পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নী। ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মীয়ের সঙ্গে যা হয়েছিল, তারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে পঞ্জাবে। এ ভাবেই তাঁর ভাইপোর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের ঘটনায় সরব হলেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নী।
ভোটমুখী পঞ্জাবে আজ লুধিয়ানা, মোহালি ও পঠানকোটের ১০টি জায়গায় অবৈধ বালি খননের মামলায় তল্লাশি অভিযান চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। যার মধ্যে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নীর ভাইপো ভূপিন্দর সিংহ হানির মোহালির বাড়িও। এর পরেই বিজেপিকে নিশানা করেন চন্নী। তিনি জানান, ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে কেন্দ্রের শাসক দল বিরোধীদের চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে।
গত বছর পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। অভিষেকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের হয়। আজ সেই ঘটনারই উল্লেখ করেছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও আজ বিজেপিকে নিশানা করে টুইট করেন, ‘‘‘ইডি অভিযান বিজেপির প্রিয় অস্ত্র। কারণ, তাদের নিজেদেরই অনেক কিছু লুকোনোর আছে। আমাদের কোনও ভয় নেই।’’
চন্নীর ভাইপোর বিরুদ্ধে মামলাটির সূত্রপাত ২০১৮ সালে। কুদরত দীপ সিংহ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পঞ্জাব পুলিশ আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনের আওতায় অভিযোগ দায়ের করে। শহিদ ভগৎ সিংহ নগরের নওয়ানশহরে কুদরতের নিজের খনি রয়েছে। এ হেন কুদরত দু’টি কোম্পানি তৈরি করেন। যার ডিরেক্টর মু্খ্যমন্ত্রী চন্নীর ভাইপো ভূপিন্দর এবং সন্দীপ সিংহ নামে আর এক জন।সেই সূত্রেই চন্নীর ভাইপোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি। খনি অফিসারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক ভাবে অবৈধ বালি খননের মামলাটি নওয়ানশহরের রোহন থানায় দায়ের করা হয়। মোট অভিযুক্তের সংখ্যা ২৬।
এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, বালিভর্তি অন্তত ৩০টি ট্রাক আটক করে পুলিশ দেখে যে, ওই ট্রাকে যে বালি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তা অনুমোদনহীন অঞ্চল থেকে অবৈধ ভাবে তোলা হয়েছিল। বালি তোলার বিভিন্ন যন্ত্রপাতিও উদ্ধার করা হয়। সেই অভিযোগ উপর ভিত্তি করেই অভিযানে নামে ইডি।
কংগ্রেস নেত্রী তথা পঞ্জাবে দলের মিডিয়া কো অর্ডিনেটর অলকা লাম্বা এই ঘটনায় নিশানা করেছেন বিজেপিকে। তিনি জানান, ভোটের সময়ে সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতর শাসক বিজেপির হাতিয়ার। এর পরেই তিনি তিন রাজ্য বিজেপির বিরোধী শিবিরে নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। সেখানে বলা হয়, ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিনের কন্যার বাড়িতে ভোটের ঠিক দু’দিন আগে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল আয়কর দফতর। এর পরে পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে ভোটের মাস খানেক আগে সিবিআই তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। মহারাষ্ট্রেও একই চিত্র। এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের বিরুদ্ধে ইডি-র অভিযানও নির্বাচনের আগেই। অলকা জানান, বিজেপির এই কৌশলে কংগ্রেস শঙ্কিত নয়। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর জনপ্রিয়তায় বিজেপিই উদ্বিগ্ন। এই অভিযানের যথার্থ উত্তর নির্বাচনে পঞ্জাবের মানুষ দেবেন বলেও আত্মবিশ্বাসী এই কংগ্রেস নেত্রী।
এই ঘটনায় আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল জানিয়েছেন, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয়ের বাড়িতে অভিযান চালানো দুঃখজনক। তবে তার পরেই চন্নী ও তাঁর ভাইপোকে নিশানা করে কেজরীওয়াল জানান, ওঁরা অবৈধ বালি দুর্নীতিতে যুক্ত। আপ প্রধানের এই অভিযোগ নতুন নয়। আগেও বালি খনন দুর্নীতি নিয়ে একাধিক বার সরব হয়েছেন কেজরীওয়াল। মুখ্যমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় তুলে জানিয়েছেন, দুর্নীতি রুখতে চন্নী কোনও পদক্ষেপ করছেন না।
আপ ও বিজেপির চন্নীকে নিশানা আসলে তাদের দলিত বিরোধী মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ বলে অভিযোগ কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার।