— (বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)।
যৌথ প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের চাপানউতোর অথবা দোষ ঠেলাঠেলি আকছার দেখা যায়। তবে এ রাজ্যে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার নিরাপত্তা নিবিড় করার লক্ষ্যে রাজ্যের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রশাসনের খবর, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ‘লাল ফিতের ফাঁস’ খুলে দ্রুত জমি জোগাড়, মালিকদের থেকে সরাসরি জমি কিনে এবং কিছু ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের জমি কেন্দ্রকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। প্রতিবেশী দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে রাজ্যের এই পদক্ষেপেই খুশি দিল্লি। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “দেশের নিরাপত্তা যে অগ্রাধিকার, সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে। সে কথা মাথায় রেখে জট কাটাতে আরও তৎপর হতে হবে প্রত্যেককে, তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।”
প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব গোবিন্দ মোহন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকেই পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া অরক্ষিত এলাকাগুলির নিরাপত্তা বাড়াতে জমির জোগাড় এবং সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কথাবার্তা হয়।
গত কয়েক মাসে রাজ্য যে ভাবে জমি জোগাড় করেছে, বৈঠকে তার প্রশংসা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব। কেন্দ্রের তরফে সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, এ রাজ্যে জমি জোগাড়ের পদ্ধতি কঠিন এবং সংবেদনশীল। তা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটে আটকে থাকা জমিগুলি জোগাড় করতে রাজ্য যে-যে পদক্ষেপ করেছে, তাতেই সন্তুষ্ট কেন্দ্র।
প্রসঙ্গত, জমি জোগাড় করা নিয়েই অতীতে রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিস্তর টানাপড়েন চলেছে। রাজনাথ সিংহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন এবং বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে রাজ্যের একাধিক বৈঠক হওয়ার পরেও সমস্যা মেটেনি। এমনকি, গত বছরের শেষে সুপ্রিম কোর্টের একটি মামলার শুনানিতে সরাসরি রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল কেন্দ্র।
প্রসঙ্গত, এ রাজ্যের ন’টি জেলায় বাংলাদেশ সীমান্ত আছে। সেগুলির বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও সুরক্ষিত নয়। সেই কাজ করতে ইতিমধ্যেই মন্ত্রিসভার একাধিক বৈঠকে কিছুটা নিঃশব্দেই জমি জোগাড়ে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। ওই জমিগুলি বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়ার কথা। পুজোর আগে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলির সঙ্গে বৈঠক করে নবান্নের সর্বোচ্চ মহল বার্তা দিয়েছে, দ্রুত জমি কেন্দ্রের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং বাকি সমস্যার সমাধানে বিএসএফের সঙ্গে সমন্বয় করে পদক্ষেপ করতে হবে।
প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, কয়েকটি জায়গায় এখনও সমস্যা কাটেনি। যেমন, বিএসএফ কয়েকটি ক্ষেত্রে কেন্দ্রের থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ আনতে পারেনি। সেই অর্থ এলেই জমির ব্যবস্থা চূড়ান্ত হবে। কারণ, জমির মালিকের সঙ্গে অনেক আগে দর নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তারপর সময় কেটে যাওয়ার বাজারদর বেড়ে গিয়েছে। জমির মালিক এখন নতুন দরে জমি বিক্রি করতে আগ্রহী। রাজ্যের জমি নীতি অনুযায়ী সেই পদক্ষেপই করতে হবে। পাশাপাশি, সরকারি খাস জমি কেন্দ্রকে হস্তান্তর করার পদ্ধতিও রয়েছে সরকারি স্তরে। সেই পদ্ধতিতেও কেন্দ্র অর্থ বরাদ্দ করে থাকে।
মালদহ, মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় আগেই জমি চিহ্নিত করেছিল বিএসএফ। কিন্তু বর্তমানে সেগুলি বন্যাপ্রবণ হয়ে পড়েছে এবং গঙ্গায় জলস্তর বাড়ায় সেখানে চৌকি তৈরি করা অসম্ভব। বিএসএফের কাছ থেকে এ কথা জানার পরে নতুন জমি খোঁজা শুরু হয়েছে।