বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘‘শিক্ষক শব্দের দু'টি মানে হয়। এক, যিনি ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করেন তিনি এক জন শিক্ষক। আর দুই, খাতায় কলমে শিক্ষক! অর্থাৎ নামেই শিক্ষক, শিক্ষাদানের কাজে তিনি নিযুক্ত নন। এই শিক্ষিকার ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টি প্রযোজ্য।’’
কলকাতা হাই কোর্ট। ফাইল চিত্র।
স্কুলে নেই কোনও পড়ুয়া। এত দিন ধরে এক জন মাত্র শিক্ষিকা স্কুল আগলে পড়ে রয়েছেন। এখন তিনিও ওই স্কুল ছেড়ে অন্যত্র বদলি হতে চান। উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের একটি স্কুলকে এ বার বাঁচাতে উদ্যোগী হল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, ওই স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ করে অবিলম্বে ছাত্র ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে শিক্ষা দফতরকে। চার সপ্তাহের মধ্যে তারা বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
২০০৯ সালে স্থাপিত হয় মাধবকাটি রমাপুর জুনিয়র হাই স্কুল। সেখানে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। তিন বছর যাবৎ চারটি শ্রেণির সব ক্লাস একাই নিচ্ছেন ইতিহাসের শিক্ষিকা সুস্মিতা মিত্র। কিন্তু অভিযোগ, ওই স্কুলে অনেক সুযোগ সুবিধা না থাকার কারণে দিন দিন পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে থাকে। এ বছর তা শূন্যে গিয়ে দাঁড়ায়। এই অবস্থায় ওই স্কুল থেকে বদলি হতে চান শিক্ষিকা সুস্মিতা। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁকে অনুমতি না দেওয়ায় (এনওসি) তিনি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। শুক্রবার উচ্চ আদালত ওই শিক্ষিকাকে অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘‘শিক্ষক শব্দের দু'টি মানে হয়। এক, যিনি ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করেন তিনি এক জন শিক্ষক। আর দুই, খাতায় কলমে শিক্ষক! অর্থাৎ নামেই শিক্ষক, শিক্ষাদানের কাজে তিনি নিযুক্ত নন। এই শিক্ষিকার ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টি প্রযোজ্য।’’ বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, যে হেতু ওই স্কুলে কোনও শিক্ষক নেই, তাই এই শিক্ষিকাকে সেখানে আটকে রাখার প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া ২২৪ কিলোমিটার যাতায়াত করে তো এক জনের পক্ষে চারটি শ্রেণির ক্লাস নেওয়া সম্ভব নয়। তাই সুস্মিতাকে অন্য স্কুলে বদলি করা হোক। যদিও বদলির পিছনে অনেক ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন তিনি।
মামলাকারীর আইনজীবী অঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, মাধবকাটি জুনিয়র হাই স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা কম। তার উপর মিড-ডে মিলের কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে পড়ুয়ারা সেখানে আসতে চায় না। স্কুল পরিদর্শকের কাছে আদালতের প্রশ্ন, ওই স্কুলকে বাঁচাতে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে? স্কুল সাব-ইন্সপেক্টর জানান, আমরা শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। কিন্তু আশপাশের কেউ আগ্রহ দেখাননি। শিক্ষকের অভাবেই স্কুল ধুঁকছে। এখন পড়ুয়া না থাকলেও, ২০২৩ সালে সেখানে ১৪ জন পড়ুয়াকে ভর্তি করানো হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। তাতে সন্তুষ্ট হয়নি আদালত। আদালতের নির্দেশ, শিক্ষা দফতর ওই স্কুলকে ফের পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করবে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, এক মাসের মধ্যে তা রিপোর্ট দিয়ে জানাবে তারা। আগামী ২৩ জুন এই মামলার শুনানি।
অন্য দিকে, স্কুল শিক্ষকদের বেশ কয়েকটি বদলির মামলায় পর পর রায় দিচ্ছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। হাসনাবাদের নেতাজি বিদ্যাপীঠের এক শিক্ষক বদলি চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। ওই মামলায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতিকে তলব করেছে আদালত। নির্দেশ, পরবর্তী শুনানিতে তাঁদের হাজির হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত করবেন উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার।