ি পরিবহণ দফতর ভাড়া নেবে তার ভাড়াও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যা পেট্রল এবং ডিজ়েল চালিত গাড়ির থেকে অনেকটাই বেশি। ২০১৮ সালে শেষ বার এই ধরনের লাক্সারি ট্যাক্সির ভাড়া বাড়িয়েছিল রাজ্য সরকার। সে ক্ষেত্রে প্রতি দিন ৪৬৮ টাকা দরে গাড়ি ভাড়া নিত রাজ্য। কিন্তু সেই ভাড়া এক লাফে প্রায় তিন গুণ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি। এ প্রসঙ্গে পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “রাজ্য সরকার আগেও বৈদ্যুতিক গাড়ি ভাড়া নিয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে কোনও নিয়ম বা দর ঠিক ছিল না, সংখ্যাও ছিল হাতেগোনা। কিন্তু এ বার নিয়ম এবং দর ঠিক করেই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। যার ফলে কোনও পক্ষেরই সমস্যা থাকবে না বলেই আমরা মনে করছি।” এ প্রসঙ্গে জয়েন্ট কাউন্সিল অফ লাক্সারি ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শঙ্কর ঘোষ বলেন, “আমরা রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে পরিকাঠামো না গড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি চালানো কতটা সফল হবে, তা নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে অনেক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলেই আমরা মনে করছি।”