রবিবার বাবুঘাটে মাস্ক বিলি করছেন এক সাধু। নিজস্ব চিত্র।
সাধু সাবধান করছেন!
খালি গায়ে ভস্ম মাখা। মাথায় লাল ফেট্টি। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি দেখেই গামছা পরে নিলেন। ধ্রুপদী সাধুর ধারণার সঙ্গে সবটাই মিলে যাচ্ছে তো? তা হলে আরও একটু অগ্রসর হয়ে বলতে হবে, এই সাধুর হাতে ছিলিমের বদলে রয়েছে মাস্কের প্যাকেট। নিজে নিষ্ঠা ভরে মাস্ক পরে রয়েছেন। অন্যদেরও মাস্ক পরার জন্য অনুরোধ করছেন। তাঁর হাত থেকে মাস্ক নিচ্ছেন তাঁর দলের অন্য নাগাসন্ন্যাসী। যে সব সাধুরা মাস্ক পরছেন না তাঁদের কাছে গিয়ে মাস্ক দিচ্ছেন। বলছেন, ‘‘এখন মাস্ক পরা জরুরি। মাস্কটা পরুন। না হলে বিপদ!’’
বলা হয় বিশ্বাস ও ভক্তির মেলবন্ধন গঙ্গাসাগর মেলা। আর সেই কারণেই হয়তো সাধু, সন্ত, সন্ন্যাসী বা সাধারণ মানুষ ভিড় করেন গঙ্গাসাগরে। কিন্তু এই কোভিড পরিবেশে মেলা হলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। তার উপর প্রশ্ন ওঠে, কতটা সচেতন পুণ্যার্থীরা? পুরোপুরি না হলেও আশাজনক উত্তর পাওয়া গেল বাবুঘাট চত্বরে। সেখানে মাস্ক বিলি করতে দেখা গেল ওই নাগা সাধুকে।
গঞ্জিকা সেবন করছেন এক নাগাসাধু। নিজস্ব চিত্র।
আগামী ১৪ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তি। ওই দিন গঙ্গাসাগরে ডুব দেওয়ার জন্য এখন থেকেই যাত্রা শুরু করেছেন পুণ্যার্থীরা। প্রতি বছরের মতো এ বছরও পুণ্যার্থীদের ভিড় উপচে পড়েছে বাবুঘাট এলাকায়। অস্থায়ী তাঁবু করে রয়েছেন তাঁরা। কিন্তু কোভিডকালে কি মানা হচ্ছে বিধি? সেই ছবিই ঘুরে দেখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। দেখা যায়, সেখানে সারি সারি তাঁবু টাঙিয়ে বসে রয়েছেন সাধুরা। তাঁদের মধ্যে অনেকে আবার নাগা সন্ন্যাসী। অর্থাৎ শুধু ভস্ম মেখে বসে রয়েছেন। নগ্ন শরীর। কিন্তু মুখে মাস্ক। কেন মাস্ক পরছেন? উত্তরে বললেন, ‘‘করোনার জন্য। নিজেও পরছি। অন্যদেরও পরতে বলছি।’’ তা হলে ভিড়ের গঙ্গাসাগর যাচ্ছেন কেন? উত্তর, ‘‘প্রভুর টানে পুণ্যস্নান করতে। সারা বছরের অন্যায় ধুয়ে ফেলতে হবে যে।’’
থুতনির নীচে মাস্ক দুই সাধুর। নিজস্ব চিত্র।
এই অতিমারি পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। অবশেষে শর্তসাপেক্ষে মেলার অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। ওই মামলার শুনানিতে এক আইনজীবী বলেছিলেন, সাধুরা তো জামাকাপড়ে বিশ্বাস করেন না! তাঁরা কি মাস্ক পরবেন? তাঁদের কি বাধ্য করা যাবে? সংশয় দূর করে দিলেন ওই নাগা সাধু।
সাধুই সাবধান করছেন!