বাবুলের ছবি থাকায় জল সরবরাহ বন্ধ, রাজ্যেক কাছে হলফনামা চাইল হাই কোর্ট। নিজস্ব চিত্র
দু’টি ব্লকের আটটি গ্রাম। বসবাস ১০ হাজারের বেশি মানুষের। অথচ নেই কোনও পানীয় জলের ব্যবস্থা। হয় পুকুর বা ডোবার জল পান করতে হবে, না হলে জল আনতে যেতে হবে তিন কিলোমিটার দূরে! সাকুল্যে একটি পানীয় জলের ট্যাঙ্ক জল দিতে এলেও, এখন রাজনীতির চক্করে পড়ে সেটিও বন্ধ। এমনই অবস্থার মধ্যে রয়েছেন আসানসোলের সালানপুর ও বারাবনি কয়লাখনি এলাকার আদিবাসীরা। আর এই পুরো ঘটনা শুনে স্তম্ভিত কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের প্রশ্ন, ‘‘পানীয় জলের সঙ্গে রাজনীতি করা যায় না! কেন ওখানকার মানুষরা জলের অসুবিধায় রয়েছেন? পানীয় জল তো তাঁদের অধিকার। এটা থেকেও বঞ্চিত করবেন?’’ কীভাবে ওই মানুষদের জল দেওয়া হচ্ছে এবং কী পদক্ষেপ করা হয়েছে তা হলফনামা আকারে তা জানতে চাইল উচ্চ আদালত।
নন্দাই, খৈইরাবাদ, কেজিয়া, সামদি, বিল্লা, আমডিহ, বালিয়াপুর, আমতলা এবং বিজরি— আসানসোলের বারাবনি ও সালানপুর ব্লকের এই আটটি গ্রামে নেই কোনও জলের সংযোগ। জায়গাটি কয়লাখনি অঞ্চল হওয়ায় নেই কোনও টিউবওয়েল। ফলে পানীয় জল পেতে নাজেহাল অবস্থা এলাকার বাসিন্দাদের। বাধ্য হয়েই সামনের পুকুর বা ডোবার জল পান করেন তাঁরা। তাঁদের সেই সমস্যার কথা ভেবে ২০১৬ সালে ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড একটি পানীয় জলের ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা করে। প্রতি দিন সেই ট্যাঙ্ক এসে জল দিয়ে যেত। কিন্তু গত জুলাই থেকে সেটি বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
এমতাবস্থায় জল না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, ওই ট্যাঙ্কে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বতর্মান তৃণমূল নেতা বাবুল সুপ্রিয়র ছবি রয়েছে। সেই কারণে এখন সালানপুর ও বারাবনির বিডিও ওই ট্যাঙ্কের ছাড়পত্র দেননি। ফলে বন্ধ হয়ে যায় জল সরবরাহ ব্যবস্থা। জল নিয়ে এমন রাজনীতির কথা শুনেই অবাক হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। তবে শুনানিতে রাজ্যের পক্ষ থেকে বলা হয়, যখনই জল প্রয়োজন হয় তখনই দেওয়া হয়।
রাজ্যের এই বক্তব্য শুনে আদালতের পর্যবেক্ষণ, দৈনন্দিন জীবনে জল তো সব সময়ই প্রয়োজন। যখন প্রয়োজন মানে কী? এর পরই ডিভিশন বেঞ্চ হলফনামা দিয়ে রাজ্যের এর উত্তর চায়। এবং কীভাবে ওই বাসিন্দাদের কাছে জল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে তা-ও জানতে চাওয়া হয়। মামলাকারীদের আইনজীবী তিমিরবরণ সাহা বলেন, ‘‘জলের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ওই বাসিন্দারা। আবার তা নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। এটা সভ্য সমাজের কাছে প্রত্যাশিত নয়।’’