মঙ্গলবার সিবিআইয়ের তরফ থেকে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে একটি নোটিস পাঠানো হয়েছে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
২০১৪ সালে টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পাওয়া শিক্ষকদের সম্পর্কে সমস্ত তথ্য তলব করল সিবিআই। মঙ্গলবার সিবিআইয়ের তরফ থেকে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে একটি নোটিস পাঠানো হয়েছে। নোটিসটি পাঠিয়েছেন সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ সঞ্জয় কুমার সামল। নোটিসে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের সিরিয়াল নম্বর-সহ নাম, জন্মের শংসাপত্র, পিতার নাম, বর্তমান ঠিকানা, কোন স্কুলে তাঁরা কাজ করছেন এবং তাঁদের মোবাইল নম্বর দ্রুততার সঙ্গে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে জানাতে হবে।
নোটিসটি পাঠানো হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ৮ জুন কলকাতা হাই কোর্টের দেওয়া একটি নির্দেশের ভিত্তিতে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে এই তথ্য তলব করেছে সিবিআই। পাশাপাশি, ওই শিক্ষকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে যে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল, সেই বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপিও সিবিআইকে দিতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে পাঠানো সিবিআইয়ের সেই চিঠি।
ওই শিক্ষকদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জোগাড় করে সিবিআইয়ের কলকাতার নিজাম প্যালেসের অফিসের ১৪ তলায় জমা দিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার ওই নোটিসটি পাওয়ার পরই তৎপরতা শুরু হয়েছে পর্ষদের দফতরে। মঙ্গলবারই একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে পর্ষদের তরফে। বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে মূলত জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা কাউন্সিলের চেয়ারম্যানদের জন্য। পর্ষদের তরফে ডেপুটি সেক্রেটারি পার্থ কর্মকার বিজ্ঞপ্তিটি জারি করে সব জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কাউন্সিলের চেয়ারম্যানদের তথ্য জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য দিতে যাতে জেলা প্রাথমিক স্কুল কাউন্সিল কোনও বিলম্ব না করে, তা-ও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে যাতে এই তথ্য পাঠানো হয়, তা-ও বিজ্ঞপ্তির একটি অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক কাউন্সিলকে পাঠানো পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চিঠি।
সিবিআইয়ের তথ্য তলবের এই নোটিসকে ‘হাতিয়ার’ করে বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলি অভিযোগ করছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে বিস্তর দুর্নীতি হয়েছে। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মন্ডল বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের এমন পদক্ষেপ করা দেখে বোঝা যাচ্ছে, টেট বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের মারফত যে সমস্ত শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল, তার সবেতেই দুর্নীতি রয়েছে। আর শুধু ২০১৪ সালের টেট নয়, ২০১৭ সালের টেট পরীক্ষার ক্ষেত্রেও দুর্নীতি হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। এমনকি, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সালে যে টেট হয়েছিল, তাতেও নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তাই আমরা চাই এই সমস্ত নিয়োগ নিয়ে তদন্ত করে দুর্নীতির পর্দাফাঁস হোক।’’ যার জবাবে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি অশোক রুদ্র বলেছেন, ‘‘সিবিআই তদন্তের স্বার্থে যখন তথ্য তলব করেছে, তখন পর্ষদ নিশ্চয়ই সেই তথ্য দেবে। আমরা তেমনই মনে করি।’’ তবে পাশাপাশিই তৃণমূলের এই শিক্ষক-নেতা বলেছেন, ‘‘সিবিআইয়ের থেকে আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করব।’’