গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আমলাদের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে আইএএস ক্যাডার রুল সংশোধনে উদ্যোগী হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ১৯৫৪ সালের আইএএস (ক্যাডার) আইন সংশোধনের এই উদ্যোগ ভারতের সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী।
সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে আইএএস এবং আইপিএস অফিসারদের পোস্টিংয়ের বিষয়ে যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রয়েছে, আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া কার্যকর হলে তা গুরুতর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ আইএএস ক্যাডার আইনের সংশোধন করতে চেয়ে কিছু দিন আগেই নবান্নে চিঠি পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। এ বিষয়ে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে রাজ্যকে অবস্থান জানাতে বলা হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর এই চিঠি।
প্রস্তাবিত সংশোধনীতে আইএএস অফিসারদের ডেপুটেশনে পাঠানোর একতরফা ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে থাকছে। এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন মমতা। তাঁর দাবি, আইএএস, আইপিএস এবং আইএফএস (ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস)-এর অফিসারদের পরিচালনারে ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্য দুই সরকারেরই ভূমিকা রয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন এবং আইনশৃঙ্খলা ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার ক্ষেত্র ওই অফিসারেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উন্নয়ন এবং জনকল্যাণ কর্মসূচিতেও তাঁদের ভূমিকা থাকে। এটা মাথায় রেখে রাজ্যের ভূমিকা আরও বা়ডানো উচিত।’
কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনের প্রশ্নে সাধারণ ভাবে রাজ্যের মতামত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন আমলা মহলের অনেকেই। তাঁদের যুক্তি, রাজ্যের সম্মতি বা ছাড়পত্র না-থাকলে কোনও আইএএস বা আইপিএস অফিসার কেন্দ্রের ডেপুটেশনে যোগ দিতে পারেন না। কিন্তু অনেকের বক্তব্য, কেন্দ্র ডেপুটেশনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বজায় রাখলে সার্ভিস রুলের ৬(১) ধারা অনুযায়ী রাজ্যের কিছু করার নেই। রাষ্ট্রপতির দ্বারা নিযুক্ত সর্বভারতীয় ক্যাডার অফিসারদের নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ বাধলে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই মানতে হবে রাজ্যকে।
বস্তুত, গত বিধানসভা ভোটের আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনার পরে রাজ্যের তিন আইপিএস অফিসারকে ডেপুটেশনে পাঠানো বা কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘বৈঠক-জটিলতা’র পরে তৎকালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে কর্মিবর্গ এবং প্রশিক্ষণ মন্ত্রকে (ডিওপিটি) যোগদানের নির্দেশের ঘটনায় সার্ভিস রুলের ওই ধারারই প্রয়োগ করেছিল কেন্দ্র। রাজ্য এক্তিয়ারের প্রশ্নে অনড় থাকায় কেন্দ্র ওই তিন আইপিএস অফিসারকে টেনে নিতে পারেনি মোদী সরকার। অন্য দিকে, আলাপন নিজেই ইস্তফা দিয়েছিলেন। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে এ বার ক্যাডার আইনের সংশ্লিষ্ট ধারার বাধ্যতামূলক প্রয়োগের পথে হাঁটতে চাইছে আইএএস-দের ক্ষেত্রে সংশোধিত আইন চালু করা গেলে আগামী দিনে আইপিএস এবং আইএফএস অফিসারদের ক্ষেত্রেও তেমনই পদক্ষেপ করার সম্ভবনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, রাজ্যের অমতে অফিসারদের টেনে নেওয়া হলে জনস্বার্থ যেমন বিঘ্নিত হবে। কারণ, সংশ্লিষ্ট অফিসারেরা নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিযুক্ত থাকেন। তা ছাড়া এমন পরিস্থিতিতে আধিকারিকদের মনোবল ধাক্কা খেতে পারে। ডেপুটেশনের ক্ষেত্রে কেন্দ্র-রাজ্য পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সম্মতি থাকা প্রয়োজন বলে তাঁর দাবি। সেই সঙ্গে গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মোদীর উদ্দেশে মমতার মন্তব্য, ‘আপনি নিজেও অনেক বছর একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তাই আমার বক্তব্যের সত্যতা বুঝতে পারবেন।’