কলকাতা পুরসভার অধীন পুর বিদ্যালয়ের শৌচাগার সংস্কারে ৩৮ লক্ষ টাকার গরমিলের অভিযোগ উঠেছে। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা পুরসভার অধীন পুর বিদ্যালয়ের শৌচাগার সংস্কারে ৩৮ লক্ষ টাকার গরমিলের অভিযোগে আগেই তিন আধিকারিককে শো-কজ় করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। তাঁদের উত্তরে অসঙ্গতি ধরা পড়ায় এ বার বছর ছয়েক আগের ওই কাজ দেখতে পুরসভার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরকে দিয়ে পরীক্ষা করাবে পুরসভা।
অভিযোগ, ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৬৩টি পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশেই কাজ হয়নি। তা সত্ত্বেও সংস্কারের কাজে ঠিকাদারদের দেওয়া বিল বাবদ মোটা টাকা মেটানো হয়েছিল। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে জানা যায়, ওই সময়ের মধ্যে শৌচাগার সংস্কারের কাজ কোনও ইঞ্জিনিয়ারের তত্ত্বাবধানেই হয়নি।
পুরসভার শিক্ষা বিভাগের তরফে ডিজি (সিভিল) পি কে দুয়ার কাছে ইতিমধ্যেই ৬৩টি পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগারের তালিকা পাঠানো হয়েছে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের তরফে সেই তালিকা প্রতিটি বরোর দায়িত্বে থাকা এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের পাঠানো হয়েছে। এক পুরকর্তা বুধবার বলেন, ‘‘বরোর দায়িত্বে থাকা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারেরা ৬৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার ধরে ধরে খতিয়ে দেখবেন। ওঁদের রিপোর্ট দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’’
পুরসভার শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ৬৩টি পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি শৌচাগারের জন্য ৬০ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছিল। অভিযোগ ওঠে, স্কুল উন্নয়ন কমিটিকে অন্ধকারে রেখে নিয়মের তোয়াক্কা না করেই সংস্কার হয়েছিল। বিদ্যালয়ের ভুয়ো প্যাড তৈরি করে সেখানে বিল দেখানো হয়। একাধিক প্রধান শিক্ষকের সই নকলেরও অভিযোগ ওঠে। পুর শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই সময়ের মধ্যে সংস্কারের কাজে কোনও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে এনওসি নেওয়া হয়নি। এই ঘটনায় শিক্ষা বিভাগের তদানীন্তন তিন আধিকারিককে আগেই শো-কজ় করা হয়েছে। তাঁরা উত্তরও দিয়েছেন। তবে উত্তরে অসঙ্গতি ধরা পড়ায় বিষয়টি যাচাই করতে পুরসভার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হবে। সেই রিপোর্ট এলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।’’
শৌচাগার সংস্কারে অনিয়মের বিরুদ্ধে সেই সময়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল বাম প্রভাবিত শিক্ষকদের সংগঠন ‘কলিকাতা পৌর শিক্ষক ও কর্মী সঙ্ঘ’। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অশোককুমার চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘শৌচাগার সংস্কারের শুরু থেকেই আমরা
দাবি করেছিলাম, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের তত্ত্বাবধানে সংস্কারের কাজ হোক। কিন্তু সরাসরি ঠিকাদারদের দিয়ে করানো হয়েছিল।’’ তাঁর ক্ষোভ, ‘‘অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নিতে আগেই আমরা মেয়রকে চিঠি দিয়েছি। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল না। পুজোর পরে ফের মেয়রের দ্বারস্থ হব।’’