সমাজে শিক্ষার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। কোনও একক ব্যক্তির জীবনযাত্রার মান উন্নত করা থেকে তাঁর বিকাশের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করে শিক্ষা। যার উপরে ভিত্তি করে আগামী দিনে সেই ব্যক্তি সমাজে পরিবর্তন আসতে পারে।
বলা হয়, কোনও ব্যক্তির সাফল্য নির্ভর করে তাঁর শিক্ষার উপর; সে তাঁর স্কুলে যা যা শিখছে তা সাধারণ জীবনে কতটা প্রয়োগ করছে সেই ক্ষমতার উপর। শিক্ষা দীর্ঘমেয়াদে শুধুমাত্র তথ্যই নয়, কোনও ব্যক্তির সামগ্রিক বিকাশে সহায়তা করে এবং জীবনে চলার পথে বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে থেকে এক জন ব্যক্তি হিসাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। এই দৃষ্টিভঙ্গিগুলির কথা মাথায় রেখে, বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (BCCI) ১৯ নভেম্বর, কলকাতায় পঞ্চম বার্ষিক শিক্ষা সম্মেলন ২০২২-এর আয়োজন করেছিল। এই বছরের থিম ছিল 'দ্য কনভার্জিং এডুকেশনাল হরাইজন'।
এই কনক্লেভে উপস্থিত ছিলেন দিকপাল শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের সঙ্গেই জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ (NEP 2020)-র প্রভাব ঠিক কতটা পড়তে পারে, তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। তা ছাড়াও বিভিন্ন প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা উঠে আসে।
অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলতে গিয়ে বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট এবং এক্সাইড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সিইও ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবীর চক্রবর্তী বলেন, “অতিমারির সময় আমরা সকলেই বুঝতে পেরেছিলাম যে শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষাকে কী ভাবে পৌঁছে দিতে হবে। যেহেতু ক্লাসরুমে গিয়ে ক্লাস করা সম্ভব ছিল না, সেহেতু অনলাইনই ছিল শিক্ষার অগ্রগতির অন্যতম উপায়। আমরা সেই অতিমারিকে অনেকটা পিছনে ফেলে এগিয়ে এসেছি। সেই সময়ে আমরা যা যা শিখেছি, সেগুলিকে একত্রিত করে ফের পথ চলতে শুরু করেছি। এটি আসলে শিক্ষার ক্ষেত্রে আসলে দিগন্তের অভিসারী। সেই সঙ্গে বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করে তুলতে বিভিন্ন পদ্ধতিরও অবলম্বন করছি আমরা।”
তবে অনলাইনে শিক্ষা ব্যবস্থার অনেকগুলি সমস্যাও রয়েছে। ভারতের মতো দেশের প্রত্যন্ত এলাকাতেও এমন কিছু গ্রাম বা অঞ্চল রয়েছে, যেখানে এখনও পর্যন্ত বিদ্যুৎ বা উন্নত প্রযুক্তি উপলব্ধ নেই। যা সেখানকার শিশুদের শুধুমাত্র পড়াশুনার ক্ষেত্রেই ক্ষতি করে না, পাশাপাশি উন্নত অঞ্চলগুলির শিশুদের সঙ্গে একই সারিতে দাঁড়াতেও পারে না। এই ইস্যুটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পর্যলোচনা করা হয় এই শিক্ষা সম্মেলনে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি খসড়া পরিকল্পনা পেশ করার উদ্যোগেও নেওয়া হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর সত্যম রায়চৌধুরী একই বলেন, “আমরা দেশে প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতকে সাক্ষর করার লক্ষ্য নিয়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই বিশেষ পরিবর্তন ঘটাতে হলে দেশের প্রত্যেকেরই মৌলিক ডিজিটাল প্রযুক্তির অ্যাক্সেস থাকতে হবে। এমন অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে, যারা মেট্রো শহর থেকে অনেক দূরে বাস করে। ফলে অনেকাংশেই তারা শিক্ষার মৌলিক প্রয়োজনীয়তা থেকে বঞ্চিত। এই কনক্লেভের মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য, সরকারী কর্তৃপক্ষ এবং বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলির কাছে আবেদন করা, যাতে দেশের সম্মিলিতভাবে অগ্রগতির জন্য শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক প্রযুক্তি প্রদান করা যায়। আমরা এটিকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাব।”